‘মহাসেন’ উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে: দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি!
এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেস্কঃ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ ধীর গতিতে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোর জন্য চার নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত বহাল আছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানকারী ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আরো কিছুটা উত্তর দিকে সরে আসছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রস্থলে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ এটি উপকূলে, বিশেষ করে ভোলার চর আইচা এবং ওই এলাকায় আঘাত হানতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মহাসেন-এর প্রভাবে ভোলায় নদী ও সাগর হঠাৎ করেই উত্তাল হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিকের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট উচ্চতায় নদী ও সাগরের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপকূলজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে চলে এসেছে শত শত নৌকা। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সোমবার রাত থেকেই ভোলায় মেঘলা আবহাওয়া বিরাজ করছে। জেলায় ২৫০টি সাইক্লোন সেন্টার দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে জেলায় সাতটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। উদ্ধার যান প্রস্তুত রাখা, সাইরেন, শুকনা খাবারের ব্যবস্থা ও আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জনসাধারণকে সতর্ক করতে শহরের আশপাশে মাইকিং করা হচ্ছে। বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, উপজেলা সদরগুলোতে ঝড়ের পূর্বাভাস দেয়া হলেও সাগর উপকূলের বিচ্ছিন্ন এলাকায় এখনো সতর্কবাতা পৌঁছায়নি। জেলার কুকরী-মুকরী, ঢালচর, কলাতলীর চর, চর মমতাজ, ভাসান চর, চর পাতিলাসহ বিচ্ছিন্ন এলাকার মানুষ এখনও অনিরাপদ অবস্থায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। মেঘনার ভাঙ্গনে কিছু সাইক্লোন সেন্টার বিলীন হয়ে গেছে।এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ধীর গতিতে এগিয়ে আসার ফলে এটি আরো শক্তি সঞ্চয় করে উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবার এটি শেষ পর্যন্ত গতিপথ পরিবর্তনও করতে পারে। তবে দুর্যোগের আশঙ্কায় সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থায় রয়েছে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন। দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলার সব স্বেচ্ছাসেবক দল, বন্দর কর্তৃপক্ষ, নৌ বাহিনী এবং কোস্ট গার্ডও। দুর্যোগ মোকাবেলায় ভোলার জেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলা ভোলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী নিদের্শ না দেয়া পর্যন্ত সরকারি ও আধা-সরকারি সব দপ্তরের ছুটি বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। ১৪ মে (মঙ্গলবার) বিকেলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিষয়ক মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবেলায় সব রকম প্রস্তুতি রয়েছে।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে তিনি জানান, দেশের উপকূলীয় ১৩টি জেলায় ৩২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া এসব এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এই ১৩টি জেলায় জেলা প্রশাসক তহবিল ছাড়াও অতিরিক্ত তিন লাখ টাকা ও ১০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আবদুল ওয়াজেদ বলেন, “অনেক আগে থেকেই আমরা ট্র্যাক করতে পারি যে ঘূর্ণিঝড় কোন দিকে যাচ্ছে। যখন এটি বাংলাদেশের উপকূল থেকে এক হাজার ৮০০ কিলোমিটার দূরে ছিল, তখন থেকেই তিন নাম্বার সিগন্যাল ছিল। এরপর যখন চার নাম্বার সিগন্যাল দেয়া হয়েছে, তখন আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে গেছি। আমাদের ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত আছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা কমিটি সক্রিয় আছে। তিনি জানান, যেসব লোক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়, বিশেষ করে বেড়িবাঁধের বাইরে এবং সমুদ্রের কাছাকাছি আছে, এরকম অনেকগুলো জায়গা থেকে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। নোয়াখালীর মেঘনা নদীর ওপার থেকে প্রায় দেড়শ’ পরিবার নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, যখন ঝড় কাছাকাছি চলে আসবে তখন ইঞ্জিন বোট ও নৌকা চলাচল করতে পারবে না। ফলে আগে ভাগেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের সরিয়ে আনা হয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন দ্বীপ যেমন হাতিয়া, সন্দিপ, মহেষখালী ও কুতুবদিয়া এলাকার মানুষজনকে সাবধান করা হয়েছে, যাতে যখনই নির্দেশনা আসবে তারা যেন আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যায়। মহাপরিচালক বলেন, মহাসেন মোকাবেলায় আমরা পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত আছি। যদি মহাসেন উপকুলে সত্যিই আঘাত হানে তাহলে যেন অন্তত জীবন হানি আমরা রোধ করতে পারি, সেটিই প্রথম চ্যালেঞ্জ। আর আঘাত হানার পরে উদ্ধার অভিযানের জন্যও সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বাহিনী প্রস্তুত আছে। এছাড়া ২০ হাজার প্যারাসুট প্যাকেট তৈরি করা হয়েছে, যাতে শুকনো খাবার রয়েছে। অর্থাৎ স্থলপথে যদি কোথাও খাবার পৌঁছানো সম্ভব না হয়, তাহলে হেলিকপ্টার থেকে ওইসব শুকনো খাবারের প্যাকেট দুর্গত এলাকায় ফেলা হবে।