গণ-অভুত্থ্যানের মাধ্যমে ঝাঁকি দিয়ে সরকারকে ফেলে দেয়া হবেঃ খালেদা জিয়া
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ বিএনপি চেয়ারপারসন ও জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, এই সরকার একটি অপয়া সরকার। তারা ক্ষমতায় এসেছে বিডিআরে অফিসারদের রক্ত হাতে নিয়ে, আবার শ্রমিকদের রক্তের মাধ্যমে তারা বিদায় হবে। তারা শ্রমিক ভাইদের জন্য কিছুই করেনি। বরং শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত চাকরি হারাচ্ছে। তিনি বলেন, এই সরকার যত তাড়াতাড়ি বিদায় হবে, ততই দেশের মানুষের মঙ্গল হবে। খালেদা জিয়া বলেন, সরকার যদি ভালোয় ভালোয় বিদায় না নেয় তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেরকম বলেছে ঝাঁকি দিয়ে ভবন ফেলে দেয়া হয়েছে, সেরকম গণ-অভুত্থ্যানের মাধ্যমে ঝাঁকি দিয়ে সরকারকে ফেলে দেয়া হবে। সাভারে রানা প্লাজা ধসে নিহত প্রতিটি শ্রমিকের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা ও আহতদের পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা ও সুস্থ হলে কর্মসংস্থানের দাবি করেন তিনি। ১ মে (বুধবার) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর বালুর মাঠে শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শ্রমিক দলের সভাপতি নজরুল ইসলাম খান। খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকারের আমলে নতুন কারখানাতো হয়ইনি বরং গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির অভাবে কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজির কারণে মানুষ ব্যবসা করতে পারছে না। সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি আর লুটপাটের জন্য কেউ ব্যবসা করতে পারছে না। তাদের কাজ তিনটা- হত্যা, গুম আর সন্ত্রাস। তিনি শ্রমিকদের কাছে প্রশ্ন করেন, এই সরকার ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর কথা বলেছিল না? আপনারা পেয়েছেন ১০ টাকায় চাল? এখনতো চালের কেজি ৪০ টাকা। তিনি বলেন, চাল, ডাল, তেল, লবণ, সবজিসহ সবকিছুর দাম এখন বেড়ে গেছে। তিনি অভিযোগ করেন, হলমার্ক, ডেসটিনি, কুইক রেন্টাল, পদ্মা সেতু, শেয়ার বাজারের সব টাকা লূট করে বিদেশে নিয়ে গেছে। তাদের সব সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। দেশের মানুষ ভাল না থাকলেও তারা ভাল আছে। রানা প্লাজার মালিক যুবলীগের কেউ না- প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, একজন প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাড়িয়ে যদি এভাবে মিথ্যা কথা বলেন তাহলে সেই দেশ কিভাবে চলবে। সারা দেশের মানুষ দেখেছে, সকল টেলিভিশন পত্র-পত্রিকায় লিখেছে। মুরাদ জং আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপি। সে কিভাবে রানাকে চুমো খেয়েছে, সব মানুষ দেখেছে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করে বলেছেন তার কাছে যে তালিকা রয়েছে তাতে নাকি সোহেল রানার নাম নেই। কি জানি তিনি কার কাছ থেকে কি তালিকা এনেছেন।
হিন্দুদের ও সরকারি জমি দখল করে রানা প্লাজা নির্মাণ করা হয়েছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যে দখলবাজ, মানুষের জমি দখল করে তার প্রমাণ এটাই। তিনি বলেন, সেখানে পুকুর ছিল। সেই পুকুর ভালভাবে ভরাট না করে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করেছে। ৬ তলার অনুমতি নিয়ে ৯ তলা বানিয়েছে। তারপরও স্থানীয় প্রকৌশলীরা বলেছিল এই ভবনে কাজ করা যাবে না। তারপরও জোর করে শ্রমিকদের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে সেখানে ঢোকানো হয়েছে। বিএনপি গার্মেন্ট কারাখানা হরতালের আওতামুক্ত রাখলেও তারা হরতাল বিরোধী মিছিল করার জন্য শ্রমিকদের জড়ো করেছিল। বেগম জিয়া অভিযোগ করেন সেনাবাহিনীকে সঠিক সময়ে সাভারের ভবনে আটকেপড়া শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য পাঠানো হয়নি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে যদি ব্যবস্থা নিতেন তাহলে আরো শ্রমিকের জীবন বাঁচানো যেত। তিনি বলেন, শোনা যাচ্ছে ১ হাজার ৬০০ মানুষ মারা গেছে। সঠিকভাবে হিসাবও দেওয়া হয়নি। তিনি সরকারের কাছে প্রতিটা মানুষের হিসাব দেয়ার দাবি জানান। বিএনপি প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ একটা সন্ত্রাসী দল। দেশের সব স্থানে তাদের গডফাদার আছে। নারায়ণগঞ্জেও একজন গডফাদার আছে না? প্রশ্ন করেন তিনি। তিনি বলেন, সেই গডফাদার একটি ছেলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। এখন ত্বকীর বাবাকেও হত্যা করতে চায়। লক্ষ্মীপুরের তাহের বিএনপি নেতা নুরুল ইসলামকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করে নদীতে ফেলেছে। চট্টগ্রামসহ সারা দেশেই তাদের গডফাদার আছে। জিয়াউর রহমান কৃষক ও শ্রমিকদের অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়া নিজেকে শ্রমিক পরিচয় দিতেন, আমিও শ্রমিকের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই, সেজন্য বিদেশিরা বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে না। তারা ফিরে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশ থেকে শ্রমিকরা ফেরত আসছে। আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, দেশের মানুষদের এসব থেকে বাঁচানোর জন্য আন্দোলন করছি। এই আন্দোলন করেই সরকারকে বিদায় করতে হবে।
সরকার সভা-সমাবেশ করতে দেয় না অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে মঞ্চ লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি করেছে। এ সময় তিনি সমাবেশের সভাপতি নজরুল ইসলাম খানের শরীরে লাগা গুলি সবাইকে দেখাতে বলেন। তিনি বলেন, এই সরকার জনগণকে ভয় পায়। সেজন্য সভা-সমাবেশ করতে দেয় না। তারা ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করতে চায়। সরকার যদি ভালো ভালোয় বিদায় না নেয়, তাহলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী জনগণ এমনই ঝাঁকি দেবে যে, তাতে সরকারের পতন হয়ে যাবে।