নওগাঁয় কালবৈশাখী ঝড়ঃ ৬০টি গ্রাম লন্ডভন্ড,সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর ফসল নষ্ট
আব্বাস আলী,নওগাঁ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ শনিবার বিকেলে বয়ে যাওয়া ঝড় ও শিলাবৃষ্টির ফলে নওগাঁ জেলার পত্মীতলা ও ধামইরহাট উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৬০টি গ্রামের বাড়িঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকার প্রায় ৪’শ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বহু দোকানপাট এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঘরের চালা উড়ে গেছে। হাজার হাজার গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ঝড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে ও তার ছিঁড়ে পড়ায় ঐ এলাকার মানুষ রয়েছেন অন্ধকারে। অনেকেই রয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। বাড়িঘর ও ফসল হারিয়ে উপদ্রুত এলাকার মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। শনিবার বিকাল ৫টা থেকে পত্মীতলা উপজেলার পত্মীতলা, নজিপুর, পাটিচরা, মাটিন্দর ও ঘোষনগর ইউনিয়ন এবং ধামইরহাট উপজেলার আড়ানগর, জাহানপুর ও ইসবপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রচন্ড বেগে ৮ মিনিট স্থায়ী এই কালবৈশাখী ঝড়ে সব লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
সরজমিনে দেখা গেছে, কালবৈশাখীর আঘাতে গ্রামের অনেক বসতবাড়ী মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। যত্রতত্র পড়ে আছে গাছপালা ও অনেক স্থানে বিদ্যুতের খুটি। গ্রামের সংযোগ সড়ক গুলোতে গাছ আছড়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সারারাত বন্ধ থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোতে চলছে কান্নার রোল। পত্মীতলার পাটিচাড়া গ্রামের সবুর জানান, কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বাড়ীঘরের টিনের চাল, বেড়া ও গাছপালাসহ আসবাবপত্র আকাশে পাখির মত উড়তে থাকে। এ সময় দাঁড়িয়ে থাকা একটি কাভার ভ্যান ঝড়ে উল্টে যায়। স্থানীয় ভাবে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামগুলি সহায়তা এগিয়ে এসেছেন। তারা উদ্ধার তৎপরতার অংশ নেয়ার পাশাপাশি নিজেদের সাধ্যানুযায়ি খাবার ও পোশাকসহ ওষূধ সরবরাহ করছেন। পত্মীতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ধামইরহাট উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হায়াৎ মোঃ রফিক জানিয়েছেন উপদ্রুত এলাকায় প্রায় ৫ শতাধিক কাঁচা এবং আধাকাঁচা বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। পত্মীতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান ও ধামইরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মোঃ জামাল উদ্দিন জানিয়েছেন উপদ্রুত ৮ ইউনিয়নে ৪ হাজার হেক্টর বোরো ধান সম্পূর্ন ভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। রবি মওসুমের অন্যান্য ফসলের মধ্যে ৩০ হেক্টর তরমুজ, ৫০ হেক্টর কলা, ৬০ হেক্টর গম, ১০ হেক্টর ভুট্টা, ২শ হেক্টর আম এবং ৬০ হেক্টর সব্জি বিনষ্ট হয়েছে। ঝড়ে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়াল ধ্বসে মামুনুর রশিদ (৫৫) নামে এক শিক্ষক ও হিমু নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মৃত ব্যক্তিদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের পরিবারকে ৫ হাজার করে টাকা প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়াও উপদ্রুত এলাকায় আক্রান্তদের পরিবার প্রতি ৩০ কেজি করে চাল বিতরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে পত্মীতলা-ধামুইরহাট এলাকার সংসদ সদস্য মোঃ শহীদুজ্জামান সরকার, জেলা প্রশাসক মোঃ এনামুল হক, পুলিশ সুপার মোঃ কাইয়ুমুজ্জামন খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। প্রশাসনের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িঘর ও ফসলের তালিকা তৈরীর কাজ অব্যাহত রয়েছে।