জল্লাদ আমাকে টেনে নিয়ে যাবে গিলোটিনে! (খালেদ হোসাইন)
///জল্লাদ আমাকে টেনে নিয়ে যাবে গিলোটিনে///
~~~খালেদ হোসাইন~~~
_______________________________________________________________________
মহাসড়ক ছেড়ে গলিতে ঢুকেও দেখেছি বড় বড় গাড়িগুলো সেখানে ঢুকে পড়ে। যেন জীবাত্মা মিলিত হওয়ার জন্য উন্মাদ হয়ে উঠেছে তার পরমাত্মার সঙ্গে। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়, আমার ইচ্ছে নয়, তবু তাদের আমি অধিকার করি। তারা আমার সঙ্গে মিশে যায়। আর হাইওয়ে থেকে অপহৃত মাল-সামানসহ ট্রাক বা কাভারড ভ্যান উদ্ধারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা বিভাগ। একবার আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম জলার ধারে, দূর থেকে একটা আন্তঃনগর ট্রেন ধেয়ে এসে ঢুকে গেল আমার বুকের ভেতর। অনেক যাত্রী ছিল তাতে, আমার শুধু মনে হলো, ‘থাক, এদের খাদ্য-বস্ত্রের অভাব অন্তত হবে না।’
>>>
আসলে আমি চাই একটা নিরিবিলি জীবন। মাথার ওপরে একটা আকাশ, যৎ-সামান্য মেঘের সঞ্চার, চারপাশে ছড়ানো-ছিটানো প্রকৃতি। রঙবেরঙের কয়েকটা পাখি, প্রজাপতি, ফড়িং আর গুবরেপোকা। জলাশয়ে হিল্লোল। আমি চাই ফসলের জমি থেকে ফিরে আসা উদাসীন কয়েকটা মানুষ। দিগন্তের দিকে ছুটে যাওয়া কিছু ছেলেমেয়ে।
>>>
এক জোছনারাতে আমি হাঁটছিলাম ফাঁকা একটা মাঠে। সমুদ্র থেকে উঠে আসা বাতাসে কীসের একটা লোনা গন্ধ- আমি ভাবছিলাম। এই অপরাধে পুলিশ আমাকে হুইসিল বাজিয়ে হাতকড়া পরিয়ে হাজতে ভরলো, চালান করে দিলো কোর্টে, মহামান্য আদালত আমাকে জামিনও দিলেন না। জেব্রার মতো জামা চড়িয়ে পুরে দিলেন জেলখানার ভেতর। আসলে সেটা ছিল এক অরণ্য। কচি ঘাসপাতার গন্ধে আমার চোখ বুজে এলো। বাঘ-ভালুক আর বুনোফুলের গন্ধ আমাকে নেশাগ্রস্ত করে ফেললো। হয়তো আমি ঘুমিয়ে পড়লাম, নয়তো জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতে থাকলাম। আর এই দীক্ষা আমি লাভ করলাম যে, বন্দি কখনোই সর্বার্থে রুদ্ধ নয়। আমার চঞ্চল চিত্ত ঘুরে বেড়াতে থাকলো কাল থেকে কালে, পাতা থেকে ডালে, ডালপালা থেকে পুষ্পের সৌরভে। ঢেঁকি যেমন স্বর্গে গেলেও ধান ভানে, আমিও তেমন স্বপ্নে গেলে অপরাধ করে ফেলি, মাননীয় আদালত।
>>>
মর্মান্তিক আদালত, ওই তো কালো পোশাক-পরা জল্লাদ আসছে। আমাকে টানতে টানতে নিয়ে যাবে গিলোটিনে।
_______________________________________________________________________