যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তরান্বিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের আহ্বান জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে দেশবাসীর গণদাবির প্রতি সম্মান জানাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্তদের প্রতি নিন্দা জানানোরও আহ্বান জানানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ আহ্বান জানান। বিদেশি মিশন প্রধান ও প্রতিনিধিদের জামায়াত-শিবির ও তাদের সহযোগীদের সংঘাত ও নৃশংসতা বিষয়ে ব্রিফিং প্রদানকালে এ আহ্বান জানানো হয়। অনুষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনা মোতায়েনসহ প্রয়োজনীয় সব কিছু করা হবে বলেও কূটনীতিকদের জানানো হয়।
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কূটনৈতিক মিশনগুলোর প্রতিনিধিদের সামনে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। পরে ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবির এবং তাদের দোসর ও সমর্থকদের মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানানোরও আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ব্রিফিংয়ে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রদূতদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনের ১০ মাস বাকি। এ সময়ে যে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, তা এ দেশ কীভাবে সামাল দেবে? সামনের দিনগুলোতে ১০টি রায় এবং ১৩টি আপিল আসছে। যদি এ রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন প্রত্যাখাত হয়, পরিস্থিতি আরও সঙ্কটাময় হয়ে উঠবে। সম্পূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের চরম উদ্বেগ রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ব্রিফিংয়ে অংশগ্রহণকারীরা জানতে চেয়েছিলেন যে প্রয়োজনে সেনা মোতায়েন করা হবে কিনা। জবাবে প্রয়োজনে সেনা মোতায়েনের কথা বলেছেন দীপু মনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ সময় কূটনীতিকরা বলেছেন, সংবিধান সম্মত উপায়গুলোই সমস্যা সমাধানের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর থেকে জামায়াত-শিবির যেভাবে সহিংসতা ঘটিয়ে যাচ্ছে তাতে প্রাণহানি, হরতাল ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিদেশি মিশনগুলোতে এ পরিস্থিতি জানানোর জন্য এ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হচ্ছে তাদের অপরাধ ও পরিচয় বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।’ বিদেশি মিশনগুলোর কাছে কোনো আহ্বান জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কূটনীতিকদের বর্তমান পরিস্থিতি ব্রিফ করার পাশাপাশি এ দেশে মানবতাবিরোধী চলমান বিচার সম্পর্কে যাতে সম্যক ধারণা থাকে সেজন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’ দীপু মনি বলেন, ‘সরকার কী ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে তাও কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। বিচারহীনতা ও অপরাধের দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসানের লক্ষ্যে এ বিচারের গুরুত্ব, শাহবাগে গণজাগরণকে যেন তারা গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন সেজন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।’
ব্রিফিংয়ে কূটনীতিকরা কোনো প্রশ্ন করেছেন কিনা জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, ‘তাদের দিক থেকে তিনটি প্রশ্ন এসেছে। প্রথমটি ছিল জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবির ব্যাপারে সরকারের মনোভাব কী? এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার এ দাবি বিবেচনায় নিচ্ছে।’ প্রশ্নটি ছিল, পরিস্থিতির প্রয়োজনে সেনা মোতায়েন করা হবে কিনা? এর উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে তেমনটি প্রয়োজন হবে না। তবে নির্বাচিত সরকার হিসেবে জনগণের জানমাল রক্ষায় যা যা ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন সরকার তা-ই করবে।’ তিনি বলেন, কূটনীতিকরা জামায়াত-শিবিরের পেছনে বড় অংকের অর্থায়ন রয়েছে বলে ধারণা করছেন। সরকার এ বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে কিনা তারা তা জানতে চেয়েছেন। উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার অর্থায়নের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে খতিয়ে দেখছে।’ জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করতে কূটনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তাদের কাছে এমন আহ্বান জানাইনি। তবে তাদের যে কর্মকাণ্ড তা তো কূটনীতিকরাও দেখছেন। এ সংঘাত তো কারোরই নজর এড়ানোর কথা নয়। তাদের কর্মকাণ্ড কিন্তু আমাদের আবার সেই একাত্তরের কথা মনে করিয়ে দেয়।’
ব্রিফিং শেষে সাম্প্রতিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও সংঘাতের নিন্দা জানান ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন।