এ বড়ো লজ্জার সময়!
সৈকত রুশদীঃ
একটি মানুষের মৃত্যুও দু:খজনক। সেই ব্যক্তি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত-এ-ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট অথবা গণজাগরণ মঞ্চ যে সংগঠনেরই হোক না কেন । আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে পুলিশের রাজনৈতিক ব্যবহারের পরিণতি সেই বাংলাদেশ পুলিশ নামের ফ্রান্কেনস্টাইন-এর গুলিতে আওয়ামী লীগ কর্মী শহীদের মৃত্যু । সবচেয়ে বড়ো কথা সে একজনের সন্তান, কারও ভাই, একজনের স্বামী আর দুটি শিশুর পিতা । যে অকালে, এধরনের (অ)মানুষের সৃষ্ট দুর্বিপাকে হারিয়েছে তার প্রিয়জন, কেবল সেইই বুঝতে পারবে নিহত শহীদের প্রিয়জনদের বেদনা । আকুতি। শহীদের এই মৃত্যু কী তার প্রিয়জনদের কাম্য ছিল ? কেন এই রক্তপাত ?
দু:খজনক ! এই পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী রাজনীতিকরা । যেমনটি তারা করেছিলেন ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে । মানুষের সৃষ্ট দুর্বিপাকে যাঁরা প্রিয়জন হারিয়েছেন, সেই দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রীর কাছে তো বাংলাদেশের মানুষ এমন রাজনীতি আশা করে যেখানে আর কোন মানুষ অকালে, মানুষের সৃষ্ট দুর্বিপাকে প্রাণ না হারায় । কিন্তু সেই মানুষের সমব্যথী, সহমর্মী রাজনীতির অনুপস্থিতি এবং “একটা লাশ পড়লে দশটা লাশ” ফেলার হুমকি, সরকার পতনের আন্দোলনে “আরও কিছু প্রাণ যাবে” ঘোষণা কীসের বার্তা বহন বহন করে ? রাজনীতিতে তাঁদের প্রতিহিংসা পরায়ণতা কী এই ইঙ্গিত দেয় না যে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনের বিন্দুমাত্র মূল্য তাঁদের কাছে নেই !
আমরা যারা দেশ পরিচালনায় যেকোন ধরনের অগণতান্ত্রিক শক্তির হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করি এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত শাসন পদ্ধতি ও রাজনীতিকদের দ্বারা পরিচালিত সরকার ব্যবস্থায় বিশ্বাস করি, তাদের জন্য এটা এক দুর্ভাগ্যজনক দৃশ্যপট । ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে উভয় পক্ষের রাজনীতিকরা যে যুদ্ধংদেহী অবস্থান গ্রহণ করেছেন, এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তার স্বাভাবিক পরিণতি । জেনেশুনেই তারা বেছে নিয়েছেন এই মারণ খেলা ! আর এই মারমুখী অবস্থানের শিকার ভুক্তভোগী বাংলাদেশের নাগরিকদের অনেকে রাজনীতিকদের ভোটের রাজনীতির বাস্তবতা উপলব্ধি করতে না পেরে, অনেকে জেনেশুনেও সেই মারণ খেলায় গুটি হিসেবে নিজেকে ব্যবহৃত হতে দিচ্ছেন । এ বড়ো লজ্জার সময় !
সৈকত রুশদীঃ কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক।।