শোকার্ত দেশঃ ৩৫৩ লাশ উদ্ধার ।। ২ মে সারা দেশে হরতাল
শহিদুল ইসলাম ও পুলক চৌধুরী,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ সাভারে ধসে পড়া ভবন ঘিরে এখন কেবল লাশের গন্ধ আর স্বজন হারাদের কান্নার রোল। তাদের চোখে-মুখে কেবল বেদনা আর শঙ্কা। জীবিত কিংবা মৃত যাই হোক প্রিয় মানুষটাকে ফেরত পাওয়ার আকুতি তাদের। ২৭ এপ্রিল (শনিবার) রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫৩। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২ হাজার ৬ জনকে। সাভার থানায় নিখোঁজদের সন্ধান চেয়ে জিডি করেছে ৫৩০ জনের স্বজন। অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে লাশ হস্তান্তরে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, ৩৪৬ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগের লাশ ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। ধসে যাওয়া ওই ভবনের নিচে আরও অনেক মানুষ আটকা পড়ে আছেন বলে ধারণা করছেন উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসা স্থানীয়রা। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিজিএমইএর হিসাব অনুযায়ী, ওই ভবনের পোশাক কারখানার পাঁচটি ইউনিটে তিন হাজার ১২২ জন শ্রমিক কাজ করতেন। এছাড়া নিচের দুই তলায় ছিল মার্কেট। সেখানেও অনেক মানুষ ছিলেন। বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপে আটকে রয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আটকে পড়া মানুষ জনের চিৎকার শোনা যাচ্ছে। অনেক মহিলা, পুরুষ তাদের বের করার জন্য আকুতি জানিয়ে চিৎকার করছেন। অনেকে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টের কথা বলছেন। কিন্তু ইট, লোহা আর কংক্রিটের স্তূপে এমনভাবে তারা আটকে রয়েছেন, উদ্ধারকর্মীরা তাদের উদ্ধারে কোনো নিরাপদ রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন না। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলছে। উদ্ধার কাজ শেষ হবে কবে কখন তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। তবে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি, ভালোবাসা সবই আছে চাপাপড়া হতভাগাদের সঙ্গে।
অপরদিকে, আগামী ২ মে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। একই সঙ্গে ৩০ এপ্রিল সারা দেশে শোক দিবস পালন ও কালো পতাকা মিছিল ও ৪ মে ঢাকায় সমাবেশ করবে জোট। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে শনিবার রাত সোয়া ৯টা হতে পৌনে এগারোটা পর্যন্ত স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক ও পরে ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে এই ঘোষণা দেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও ১৮ দলীয় জোটের বৈঠকে সাভারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শত শত শ্রমিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে। আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই ঘটনা কোনো নিছক দুর্ঘটনা নয়। এটা হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ও যারা পঙ্গু হয়েছে তাদের প্রত্যেককে ২০ লাখ করে টাকা দেয়ার দাবি করেছে জোট। মওদুদ বলেন, আমরা ভবনের মালিক সোহেলা রানা ও সংসদ সদস্য মুরাদ জং য়ের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। তিনি বলেন, সরকারের ব্যর্থতা ও অবহেলার প্রতিবাদে আগামী ২ মে সারা দেশে হরতাল পালনের আহবান করছি। একই দিন কমিউনিস্ট পার্টি ও বাসদসহ কয়েকটি দল হরতাল ডেকেছে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। আমরা আগেই ২ মে হরতালের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এর আগে পিছে হরতাল দেয়ার মতো দিন নেই বলেই ওই দিন আমরা হরতাল ডেকেছি। তিনি বলেন, ৪ মে ঢাকায় বড় সমাবেশ হবে। ওই সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য রাখবেন। আমরা শাপলা চত্বরে এই সমাবেশ করার অনুমতি চাইব। যদি না দেয়া হয় তাহলে নাইটএঙ্গেল মোড়ে বিজয়নগরকে সামনে রেখে এই সমাবেশ করা হবে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, ড. আর এ গনি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল অব. মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. আসম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সারোয়ারি রহমান, ড. আবদুল মঈন খান।