পরিবার: সমাজের মৌলিক প্রতিষ্ঠান
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ:
পরিবার কীঃ পরিবার হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের আয়না। যেখানে সব সদ্যসের অধিকার সমান। মর্যাদা যথাযোগ্য। মানবাধিকার, জনসংখ্যা ও নারীদের অগ্রগতি পরিবার দ্বারা প্রভাবিত। অর্থাৎ রাষ্ট্রের সামাজিক উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে এর ভূমিকা রয়েছে। পরিবার নিয়ে জাতিসংঘের চিন্তাভাবনা ঠিক এ রকম। আমাদের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবার হচ্ছে সমাজের মৌলিক প্রতিষ্ঠান, মৌলিক অর্থনৈতিক একক।
আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসঃ ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গৃহীত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৯ সালে পারিবারিক বিষয়ে জনসচেতনা বৃদ্ধি এবং পরিবার সংশ্লিষ্ট সমস্যা নিরসনে ব্যাপক নীতি গ্রহণের মধ্যে জাতীয় ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে জাতিসংঘ ১৯৯৪ সালকে আন্তর্জাতিক পরিবার বর্ষ ঘোষণা করেছিল। সামাজিক অগ্রগতি ও জীবনমান উন্নয়নে সমাজের সর্বনিম্ন ভিত্তি পরিবার গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে গঠনই পরিবার দিবস ও পরিবার বর্ষ পালনের উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশে পরিবারের প্রেক্ষাপটঃ আমাদের দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে দ্রুত। বাড়ছে পরিবারের সংখ্যা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৯০ লাখ। ২০০০ সালে এ জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ কোটিতে। বর্তমানে ধরা হয় সাড়ে ১৬ কোটি। ’৭১-এ পরিবার ছিল প্রায় ৯০ লাখ। এখন পরিবারের সংখ্যা ২ কোটির বেশি। একান্নবর্তী পরিবারগুলো সময়ের প্রয়োজনেই ভেঙে খন্ড খন্ড হয়ে যাচ্ছে। যদিও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৭০ দশকের তুলনায় ০.৫৮ ভাগ কমেছে। তারপরও ভূমি আয়তনের তুলনায় এ জনসংখ্যার হার অত্যধিক। ভূমির হিসাবে বাংলাদেশ এখনো পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ। বর্তমানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে ৯০০ থেকে ৯৫০ জন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত ২০ বছরে গ্রামাঞ্চলে জনসংখ্যা বেড়েছে ২ কোটি ৬০ লাখ। এর মধ্যে ২ কোটি ৪০ লাখই দরিদ্র। বর্তমানে মোট গ্রামীণ জনসংখ্যা ১১ কোটি। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্থাৎ ৮৩ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করতো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলন অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলের ৪৭.০১ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমা এবং ২৪.০৬ শতাংশ লোক চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।
পরিবারের ভূমিকাঃ পরিবার একটি সার্বজনীন পদ্ধতি এবং সামাজিক জীবনের মৌলিক ভিত্তি। কিন্তু পরিবার গঠন ও কর্মে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন সংস্কৃতির পরিবারের ভূমিকাও ভিন্ন ভিন্নভাবে পরিলক্ষিত হয়। পরিবারের কোনো একক রূপ নেই, নেই কোনো সার্বজনীন সংজ্ঞা। তবে পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য যে বৈশিষ্ট্য সেটি হচ্ছে তার বৈচিত্র্য। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবারের গঠন ও অন্যান্য অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবেই সব সমাজ ও সংস্কৃতিতেই পরিবার পিতৃতান্ত্রিক অথবা পুরুষ প্রাধান্য। মধ্যযুগে ইউরোপে রোমান ক্যাথলিক চার্চ এবং সামন্ততন্ত্র দ্বারা পরিবার প্রভাবিত হতো। এক্ষেত্রেও ছিল পুরুষ প্রাধান্য এবং পরিবারের ব্যাপকতা। একই সময় মুসলিম পরিবারের অবস্থা ছিল তার উল্টো। এ সময় মুসলমান পরিবারে নিজস্ব সম্পদের প্রতি মহিলাদের কর্তৃত্ব ছিল। শিল্প বিপ্লব পরিবারের গঠনে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। শিল্পায়ন ও নগরায়ন ভেঙে দেয় জমিদারি রাজত্ব এবং পরিবর্তন আনে জীবন ও কর্মক্ষেত্রে। বহু লোক বিশেষ করে তরুণরা ক্ষেত-খামার ছেড়ে শহরে কারখানায় কাজ নেয়। তখন বিশাল পরিবারে শুরু হয় বিচ্ছিন্নতা। ক্রমে পুরুষ প্রধান পরিবারের প্রবেশ করে মহিলাদের কর্তৃত্ব। সমতার সম-অধিকারের হাওয়া বইতে শুরু করে পরিবারে পরিবারে। মহিলা শুধু ঘরের কাজ ও ছেলেমেয়েদের দেখবে আর পুরুষ শুধু আয় করবে, এ চর্চার অবসান নেমে আসে ধীরে ধীরে। অনেক স্ত্রী ঘরের বাইরে আসে। যোগ দেয় নানা কাজে, পক্ষান্তরে বহু স্বামী অংশগ্রহণ করে ঘরের কাজে। পরিবারের গঠন,কর্মকাণ্ড,নেতৃত্বসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসব পরিবর্তনের ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বের সব জায়গায় এ পরিবর্তন দৃশ্যমান। এ পরিবর্তন এক এক অঞ্চলে এক এক রকম। তবে কিছু কিছু কমন ব্যাপারও রয়েছে। যেমন ক্ষুদ্র অনু পরিবার-পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘ স্থায়িত্ব পরিবারের মধ্যে সম্পর্কে ও মূল্যবোধে পরিবর্তন। হারিয়ে যাচ্ছে আনুষ্ঠানিক বিয়ে,বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ।
পারিবারিক বন্ধনঃ জরিপে দেখা গেছে,এসব পরিবারের এক-তৃতীয়াংশ এক পিতা-মাতাসম্পন্ন এবং মহিলা নেতৃত্বসম্পন্ন। সনাতন পদ্ধতির হয়ে নতুন টাইপের পরিবারের আবির্ভাব ঘটেছে। পাশ্চাত্যের আধুনিক সমাজে সবই অনু পরিবার পিতামাতা ও সন্তানের এক সঙ্গে বসবাস। এ ধরনের পরিবারই এখন সব জায়গায়। নাগরিক সমাজে এ ধরনের পরিবারের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। একক পিতামাতা এবং বহু বিয়েসম্পন্ন পরিবার-যুগলের একজনের মৃত্যু,তালাক,বিচ্ছেদ,একত্রে বসবাস না করার সিদ্ধান্তে অনু পরিবারের উদ্ভব। দুয়ের বেশি জেনারেশন, একাধিক যুগলের একত্রে বসবাসই একান্নবর্তী পরিবার। পুনর্গঠিত ও মাইগ্রেন্ট পরিবার বিয়ে,পুনঃবিয়ে অথবা একসঙ্গে বসবাসের কারণেই এরূপ পরিবার হয় যেখানে আগের সংসারের সন্তানরাও বসবাস করে। এভাবে পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় পরিবারের নতুন গঠন,জীবনযাত্রার মানে এসেছে পরিবর্তন যাতে পরিবার আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে। একই সঙ্গে পরিবারের প্রত্যেকের অধিকার ও সামাজিক দায়িত্ব যাতে বজায় থাকে সেক্ষেত্রেও চলছে সংগ্রাম। বিশ্ব সমাজের পরিবারের এরূপ পরিবর্তনের প্রতি জাতিসংঘ গভীর মনোযোগ অব্যাহত রাখছে। জাতিসংঘ চায় পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকা সমান হবে। সদস্যদের অধিকার হবে সমান, মর্যাদা হবে যথাযোগ্য। পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের আয়না। বিদ্যমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মানবাধিকার,জনসংখ্যা এবং মহিলাদের অগ্রগতি পরিবার দ্বারা প্রভাবিত। রাষ্ট্রের সামাজিক উন্নয়নের জন্য পরিবারের ভূমিকা,দায়িত্ব এবং অধিকার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিবার দিবস পালন করা প্রয়োজন। জাতিসংঘ মনে করে,মৌল মানবিক অধিকার,মানুষের মর্যাদা ও মূল্য এবং ছোট-বড় জাতি ও স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সমান অধিকার ও ব্যাপকতর স্বাধিকারের মাধ্যমে সামাজিক অগ্রগতি সাধন ও জীবন মান উন্নয়নের জন্য পরিবার হচ্ছে মৌলিক ভিত্তি,সমাজের সর্বনিম্ন ইউনিট,লক্ষ্য নির্ধারণের টার্গেট। একই সঙ্গে মা,বাবা,ভাই,বোন,সন্তান-সন্ততি নিয়ে বসবাস করছে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ। একজনের সুখে অন্যজন সুখী হচ্ছে, একজনের দুঃখে কাঁদছে অন্যজন। নিবিড় বন্ধন যেন গড়ে উঠেছে পরিবারের মধ্যে। একে অপরকে নানাভাবে সাহায্য করে। এরা অল্পতে খুশি থাকে। পরিবারের মধ্যে এই যে বন্ধন,এ বন্ধন আমাদের দেশে খুবই নিবিড়।
পরিবারের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যঃ প্রকৃত অর্থে, পরিবারের কোনো একক রূপ নেই। দেশ,কাল,সমাজ,ইতিহাস,সংস্কৃতি,ঐতিহ্য,কর্মপরিধি,দায়দায়িত্ব কিংবা আচার-আচরণভেদে পরিবারের রূপ ভিন্ন হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় এর কাঠামো ও আকার-আয়তন। আমরা পাই নিউক্লিয়ার বা একক এবং একান্নবর্তী বা যৌথ পরিবার। বিশ্বের সব জায়গায় এ পরিবর্তন দৃশ্যমান। পরিবারকে তাই নির্দিষ্ট করে সংজ্ঞায়িতও করা যায় না। বৈচিত্র্যই এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। তবে নির্দ্বিধায় বলা যায়,পরিবার সমাজের প্রাথমিক ভিত্তি। আর এক একটি পরিবার যেন অনেক অনেক হৃদয়ের সমষ্টি। জীবনের প্রবাহ শুরুই হয় এখানে। মা-বাবা,ভাই-বোন, সন্তান-সন্ততি নিয়ে আমাদের পরিবার। এখানে একজনের সুখ ছুঁয়ে যায় অন্যজনকে। একজনের দুখে দুখী হয় আরেকজন। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ,আবেগ ও সহনশীলতার আবহ থাকে পরিবারে। একে অন্যকে মেনে নেয়ার মানসিকতাও গড়ে ওঠে এখানে। সর্বোপরি স্নেহ-মায়া-মমতার বন্ধনস্থল আমাদের পরিবার। আমাদের দেশে এ বন্ধন খুব নিবিড়। গ্রাম আর শহরের চিত্র কিছুটা এদিক-ওদিক। তবে ভালোবাসার পরিমাণ দুই স্থানেই সমান।
পরিবারের গুরুত্বঃ পরিবারের গুরুত্ব পাশ্চাত্য সমাজ দেরীতে হলেও বুঝতে পেরেছে। আর তাই তারাও পালন করছে ‘পরিবার দিবস’, ‘মা দিবস,‘বাবা দিবস’ইতাদি। এ সকল দিবস পাশ্চাত্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে জানা যায়, সমাজের গণ্যমান্য চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ বাংলাদেশের বর্তমান পারিবারিক সমস্যা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে তাদের উদ্বেগ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন। বিবেকবান ব্যক্তিগণ সমাজের অবক্ষয় রোধে ‘পারিবারিক বন্ধন’ মজবুত করতে সমাজের নিকট আহবান জানিয়েছেন। পাশ্চাত্য সমাজ বস্তুবাদের রঙিন নেশায় বুঁদ হয়ে পরিবার প্রথাকে উপেক্ষা করেছে। ফলে আদর-স্নেহ, মায়া-মমতা বঞ্চিত বন্ধনহীন এসব শিশু-কিশোর যুবক-যুবতী তথা আপামর জনতা অবৈধ যৌনাচারসহ নানাবিধ অন্যায়-অপকর্মে জড়িয়ে পরেছে। কিছু দেশি-বিদেশি এনজিও ও সংস্থা পাশ্চাত্য অবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে ধর্ম ও পরিবার প্রথাকে ভেঙে দেয়ার জন্য গোপনে ও প্রকাশ্যে কাজ করে যাচ্ছে বহুদিন ধরে। ডিস,সিডি,ইন্টারনেট,মোবাইল,সাইবার-ক্যাফে ইত্যাদির মাধ্যমে পর্ণোছবি দেখা,ব্লাক মেইলিং বেড়ে গেছে। ইভটিজিং সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতদ্ব্যতীত অশালীন ড্রেস,ফ্যাশন,রূপচর্চা,ফ্রিমিক্সিং, যত্রতত্র আড্ডা,প্রেমালাপ,যৌনাচার,পরকীয়া,মাদক,সন্ত্রাসের সয়লাব সর্বত্র বইছে। এ সকল কাজে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। এ অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে পরিবারের সাথে বচসা,মনোমালিন্য,চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই,কিডন্যাপ,খুন-খারাবী কিছুই বাদ যাচ্ছে না। অভিজাত এলাকাগুলোর পিতা-মাতা, যুবক-যুবতী সন্তানদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ,তারা যেন সন্তানের নিকট এক ধরনের জিম্মি হয়ে আছেন। ঘরে ঘরে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। নিঃসন্দেহে পরিবারগুলোর অশান্তির প্রভাব সমাজে প্রতিফলিত হচ্ছে। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যেন পিতামাতার মতই অসহায়! আর্থিক-নৈতিক-সামাজিক ক্ষতির পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন সন্তান-গার্ডিয়ানসহ সংশ্লিষ্ট অনেকে। অপরদিকে যুব সমাজের কল্যাণময় অবদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ব্যক্তি,পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র! যে সকল যুবক-যুবতী উচ্ছৃক্মখল অনৈতিক জীবন যাপন করে,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সমাজে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে চলছে,খোঁজ নিলে দেখা যাবে,তাদের অধিকাংশের পরিবারই উদাসীন,সন্তানের প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করেন না। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ‘ধনী শ্রেণী’ ও ‘দরিদ্র বস্তিবাসী।’এদের মাঝে ধর্ম,সংস্কৃতির চর্চা,পারিবারিক বোঝাপড়া,পারস্পরিক দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ নেই বললেই চলে। ধনী শ্রেণী বৈধ-অবৈধ পন্থায় টাকা রোজগার এবং ভোগ বিলাসেই মত্ত থাকে বেশির ভাগ সময়। সন্তানের চাহিবামাত্র টাকা-পয়সা,কাপড়-চোপড়,দামি মোবাইল,গাড়ি ইত্যাদি কিনে দিয়েই খালাস। অন্ধস্নেহে সন্তানের কোন ভুলত্রুটি গার্ডিয়ানের চোখে ধরা পরে না। দরিদ্র শ্রেণীর তো ‘নূন আনতে পান্তা ফুরায়’ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অশিক্ষা-কুশিক্ষায় এদের সন্তানরা ব্যাঙের ছাতার মত বেড়ে ওঠে। এ সন্তান একটু বড় হলেই রোজগারে লাগিয়ে দেয়। ফলে এই শ্রেণীর সন্তানদের মাঝেই অপরাধ প্রবণতাও স্বাভাবিকভাবেই বেশি। অপরদিকে, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোই মোটামুটি সমাজের বিবেকবান বা সচেতন সমাজ বলা যায়। এসব পরিবারই এতদিন সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা ভারসাম্য ধরে রেখেছিলেন। এ সকল পরিবারের অভিভাবকগণ সন্তানদের লেখাপড়ার পাশাপাশি আদব-কায়দা,ভদ্রতা,শালীনতা,দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ নৈতিকতা ইত্যাদি অত্যন্ত আন্তরিকতা ও যত্নের সাথে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো,এ অংশেও এখন ফাটল ধরেছে, যা সত্যিই অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। পিতামাতা অভিভাবকগণ এসব ব্যাপারে আগের মত সিরিয়াস নন,তারাও অর্থের পিছনে ছুটছেন। সন্তানকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করাই একমাত্র বা প্রধান উদ্দেশ্য-লক্ষ্য, নীতি-নৈতিকতা গৌন হয়ে গেছে। সন্তানদের আগের মত সময় দেয়ার সময় নেই, সন্তানও যেন আগের মত কথা শুনছে না। তথাকথিত প্রগতি বা উন্নয়নের জোয়ারে যেন গা ভাসিয়ে দিয়েছে ছোট বড় সকলে। ফলে সমাজ ব্যবস্থা দ্রুত নষ্ট ও দূষিত হয়ে যাচ্ছে।
পরিবার এবং বাস্তবতাঃ বাস্তব প্রেক্ষাপটে, আমরা প্রত্যেকেই কারো না কারো উপর দায়িত্বশীল। স্ব স্ব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে সমাজে এত সমস্যা হওয়ার কথা নয়। একজন পুরুষ তার পরিবার-পরিজনের কর্তা। একজন স্ত্রী লোক সেও তার স্বামীর বাড়িঘর,পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্তুতির কর্ত্রী। অতএব প্রত্যেকেই কর্তা এবং প্রত্যেককেই সে সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। পরিবার বা ঘরই হল মানুষের প্রাথমিক বিদ্যালয় বা প্রকৃত শিক্ষালয়। এখানে যা শিখবে তাই সারাজীবন প্রতিফলিত হতে থাকবে। বর্তমান সমাজের বিশৃঙ্খলা,নৈতিক অধঃপতন রুখতে হলে পরিবারকে সচেতন হতে হবে,মজবুত বাঁধনে বাঁধতে হবে। স্বামী-স্ত্রী’র পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ় হতে হবে। এক্ষেত্রে গুরুজন এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সহযোগিতা,পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য শেখাতে হলে প্রথমে নিজেরাই স্ব স্ব পিতা-মাতার প্রতি সঠিক দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করে উদাহরণ সৃষ্টি বা হাতে কলমে শিখানো যেতে পারে। এতে উভয় পক্ষের লাভ।
পারিবারিক বন্ধন হোক দৃঢ়ঃ মা,বাবা,ভাই,বোন,সন্তান-সন্ততি নিয়ে বসবাস করছে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ। একজনের সুখে অন্যজন সুখী হচ্ছে,একজনের দুঃখে কাঁদছে অন্যজন। নিবিড় বন্ধন যেন গড়ে উঠেছে পরিবারের মধ্যে। একে অপরকে নানাভাবে সাহায্য করে। এরা অল্পতে খুশি থাকে। পরিবারের মধ্যে এই যে বন্ধন,এ বন্ধন আমাদের দেশে খুবই নিবিড়।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ প্রধান সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।।