ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট ও রেইন ফোরামের যৌথ মতবিনিময়ঃ পানি সংকট নিরসনে বৃষ্টির পানি ব্যবহার জরুরী
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ পানি সংকট মোবাবেলা, জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি অপচয় রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন জরুরী। বর্তমানে ঢাকা শহরে প্রতিবছর ৩মিটার পানির স্থর নেমে যাচ্ছে। ফলে শুস্ক মৌসুমে ঢাকা ওয়াসা প্রয়োজনমতো পানি সরবরাহ করতে পারছে না। শহরের ইট-কনক্রিটের কারণে ভূ-গর্ভে পানি রিচার্জ হচ্ছে না। এছাড়া নগরের পানির উৎস নদী, খাল, পুকুর ও জলাশয় ভরাট করে অবকাঠামো নির্মানের ফলে বৃষ্টির পানি সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। ২৮ মার্চ বিকাল ৪ টায় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সভাকক্ষে রেইন ফোরাম ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট আয়োজিত “পানির সংকট মোকাবেলায় বৃষ্টির পানি ব্যবহারের গুরুত্ব” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এই দাবি জানান। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক এডভোকেট সৈয়দ মাহাবুবুল আলম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রেইন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আর্কিটেক্ট আশরাফুল আলম রতন। আলোচনা করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দেষালন (বাপা) এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব মিহির বিশ্বাস, সম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক ও নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা। সভা সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম সুজন। প্রবন্ধে রেইন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি আশরাফুল আলম রতন বলেন, ঢাকা শহরে দিনদিন পানি সংকট বেড়ে চলেছে। এ থেকে পরিত্রানের জন্য বৃষ্টির পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমাদের অগ্যতার কারণে প্রতিবছর আমরা বৃষ্টির পানি অপচয় করছি। বৃষ্টির পানি সুপেয় পানি কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনে ব্যবহারযোগ্য পানি হিসাবে ব্যবহার করা গেলে দেশের পানি সংকট অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে। বৃষ্টির পানি রিচার্জ করা গেলে যেমন জলাবদ্ধতা কমবে, তেমনি ভূগর্ভে প্রতিবছর যে পানির স্তর দ্রত কমছে তার হার কমে আসবে।
আশরাফুল আলম রতন তার প্রবন্ধে আরও বলেন, পানির চাহিদা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। পানি ঘাটতি (চাহিদার বিপরীতে যোগানের স্বল্পতা), পানি দূষণ (পানির আধার; নদী-নালা, খাল-বিলের পানি মারাত্মক দূষণের শিকার), ক্রমান্বয়ে পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়া (প্রতিবছর ৩ মিটার করে নীচে নামছে), নদী শুকিয়ে যাওয়া (বিভিন্ন কারণে নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে), আর্সেনিক ইত্যাদি আমাদের প্রধান সমস্যা। এসব সমস্যা মোকাবেলায় বৃষ্টির পানির সর্বোচ্চ ব্যবহারের বিকল্প নাই।
আবদুস সোবহান বলেন, পানির যে সঙ্কট ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে সে সঙ্কট মোকাবেলায় নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুরসহ বিদ্যমান জলাশয়ের পানি ব্যবহারে অধিক মনোযোগী হতে হবে। কিন্তু তার আগে এসব জলাশয়গুলোতে শিল্প বর্জ্যরে পাশাপাশি মানুষের পয়বর্জ্য ফেলা এখনই বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি অন্যান্য দূষণ ও দখল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, জলাশয়কে সামনে রেখে স্থাপনা নির্মাণ করা হলে সে জলাশয় দূষণ বা দখল হবে না। কিন্তু যখনই জলাশয়কে পেছনে ফেলে স্থাপনা নির্মাণ করা হয় তখনই দূষণ ও ভরাট হয়ে যায়। বুড়িগঙ্গা নদীকে সামনে রেখে যখন নদীতীরে ঢাকা গড়ে উঠে তখন বুড়িগঙ্গা দূষণ বা দখলের শিকার হয়নি। কিন্তু যখন ঢাকা সম্প্রসারণ ঘটতে থাকল, তখন বুড়িগঙ্গা নদী পিছনে পড়ে গেল। তখন থেকেই দূষণ ও দখল সমানভাবে শুরু হয়।
মিহির বিশ্বাস বলেন, আমাদের চোখের সামনে বুড়িগঙ্গা নদী দূষণ ও দখল হয়ে যেতে দেখলাম। যখন এ নদী দূষিত হচ্ছিল আমরা তখন থেকেই চিৎকার করে যাচ্ছিলাম। কিšন্তু প্রশাসন তখন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এখন বলা হচ্ছে এ নদীর পানি ব্যবহার উপযোগী নয়। অথচ বুড়িগঙঙ্গার পানি যদি আমরা ব্যবহার উপযোগী রাখতে পারতাম তবে বিপুল টাকা খরচ করে মেঘনা নদী থেকে ঢাকার মানুষের জন্য পানি আনতে হত না। এখনও যদি আমরা বুড়িগঙ্গা নদীর পানি পরিশোধন করি তবে আগামীতে এ পানি ব্যবহার করা সম্ভব।
সভায় বিসিএইচআরডি’র পরিচালক মো. মাহবুল হক, পরিবেশবিষয়ক অনলাইন সংস্থা ইএনবি নিউজ এর ব্যবস্থাপক তুষার চন্দন, ইকোভিলেজ হাউজিং এর প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, রেইন ফোরাম এর সদস্য আয়ীদা রাইসা হোসাইন, আনিতা তাবাসসুম, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী, প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানসহ স্থানীয় সহ সরকারী-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।