বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসঃ সকলের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হোক
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ জাতিসংঘের ২৬টি সদস্য দেশ কর্তৃক গঠনতন্ত্র অনুমোদনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই জন্মদিন অর্থাৎ গঠনতন্ত্র অনুমোদন ও কার্যকর দিবস স্মরণে ১৯৫০ সাল হতে প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়। জনস্বাস্থ্য রক্ষা বিষয়ক একটি প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর দেশে ও জনগণের অবহতি, সচেতনতা ও উদ্ধুদ্ধকরণে দিবসটি পালণের লক্ষ্য ও উদ্ধেশ্য। সংস্থার সকল রাষ্ট্রের সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হু এর কাজ যতো বেশি সম্ভব সকল জনগণের স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করা। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় নির্দেশনা সমন্বয় ও সহায়তার কাজেই হু জন্মলগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে। হু এর কর্মতৎপরতার ধারাবাহিকতায় ১৯৭৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সমাবেশে হু ২০০০ সালের মধ্যে সকলের জন্য সুস্বাস্থ্য ঘোষণা দিয়েছিল। এই স্ট্রাটিজির ভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি। মূলত ৮টি প্রয়োজনীয় বিষয় এর সংগে সংশ্লিষ্ট। এগুলো হচ্ছে; স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষাদান, যথাযথ খাদ্য সরবরাহ এবং পুষ্টি, জল ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিরাপদ রাখা, পরিবার পরিকল্পনা সহ মা ও শিশু স্বাস্থ্য, বড় ধরণের সংক্রামক রোগ থেকে বিমুক্তি, স্থানীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ, সাধারণ কোন আঘাতের যথাযথ চিকিৎসা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ হাতের কাছে রাখা। হু এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে সকল দেশে অবকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য সাহায্য করছে। বর্তমানে প্রায় ১৭৩ টি দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য। এদের সদর দপ্তর হচ্ছে জেনেভায়। সংস্থাটি ইউরোপ, প্যান প্যাসিফিক, আফ্রিকা, আমেরিকাস, ইর্স্টান মেডিটারিয়ানস ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ছয়টি আঞ্চলিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের ১৯ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য পদ লাভ করে। একই বছর জুন মাসে নয়া দিল্লীতে সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কার্যালয়ে বাংলাদেশ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এক ব্যপক কর্মমূচির সূচনা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নের লক্ষে সহায়তা প্রদান করছে। এগুলো হলো; সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং কমিউনিটি স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ের নিরসন, স্বাস্থ্য নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত এস আই ব্যবস্থা জোরদার করা, স্থিতিশীল উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য পরিবেশ তৈরী করা।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ এবং গোত্র নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল মানুষ যাতে করে শারিরীক ও মানষিক দিক থেকে পূর্ণ কর্মক্ষম জীবন যাপন করতে পারে সেই লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জনগণের রোগমুক্ত জীবন যাপনে সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। ২০০০ সাল নাগাদ সবার জন্য স্বাস্থ্য অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৭৮সালে প্রণীত ‘আলমা আটা’ ঘোষণা সকল দেশে বাস্তবায়নের চেষ্টা চালানো হয়েছিল। পুষ্টিহীনতা, ডাইরিয়া, যক্ষা, কুষ্ঠ, ম্যালেরিয়া, ধূমপান, মাদকাসক্তি, ক্যান্সার ও এইডস প্রতিরোধে হু কার্যক্রম গ্রহণ করেছে বিশ্বব্যাপি। বিভিন্ন সংক্রামক রোগের রিরুদ্ধে টিকাদানের ব্যবস্থা, নিরাপদ পানি সরবরাহ, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং পরিবেশ দূষণ রোধ করার জন্য দিচ্ছে প্রয়োজনীয় কারিগরী ও বৈষয়িক সাহায্য। সেই সাথে জৈব্য রাসায়নিক কীটনাশক ও ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ, রোগের বিস্তার ও মৃত্যুর কারণ নিরুপণ সহ স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান সংগ্রহ এবং প্রচারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো সৃষ্টি, স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রমের সম্প্রসারণ আধুনিকায়ন এবং ফলপ্রসু বাস্তবায়নের জন্য হু সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন করছে। স্বান্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, কলাকৌশলী, নার্স ও অন্যান্য পেশাজীবিদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে হু’র সহযোগিতা এবং সাহায্য প্রশংসনীয়। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সমস্যা অনেক ব্যাপক এবং তার সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব সুদূর প্রসারী। বিদ্যমান স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলা করে জন স্বাস্থ্যের উন্নয়ন সাধনে স্বান্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। বলা বাহুল্য এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটি নানান দুর্নীতির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে অনেকাংশেই তাদের লক্ষ্য মাত্রায় অদ্যাবদি পৌছাতে পারেনি। রোগমুক্ত সুস্থ জীবন-যাপন প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এই অধিকার ভোগে সহায়তা করা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাংবিধানিক অঙ্গীকার। সেই লক্ষ্যে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যেই উল্লেখ যোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। একই প্রয়াসে একটি সার্বজনীন স্বাস্থ্য সমস্যার প্রতি আলোকপাত করে তা সমাধানে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টি করা বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপনের মূল উপাত্ত। এক একটি দিবস মানেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক একটি বিষয়ে এক একটি সাফল্য।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।।