গরমের শুরুতেই তীব্র লোডশেডিং ॥ লোডশেডিং কমাতে ৪ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে পিডিবি
কাজী মাহফুজুর রহমান শুভ,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ ঢাকাসহ সারা দেশে দফায় দফায় লোডশেডিং শুরু হয়েছে। বিশেষ করে দিনের বেলায়, এলাকাভেদে চার থেকে পাঁচবার লোডশেডিং হচ্ছে। গরমের শুরুতেই দিনে কয়েক বার লোডশেডিং- তা-ও কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ ছাড়া থাকা অসহনীয় হয়ে উঠেছে মানুষ। গ্রাম-শহরের অবস্থা প্রায় একই। গত কয়েক দিন ধরে এর প্রকোপটা যেন আরও বেড়ে গেছে। হঠাৎ করে লোডশেডিং বাড়ার পেছনে কম উৎপাদনকে দায়ী করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। গরম না আসতেই লোডশেডিং বাড়ায় সাধারণ গ্রাহকদের সামনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সামনে পরিস্থিতি তাহলে কি হবে? বোরো মৌসুমের শুরুতেই ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। কৃষকেরা বলেন, মৌসুমের শুরুতেই শুরু হয়েছে ঘন ঘন লোডশেডিং। এতে তাঁরা সময়মতো সেচ দিতে পারবেন কি না, এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন। সেচ পাম্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে শহরে সরবরাহ কমানোয় সেখানে দিন রাত মিলিয়ে কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। অঞ্চল ভেদে এক থেকে দুই ঘণ্টাও লোডশেডিং হচ্ছে। গ্রামে সেচ পাম্পেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না।
পিডিবি সূত্র জানায়, তাদের হিসাবে বর্তমানে প্রতিদিন বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট। দৈনিক সর্বোচ্চ উৎপাদন (রাতের বেলা) করা হচ্ছে সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াটের মতো। এক হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি থাকলে তা দুবার লোডশেড করে পূরণ করা যায় না। ‘ডিমান্ড সাইড ম্যানেজমেন্ট’-এর নামে প্রতিদিন সর্বোচ্চ চাহিদার সময় শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে যে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেড করা হচ্ছে, তা ঐ হিসাবের বাইরে রাখা হয়েছে। এ দিকে বোরো আবাদের ভরা মওসুমে তীব্র লোডশেডিং কমাতে সরকারের কাছে জরুরী ভিত্তিতে চার হাজার কোটি টাকা চেয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। গত অক্টোবর থেকে সরকারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ খাতে কোন ভর্তুকির কোনও টাকা পায়নি পিডিবি। তাই অর্থাভাবে ঠিকমত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পিডিবি কর্মকর্তারা। কুইক এবং পিকিং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে দৈনিক দুই হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। কিন্তু এজন্য প্রতিদিন ৪০ কোটি টাকার জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হয়। এ তেল কিনতে গেলেই লোকসানে পড়তে হয় পিডিবিকে। তাই গত চার মাস ধরে এক থেকে দুই ঘন্টা লোডশেডিং করে অর্থের সাশ্রয় করেছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেসরকারি খাতে চুক্তির তিন বছরেও বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসেনি। তাই কুইক রেন্টালের মাশুল গুণতে হচ্ছে সবাইকে। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর ও কুইক রেন্টালের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে খরচ হচ্ছে ছয় টাকা, অন্যদিকে পিডিবি তা বিক্রি করছে পাঁচ টাকায়। তাই ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে বলে জানান কর্মকর্তারা। রামপুরা উলন এলাকার বাসিন্দারা জানান, দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত ঐ এলাকায় কয়েক দফা লোডশেডিং হয়। হঠাৎ করে এর মাত্রা বেড়ে গেছে।এমন অভিযোগ মিরপুর, কল্যাণপুর, ধানমন্ডি, মহাখালী, মগবাজার, শান্তিনগর, মতিঝিল, বাড্ডা, উত্তরা, গুলশান, বনানীর বাসিন্দারাও জানিয়েছে তীব্র লোডশেডিংয়ের কথা। এসব এলাকায় এখন নিয়মিত লোডশেডিং হচ্ছে। পিডিবি’র হিসাবে দেশের বিভিন্ন জোনে এখন গড়ে মোট চাহিদার ১১ থেকে ১৫ ভাগ লোডশেডিং হচ্ছে। তবে প্রকৃত হিসাবে এই মাত্রা আরও বেশি। পিডিবি’র তথ্য অনুযায়ী এখন দিনে ৬৫০-৭৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। চাহিদা দেখানো হচ্ছে ৫৫০০ মেগাওয়াট। বছরে চাহিদা ১০ ভাগ হারে বাড়লেও এবার গ্রীষ্ম মওসুমে বিদ্যুৎ চাহিদা ৭০০০ মেগাওয়াটের বেশি হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিতরণ সংস্থাগুলোর কাছে যে পরিমাণে সংযোগের আবেদন জমা আছে তার সিকি ভাগ সংযোগ দেয়া হলেও চাহিদার পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। এমন অবস্থায় রেন্টাল, কুইক রেন্টাল এর কারণে দাম বাড়ার ফাঁদে পড়া গ্রাহকদের কাছে লোডশেডিং যন্ত্রণাও বড় হয়ে দেখা দেবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিগত তিন বছরে অন্তত তিন হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত ৫২০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে। আর গড় উৎপাদন এখনও ৪৫০০ মেগাওয়াটের মধ্যেই ওঠানামা করছে। গত বছরের শেষ দিকেও সর্বোচ্চ উৎপাদন প্রায় ৫২০০ মেগাওয়াট ছিল। আর ২০১০ সালে সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ৪৬৮৬ মেগাওয়াট।