সারাদেশে জামায়াতের তাণ্ডবঃ নিহত ৪, পুলিশ সাংবাদিকসহ আহত শতাধিক
জাহিদ হোসেন,শহীদুল ইসলাম,রুপম হালদার,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ রাজধানীসহ সারাদেশে ইসলামপন্থী দলগুলোর কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গাইবান্ধায় দুইজন, সিলেটে একজন ও ঝিনাইদহে মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুস সালাম। সংঘর্ষে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ও ঝিনাইদহে ১৫ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। সিলেট, রাজশাহী ও বগুড়ায় গণজাগরণ মঞ্চ ভাংচুর করেছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। জুমার নামাজ শেষে ইসলামপন্থী দলগুলোর কয়েক হাজার নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের দিকে যাওয়ার পথে পুরান পল্টনে একের পর এক ফাঁকা গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ব্যাপক ফাঁকা গুলি, টিয়ার শেল এবং রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর পরপরই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ইসলামী দলগুলোর সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ইসলামী দলগুলোর কর্মীরা শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায় এবং পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ও টিয়ার শেল এবং রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এর আগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে ইসলামী দলগুলোর কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ইসলামী দলগুলোর কর্মীদের হামলায় ২ সাংবাদিক আহত হন। তারা হলো-মাছরাঙ্গা টিভির স্টাফ রিপোর্টার আব্দুল্লাহ তুহিন এবং এটিএন নিউজের ক্যামেরাম্যান এস এম তুহিন। তাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, জুমার নামাজের পর চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা এলাকায় কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসলামী দলগুলোর কর্মীরা। রাজশাহীর সাহেব বাজার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সিলেটেও ইসলামী দলের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এছাড়া সাভার, গাজীপুর, বগুড়া, ফেনী, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও গণজাগরণ মঞ্চে হামলার খবর পাওয়া গেছে। ঝিনাইদহে জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর সহিংসতার মধ্যে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আব্দুস সালাম নামে (৪০) এক মাদ্রাসা শিক্ষক নিহত হয়েছে। এসময় তিনজন সাংবাদিককে মারধর করা হয়। শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে শহরের হাটের রাস্তায় জামায়াত-শিবিরসহ সমমনা ইসলামী দলগুলো মিছিল বের করে। সহিংসতার আশঙ্কায় পুলিশ এতে বাধা দেয়। এরপরও তারা মিছিল চালিয়ে গেলে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন সালাম। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। নিহত সালাম ঝিনাইদহ সিদ্দিকীয়া আলিয়া মাদ্রাসার আরবী বিভাগের প্রভাষক। জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর লোকজন তিনজন সাংবাদিককে মারধর ও তাদের ক্যামেরা ভাঙচুর করে। তারা হলেন দিগন্ত টিভির আলাউদ্দীন আজাদ, দৈনিক জনতার আজিজুর রহমান সালাম ও বার্তা সংস্থা এনএনবির এমএ কবীর। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঝিনাইহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, ‘শুক্রবার বাদ জুমা ইসলামী সমমনা ১২ দলের সমর্থকরা একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের শেরেবাংলা সড়ক হয়ে পায়রা চত্বরের দিকে আসার চেষ্টা করে।’ এ সময় হাটের রাস্তা এলাকায় মিছিলে পুলিশের সহায়তায় সরকার সমর্থকরা হামলা চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আব্দুস সালামকে পিটিয়ে গুরুতরভাবে জখম করা হয়। পরে তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় সরকার সমর্থকদের হামলায় দৈনিক জনতার সাংবাদিক আব্দুস সালামসহ কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়। সালামকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলাকারীরা দৈনিক নয়া দিগন্ত ও দিগন্ত টিভির সাংবাদিক আলাউদ্দীন আজাদ ও সাংবাদিক আলমগীর কবিরের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লায় ইসলামী সমমনা দলগুলোর সমাবেশ থেকে হামলা চালালে পাঁচ সাংবাদিক আহত হন। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। এ সময় আন্দরকিল্লাসহ এর আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে। সেখানে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জুমার নামাজ শেষে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় সাহেব বাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। জিরো পয়েন্ট থেকে গণকপাড়া পর্যন্ত এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জুমার নামাজের পর নগরীর বিভিন্ন মসজিদ থেকে ইসলামী দলগুলোর কর্মীরা সাহেব বাজার বড় মসজিদের দিকে আসতে থাকে। দুপুর পৌনে ২টার দিকে তারা জমায়েত হয়ে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এগুতে থাকলে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এদিকে নগরীর লক্ষ্মীপুর, আলুপট্টি, কুমারপাড়া ও কোর্ট এলাকায়ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সিলেট প্রতিনিধি জানান, জুমার নামাজ শেষে সিলেটের জিন্দাবাজারে ইসলামী দলগুলোর কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শতাধিক টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি বর্ষণ করেছে। এ সময় পুলিশের গুলিতে এক মিছিলকারী নিহত হন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে মিছিলকারীরা একটি ব্যাংক ও পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।সংঘর্ষের পর জিন্দাবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৩০ জনকে আটক করে। পুলিশের গুলিতে শিক্ষক, সাংবাদিকসহ ২০ জন আহত হন। এছাড়া সিলেটে গণজাগরণ মঞ্চে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেয়া হয়। এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।