আলোচনা সভায় অভিযোগঃ শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা বাস্তবায়ন হচ্ছে না
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ শব্দদূষণ এর প্রধান উৎস হলো গাড়ির হর্ন। প্রাইভেট কারসহ যান্ত্রিক যানবাহনের উচ্চমাত্রার হর্ন শব্দদূষণের জন্য দায়ী। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ বাস্তবায়ন ক্ষমতা শুধু পরিবেশ অধিদপ্তরের রয়েছে। অথচ বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কতৃপক্ষ) এবং ট্রাফিক পুলিশকে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা প্রদান করা হলে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে অনেক অগ্রগতি অর্জিত হত। এছাড়া শিল্প এলাকা কর্তৃক শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে শিল্প পুলিশ ও শিল্প মন্ত্রণালয়, আবাসিক এলাকায় ইট ভাঙ্গার মেশিসহ উচ্চশব্দ নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠানগুলো (সিটি করপোরেশন/পৌরসভা/জেলা ও উপজেলা পরিষদ ইত্যাদি) এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত রাজউককে ক্ষমতায়িত করা গেলে আবাসিক এলাকায় শব্দদূষণ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হত। মূলত আইনের দুর্বলতার কারণে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কোন সমন্বয় না থাকায় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক শব্দসচেতনতা দিবস উপলক্ষে ২৪ এপ্রিল ২০১৩ নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এনডিএফ) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত সভায় আলোচকবৃন্দ উপরোক্ত অভিযোগ করেন। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার উর্ধ্বতন প্রকল্প কর্মকর্তা ও গবেষক নাজনীন কবীর। এনডিএফ এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানার সভাপতিত্ত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, পীস এর মহাসচিব ইফমা হোসেন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী প্রমুখ।
প্রবন্ধে নাজনীন কবীর বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন সেন্টার ফর হিয়ারিং এন্ড কমিউনিকেশন (নতুন নাম লীগ ফর দা হার্ড অফ হেয়ারিং) এর উদ্যোগে এপ্রিলের যে কোন বুধবার আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস বিশ্বের প্রায় ৪০টিরও বেশি দেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এ বছর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে সুস্বাস্থের জন্য শ্রবণশক্তি রক্ষা কর। প্রবন্ধে আরও বলা হয়, শব্দদূষণের কারণে ক্ষণস্থায়ী বা স্থায়ী উভয় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কানে কম শোনা; যা থেকে সৃষ্টি হয় মানসিক ভারসাম্যহীনতা, উৎকন্ঠা, মানসিক ভীতি এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। এছাড়া অস্থিরতা, স্নায়ুচাপ, ক্ষণস্থায়ী রক্তচাপ বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, , রক্ত সরবরাহ গত সমস্যা এবং এক ধরনের শব্দভীতি তৈরী হয়।
মিহির বিশ্বাস বলেন, শব্দদূষণ এর প্রধান উৎস হলো গাড়ির হর্ন। প্রাইভেট কার এর হর্ন শব্দদূষণের অন্যতম উৎস। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে ইট ভাঙ্গা মেশিন, মিকচার মেশিন, টাইলস্ কাটা মেশিন। এসব মেশিন ব্যবহার এর ফলে আবাসিক, নীরবসহ সকল এলাকায় শব্দের মাত্রা বেড়ে চলছে।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট পরিচালিত গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে গাউস পিয়ারী বলেন, ৮৬% সাধারণ জনগণ এর কাছে শব্দদূষণ একটি বড় ধরনের সমস্যা। আবার ৯৪% সাধারণ মানুষ, ৮৫% গাড়ির চালক মনে করে যে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন করা জরুরী। কিন্তু শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে তারা কোন পদক্ষেপ দেখেননি বলে জানান। ইফমা হোসেন বলেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা বাস্তবায়নে ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। উচ্চশব্দসৃষ্টিকারী হর্ণের জন্য শব্দদূষণ বিধিমালা অনুযায়ী যানবাহন চালক ও মালিকদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করতে হবে।
ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, গাড়ী চালকদের প্রশিক্ষণ মডিউলে শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিক অর্ন্তভুক্ত করা দরকার। পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশাপাশি বিআরটিএ, ডিএমপিসহ সংশ্লিষ্ট সব সরকারী প্রতিষ্ঠানকে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা বাস্তবায়নের ক্ষমতা প্রদান করে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালার যেসব দুর্বলতা চিহ্নিত হয়েছে সেগুলো দূর করে এটি সংশোধন করা দরকার। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে এবং উচ্চশব্দ সৃষ্টিকারী যানবাহনকে নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বউকস এর নির্বাহী পরিচালক মো. হাসিনুর রহমান, র্যাক এর নির্বাহী পরিচালক শহিদুল ইসলাম এবং ফ্রেন্ডস মিডিয়া, অরুণোদয়ের তরুণ দল, মানবিকসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।