১ মেঃ শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি এবং অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ আজ ১ মে ২০১৩ সাল বাংলা ১৪২০ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসের ১৮ তারিখ। মে মাসের গুরুত্ব আমাদের কাছে অনেক বেশি। বৈশাখ মাস হিসেবে প্রকৃতিতে রূপবঙ্গশালার প্রথম ঋতুর আভাস। আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতির প্রেরণায় পৃথিবী তার সূর্য পরিক্রমার পথে অগ্রসর হয়ে চলছে। তার সঙ্গে সঙ্গ মিলিয়ে চলে ঋতুর পর ঋতুর এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। ঋতু বৈচিত্র্যের এমন অপরূপ প্রকাশ বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও তেমন নেই। প্রকৃতিতে মুগ্ধ হয়ে তাই তো কবিগুরু বলেছেন,
”অবারিত মাঠ, গগন ললাট চুমে তব পদধূলি,
ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি।”
ধুধু রুক্ষ দুচোখে প্রথর অগি্নদাহ নিয়ে আবির্ভাব ঘটে এ রুদ্র তাপসের। সর্বত্রই যেন মরুভূমির ধুধু বিস্তার। সমগ্র জীবজগৎ ও উদ্ভিদ জগতে নেমে আসে এক প্রাণহীন, রসহীন বিবর্ণতার পা-র ছায়া। এ সময় প্রকৃতিকে তোলপাড় করে দেয় কালবৈশাখীর ভয়াল ছোবল। প্রকৃতির মাঝে যতই পরিবর্তন আসুক না কেন প্রতি বছরের ন্যায় এই মে মাসেও আমরা পালন করব যথারীতি বিশেষ দিনগুলো। মে মাসের বিশেষ দিনগুলোর মাঝে রয়েছে মহান মে দিবস।
১৮৮৬ সালে ১ মে প্রথম আমেরিকার শিকাগো শহরে এবং পরে শিকাগোর হে মার্কেটে ৩ ও ৪ মে আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘট পালনরত শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রক্তদানের মধ্য দিয়ে জন্ম হয়েছিল এক নতুন ইতিহাস। শ্রমিকদের সেই রক্তদান এবং হে মার্কেট ট্র্যাজেডি বৃথা যায়নি। শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবি মেনে নেয় কর্তৃপক্ষ। ১৮৮৯ সালে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আন্তর্জাতিকভাবে ১ মে-কে মে দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সারাবিশ্বে দিনটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতির প্রতীক মহান মে দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
১৮৮৬ থেকে ২০১৩ সাল বছরের পর বছর পার হলো। দিবসও পালন করা হলো। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো_ এখনও শ্রমিকদের নানামুখী বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৮০ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যুক্ত। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে দেশে শ্রমিকদের সার্বিক পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হলেও তাদের জন্য ন্যায়সঙ্গত করণীয় আরও অনেক কিছু বাকি। সুস্থ রাজনীতি যেমন দেশের জন্য অপরিহার্য তেমনি সুস্থ ট্রেড ইউনিয়নও জরুরি কিন্তু আমাদের দেশের বর্তমান রাজনীতির পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ার ফলে তার বিশাল প্রভাব পড়ছে অর্থখাতে, তার সঙ্গে শ্রমিকদের ওপরও। কারণ যে অর্থনীতির চাকা শ্রমিকদের হাতে সেই চাকার প্রভাব আর শিকার যে শ্রমিকরা। শোষণ-বঞ্চনা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের স্মারক মে দিবস। দিবস পালনের সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত হবে এবং প্রতিষ্ঠিত হবে শ্রমিকের অধিকার- এটাই সবার কাম্য।