হেফাজতে ইসলামের হুমকীঃ অবরোধে বাধা দেয়া হলে সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ হেফাজতে ইসলামের ৫ মে (রোববার) ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি হবে জানিয়ে সংগঠনের নেতারা হুমকি দিয়েছেন, অবরোধে বাধা দেয়া হলে সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে। ৪ মে (শনিবার) লালবাগে হেফাজতে ইসলামের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুমকি দেয়া হয়। হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী অসুস্থ থাকায় তার পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুফতি ফয়েজ উল্লাহ। এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘তাদের দাবি মেনে নেয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা নেই। প্রধানমন্ত্রীকে বিভ্রান্তি, ধোকা ও অস্পষ্টতা পরিহার করে অবিলেম্বে ১৩ দফা বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান ফয়েজ উল্লাহ। এছাড়া হেফাজতের আন্দোলনে শহীদদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা, আটকদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও ছাপাখানা খুলে দিয়ে পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি মেনে নেয়ার কোনো ধরনের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। তাই তারা বাধ্য হয়ে ৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি বহাল রেখেছেন।
মুফতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল স্ববিরোধী। তিনি ভুল ব্যাখ্যা ও পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে আমাদের অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে ইতোমধ্যেই সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। নবীপ্রেমিক জনতা ইতোমধ্যেই ঢাকা এসে পৌঁছেছেন।’ তিনি আরও বলেন, সরকার ও সরকারদলীয় ক্যাডারদের হাজারো প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে লাখো তৌহিদি জনতা ঢাকা অভিমুখে রয়েছেন। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউই তাদের রুখতে পারবে না। মুফতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, বহু আলেম ও খতিবকে সরকার ইতোমধ্যে চাকরিচ্যুত করেছে এবং বেশ কিছু মাদ্রাসা বাধ্যতামূলকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে খতিবদের সরকারের গিবত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, খতিবদের পবিত্র দায়িত্ব হলো ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানো ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সর্তক করা। তিনি বলেন, এটা কোনো ধরনের গিবত নয়, সবোর্ত্তম জিহাদ। মুফতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপনের বিষয়টি পাস কাটিয়ে গেছেন। তিনি রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম ও বিসমিল্লাহ নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। চার নাস্তিক ব্লগারকে গ্রেফতার করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো মামলা হয়নি। বরং তাদের সরকার আদর আপ্যায়ন করছে বলে অভিযোগ করেন মুফতি ফয়েজ উল্লাহ। ভাস্কর্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। মূর্তি পূজার প্রচলন হয়েছিল স্মৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে, মূর্তি বানিয়ে রাখার সূত্র ধরে। ব্যাভিচারের ব্যাপারে সংবিধানে শাস্তির বিধান রয়েছে বলে উল্লেখ করলেও শাহবাগের অশ্লীল নৃত্য ও অবাধ মেলামেশায় রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্টপোষকতা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এছাড়া নারীবাদী বিভিন্ন সংগঠনকে হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে উসকে দেয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মুফতি ফয়েজ উল্লাহ। মোমবাতি প্রজ্জলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, এটি স্পষ্টই অগ্নি পূজারী ও শিরকি সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য। তবে নাটক সিনেমায় দাঁড়ি-টুপিসহ ধর্মীয় নিদর্শনাবলীকে খল চরিত্রে উপস্থাপনে প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা জানানোর বক্তব্যকে স্বাগত জানান মুফতি ফয়েজ উল্লাহ।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফার ব্যাখ্যা দেন। তিনি দাবি করেন, সরকার ইতোমধ্যে হেফাজতের কিছু দাবি মেনে নিয়েছে, বাকি ‘যৌক্তিক’ দাবিগুলোও মেনে নেবে সরকার। হেফাজতকে তাদের অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারেরও অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী। তবে প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে হেফাজতে ইসলাম। তারা বলেছেন ইসলামের এই মহাজাগরণ প্রতিহত করার সামর্থ সরকারের নেই।