‘রানা প্লাজা’ ধ্বংসস্তূপ থেকে ১০৫টি লাশ উদ্ধার,আহত ৮ শতাধিকঃ সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে
শহিদুল ইসলাম,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ সাভারের ৮তলা ‘রানা প্লাজা’ ধ্বংসস্তূপ থেকে বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১০৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আরো অগণিত লাশ চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো জীবিত আছেন বলে ধারণা করছেন উদ্ধারকর্মীরা। সাভার এনাম মেডিকেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মনিরুজ্জামান দুপুর ১টা ১০ মিনিটে সাংবাদিকদের হাসপাতালের মর্গে ৪৫টি লাশ থাকার কথা জানালেও সাভার কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে নিয়োজিত ডিবির ঢাকা জেলার পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান বলেছেন, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপতালসহ সাভারের বিভিন্ন ক্লিনিক, হাসপাতাল ও থানায় মোট ১০৫টি লাশ পাওয়া গেছে। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আহতাবস্থায় প্রায় তিন শতাধিক ব্যক্তিকে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ সাধারণ মানুষ উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সেনাবাহিনীর ৪টি ইউনিটকে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। সকাল সোয়া ৯টা থেকে সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
২৪ এপ্রিল (বুধবার) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে রানা প্লাজা নামের আটতলা ভবনটি বিকট শব্দে ধসে পড়ার পর পরই স্থানীয়রা প্রথমে উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার পর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় জড়ো হওয়ায় ঢাকা-আরিচা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পরে উদ্ধারকাজে যোগ দেয় পুলিশ, র্যাবসহ অন্যরা। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারীরা দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩০টি লাশ এবং ২ শতাধিক ব্যক্তিকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার কবির হোসেন। ঢাকা জোনের এডিসি মিজানুর রহমান বলেছেন, সেনাবাহিনী দমকলের সহায়তায় উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপকতা এতোটাই বিস্তৃত যে সর্বসাধারণের সহযোগিতা ছাড়া ভালোভাবে উদ্ধার তৎপরতা চালানো সম্ভব নয়। উদ্ধার হওয়া শ্রমিক সামিউল আলম জানান, রানা প্লাজায় ৩ থেকে ৮তলা পর্যন্ত মোট ৫টি গার্মেন্টস রয়েছে। এ কারখানাগুলোতে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে বলে তিনি জানান।তবে মঙ্গলবার ভবনটিতে ফাটল দেখা দিলে পুরো ভবনটি বন্ধ ঘোষণা করে মার্কেট কর্তৃপক্ষ। ভবনটির মালিক পৌর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহেল রানা। ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়ার পর তিনি মঙ্গলবার সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, এতে কোনো সমস্যা হবে না, সামান্য একটু প্লাস্টার খসে পড়েছে মাত্র। ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে ভবনটি ঘুরে দেখেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। স্থানীয় প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ভবনটির নিরাপত্তার স্বার্থে বুয়েট থেকে প্রকৌশলী এনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। তা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সাভার থানা পুলিশ জানিয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যে মূল খুঁটি ও সামনের দেয়ালের অংশবিশেষ ছাড়া পুরো কাঠামোটিই ভেঙে পড়েছে। এ সময় আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী, জানান, আমি দোকানে বসেছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি ধুলার ঝড়ের মতো উঠল। আর চোখের পলকে ভবনটি ধসে পড়ল। ভবনটির প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, প্রসাধন সামগ্রী ও কাপড়ের মাকের্ট এবং ব্র্যাক ব্যাংকের একটি শাখা ছিল। আর তৃতীয় তলার নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, চতুর্থ তলার প্যান্টম এপারেলস লিমিটেড, পঞ্চম তলার প্যান্টম ট্যাক লিমিটেড ও ষষ্ঠ তলার ঈথার টেঙটাইল লিমিটেডে পাঁচ থেকে ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করতেন বলে স্থানীয়রা জানান।
এদিকে, মঙ্গলবার বাজার বাসস্ট্যান্ডের রানা প্লাজার ৮ তলা ভবনের তৃতীয় তলায় দেয়ালের প্লাষ্টারে ফাটল দেখা দিয়েছে এমন একটি সংবাদ প্রকাশের পর দিন বুধবার সকাল ঐ ভবনটি ধসে গেল। ঐ ভবনটিতে থাকা একাধিক গার্মেন্টস কারখানায় কর্মরত শ্রমিক কর্মচারিদের মাঝে মঙ্গলবার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। এই আতঙ্কে ভবনের তৃতীয় তলা থেকে ৮ম তলা পর্যন্ত নিউ ওয়েব বটনস লিমিটেড,প্যান্টমস টিওসি লিমিটেড ও নিউ ওয়েব স্টাইল লিমিটেড নামে তিনটি গার্মেন্টস কারখানায় কর্মরত প্রায় ২ হাজার শ্রমিককে ছুটি ঘোষনা করে গার্মেন্টস কতৃপক্ষ। তার পরেও শ্রমিকরা কাজে এসেছিল। এতে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি । ভবনে ফাটল আতঙ্কের ফলে দ্বিতীয় তলায় থাকা ব্র্যাক ব্যাংক সাভার শাখার সকল কর্মকান্ড বন্ধ ঘোষনা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় মার্কেটের সকল দোকান পাট খোলা রয়েছে পূর্বের মতোই। এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবির হোসেন সরদার, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও সাভার থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবির হোসেন সরদার এ বিষয়ে জানান ফাটলের অবস্থা অস্বাভাবিক কিছু নয় । দেওয়ালের প্লাষ্টার ধসে গেছে ও আর একটি ফিলারের সামান্য ফাটল দেখা গেছে। এ ঘটনায় কোন প্রকার দূর্ঘটনার আশংকার সম্ভাবনা নেই ।তার পরেও কিভাবে ঐ ভবনটি ধসে গেল তা দেখার বিষয় বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।