হেফাজতের ‘অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক’ আসলে কে?
মতিঝিল থেকে হেফাজতিদের উচ্ছেদের পর এ নিয়ে নানাধরনের আলোচনা সমালোচনা চলছে। বিএনপি ও জামাত ঘরানা থেকে ‘গণহত্যা’র গুজব তুলে হৈচৈ ফেলার চেষ্টাটাও আতুর ঘরেই মারা গেছে।দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে হেফাজতিদের তান্ডব এবং পবিত্র কোরান পুড়ানোর ঘটনায় পুরো জাতি ঘৃনায় ছি ছি করছে।‘মৌলবীরা এত্তো খরাপ? ছি:।‘- এমন একটা মনোভাব তৈরি হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের মনে।
এরই মাঝে আলোচনার নতুন একটি উপাদানের যোগান দিয়েছে মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। শাহবাগের চেতনার বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান গোপন রাখতে পারেন নি মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী।যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির বিরুদ্ধে জনমত গঠনে কাজ করেছেন কৌশলে।চ্যানেল আই’র মধ্যরাতের একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনার সুযোগটিকেও তিনি সফলভাবেই সরকার ও শাহবাগের চেতনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছেন। রাজনৈতিকভাবে জামাত শিবির বিএনপির ঘরানায়ই তার অবস্থান।
মতিঝিল থেকে হেফাজত উচ্ছেদ হওয়ার পর মানবজমিনে অমিত রহমানের নামে একটি বিশ্লেষন ছাপা হয়েছে।এই নামে প্রায়শই রাজনৈতিক বিশ্লেষন ছাপা হয় পত্রিকাটিতে। গুঞ্জন আছে মতি চৌধুরী নিজেই এই বিশ্লেষনগুলো লিখেন,ছাপেন বেনামে।
‘হুজুরদের নিয়ে সবাই খেলছে’ শিরোনামে গত শুক্রবার (১০ মে, ২০১৩) প্রকাশিত তার এই লেখাটিতে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, হেফাজতের আন্দোলন মূলত’একটি ‘অদৃশ্য শক্তি’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। সেই অদৃশ্য শক্তিটি কে বা কারা সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেন নি ওই লেখায়।
লেখা থেকে উদ্ধৃতি দেই, ‘সরকারের প্রতিনিধিদের জানিয়ে দেন, তারা (হেফাজত কর্মীরা) শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে বাড়ি ফিরে যাবেন। এর আগে অবশ্য একটি অদৃশ্য শক্তি তাদের বলেছিল, বিনা প্রস্তুতিতে এমন কর্মসূচিতে যাবেন না। বরং সরকারকে সময় দিন। এর পরেই এক মাসের সময় দেয়া হয়।“
আমরা জানতাম হেফাজত নেতারা আন্দোলনের কৌশল হিসেবেই সরকারকে এক মাসের সময় দিয়েছে। এপ্রিলে জামাত বিএনপির নেতারা লাগাতার অবস্থানের ঘোষনার জন্য অনেক দেনদরবার করেছে হেফাজত নেতাদের সঙ্গে। এখন মতিউর রহমান চৌধুরীর মানব জমিন জানাচ্ছে ‘অদৃশ্য শক্তির’ নির্দেশনায় হেফাজত সরকারকে এক মাসের সময় দেয়।
আবার মানব জমিন থেকে উদ্ধৃতি দেই। পত্রিকাটি লিখেছে, ‘৫ই মে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি দেয়া হয়। তখন তাদের ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে কোন কর্মসূচি দেয়ার কথা ছিল না। কোন একটি শক্তি তাদেরকে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে সমাবেশ করার প্রস্তাব দেয়। তারপরই একটি চিঠি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে আবেদন জানান তারা।“
আমরা জানি, হেফাজতের ৫ মের কর্মসূচী ছিলো ঢাকা অবরোধের। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা মতিঝিলে সমাবেশ করতে চাইলো কেন? এ নিয়ে নানাধরনের প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু সম্ভাব্য কারন নিয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করেছেন বলে শুনিনি। তবে মতিউর রহমান চৌধুরী সেই কারনটাও আমাদের জানাচ্ছেন। তার পত্রিকায় বলা হয়েছে,’সরকারের প্রতিনিধিরা বড় হুজুরের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন- যাতে বিকাল ৫টার মধ্যে সমাবেশের সমাপ্তি টেনে তারা যার যার বাড়ি চলে যান। দুপুর পর্যন্ত এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল হেফাজত নেতাদের মধ্যে। দুপুর গড়াতেই অন্য একটি শক্তি আলোচনায় না যেতে পরামর্শ দেয়। তখনই সিদ্ধান্ত হয় অবস্থানের।‘
মানব জমিনে প্রকাশিত অমিত রহমানের (এটি মতিউর রহমান চৌধুরীর ছদ্মনাম বলে গুঞ্জন রয়েছে) লেখাটি থেকে পরিষ্কার হেফাজতের সাম্প্রতিক ততপরতা বা আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে বিশেষ একটি অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। ওই শক্তিটি মূলত হেফাজতের আন্দোলন পরিচালনা করেছে নেপথ্যে থেকে। প্রশ্ন হচ্ছে,এই অদৃশ্য শক্তিটি কারা? মানবজমিনের বিশ্লেষনে হেফাজতের সঙ্গে দেনদরবারকারী হিসেবে সরকার পক্ষ এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের উল্লেখ আছে।এর বাইরে ‘অদৃশ্য শক্তি’র কথা বলা হয়েছে। সামরিক শাসনামলে সাধারনত কোনো আলোচনায় সেনাবাহিনীর নাম উচ্চারন করা হতো না। লেখালেখির ক্ষেত্রেও এই নামটা উহ্য রাখা হতো। ‘অদৃশ্য শক্তি’, ‘ক্ষমতাশালী একটি মহল’,’উত্তর পাড়া’ ইত্যাদি নানা উপমায় সেনাবাহিনীর কথাবার্তা লেখা হতো।মানবজমিন যখন হেফাজতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কোনো ‘অদৃশ্য শক্তি’ কথা বলে তখন সঙ্গতকারনেই পাঠকের মনে সেনাবাহিনীর নামটাই প্রথম উদিত হয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, সত্যিই কি দেশের সেনাবাহিনীর কোনো অংশ দেশের ভেতর অস্থিতিশীলতা তৈরির জন্য উগ্র মৌলবাদী একটি গোষ্ঠীর কর্মকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছিলেন? মানবজমিনের এই তথ্যটি সঠিক হলে,সেনাবাহিনীর যে কর্মকর্তারা হেফাজতের পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তারা দেশের প্রচলিত আইনই কেবল নয়, সেনাবাহিনীর শৃংখলাও ভঙ্গ করেছেন। সেনাবাহিনীর শৃংখলা স্বার্থেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
আর যদি হেফাজতের বিপর্যয়ে জামাত বিএনপির ভাবমূর্তিতে যে ধস নেমেছে সেটি পূরনের কোনো এসাইনমেন্ট এর অংশ হিসেবে মানবজমিন এই তথ্যটি হাজির করে থাকে,তাহলে সেটিও পরিষ্কার হওয়া জরুরী।
লেখক: নতুনদেশ ডটকম এর প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক।