ইতিহাসের ভয়ার্ত অধ্যায়ঃ সময়ের সাথে দীর্ঘ হচ্ছে নিহত ও নিখোঁজের তালিকা
জাহিদ হোসেন,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ সময় যতো যাচ্ছে সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় নিহত ও নিখোঁজের তালিকা ততোই দীর্ঘ হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে জীবিত বা মৃতদের উদ্ধার করা হলেও এখনও চাপা পড়ে রয়েছেন কয়েক শত গার্মেন্টস শ্রমিক। সাভারে ধসে পড়া ভবন ঘিরে এখন কেবল লাশের গন্ধ আর স্বজন হারাদের কান্নার রোল। তাদের চোখে-মুখে কেবল বেদনা আর শঙ্কা। জীবিত কিংবা মৃত যাই হোক প্রিয় মানুষটাকে ফেরত পাওয়ার আকুতি তাদের। ২৬ এপ্রিল (শুক্রবার) রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১৫-এ। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২ হাজার ৩৮৯ জনকে। সাভার থানায় নিখোঁজদের সন্ধান চেয়ে জিডি করেছে ৫৩০ জনের স্বজন। অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে লাশ হস্তান্তরে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, ২৮৭ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ৩৯টি লাশ রয়েছে। এদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগের লাশ ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। ধসে যাওয়া ওই ভবনের নিচে আরও ২ হাজার মানুষ আটকা পড়ে আছেন বলে ধারণা করছেন উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসা স্থানীয়রা। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিজিএমইএর হিসাব অনুযায়ী, ওই ভবনের পোশাক কারখানার ৫টি ইউনিটে ৩ হাজার ১২২ জন শ্রমিক কাজ করতেন। এছাড়া নিচের দুই তলা ছিল মার্কেট। সেখানেও অনেক মানুষ ছিলেন। বহু মানুষ এখনও ধ্বংস স্তূপে আটকে রয়েছেন। ধ্বংস স্তূপের ভেতর থেকে আটকে পড়া মানুষ জনের চিৎকার শোনা যাচ্ছে। অনেক মহিলা, পুরুষ তাদের বের করার জন্য আকুতি জানিয়ে চিৎকার করছেন। অনেকে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টের কথা বলছেন। কিন্তু ইট, লোহা আর কংক্রিটের স্তূপে এমনভাবে তারা আটকে রয়েছেন, উদ্ধারকর্মীরা তাদের উদ্ধারে কোনো নিরাপদ রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন না। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলছে। উদ্ধার কাজ শেষ হবে কবে কখন তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। তবে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি, ভালোবাসা সবই আছে চাপাপড়া হতভাগাদের সঙ্গে।
অন্যদিকে লাশের জন্য অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও ভাংচুর করা হয়েছে। কয়েক হাজার উদ্ধার কর্মী সাধারণ মানুষ নিরসলভাবে উদ্ধার করে গেলেও নিখোঁজ ও নিহতের তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে। অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রোজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বেশ কিছু জায়গায় দেয়ালে দেয়ালে নিখোঁজদের ছবিসহ নাম-ঠিকানা টাঙানো হয়েছে। অপেক্ষা করছেন স্বজনরা। আর নাম পরিচয় দিয়ে অধচর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় কন্ট্রোল রুম ও ঢাকা জেলা প্রশাসকের কন্ট্রোল রুমে নাম অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। নাম-পরিচয় দিলেও লাশ না পেয়ে স্বজনহারা লোকজনকে কিছু সময় পর পর বিক্ষোভ মিছিল করতেও দেখা গেছে। শুক্রবার রাতে অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালে, গেটে শত শত নিখোঁজ নারী-পুরুষের ছবি। অনেককে হাতে ছবি নিয়ে গেটে, মিডিয়ার কর্মীদের দ্বারে দ্বারে ছুটতেও দেখা গেছে। অধৈর্য হয়ে কিছুক্ষণ পরপর ২০-৩০ জন একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা গেছে। লাশ ও জীবিত বা আহতদের নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে হাতে ছবি নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সবাই।