সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক ৭টি প্রতিষ্ঠানের যৌথ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, সড়ক দূর্ঘটনায় যারা মারা যাচ্ছেন তার প্রায় অর্ধেক পথচারী। আইন অমান্য করে চালকদের বেপরোয়া গতিতে যান চালানোর পাশাপাশি পথচারীদের অসতর্কতাও দায়ী। তাছাড়া পথচারীবান্ধব প্রশস্ত ও সমান্তরাল ফুটপাথ এর অভাব, ফুটপাথে যানবাহনের অবৈধ পার্কিং, পর্যাপ্ত জেব্রা ক্রসিং-এর অভাবও পথচারীদের দূর্ঘটনায় নিহত বা আহত হবার জন্য দায়ী। এজন্য যথাযথ আইন প্রণয়ন ও পালন, অবকাঠামো তৈরি এবং সচেতনতার মাধ্যমে হাঁটার জন্য সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে আমরা সক্রিয় রয়েছি।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি), গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি), হেলথ্ব্রিজ-কানাডা এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট কর্তৃক Improving the pedestrian environment in Dhaka: steps forward বিষয়ক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ বক্তব্য রাখেন। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এর প্রধান প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুর রহমান, গাজীপুর সিটি করপোরেশন এর প্রশাসক অতিরিক্ত সচিব শাহ কামাল, হেলথব্রিজ-কানাডা’র আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরমসন, এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ডেভিড মার্গনস্টের্ন। সভা সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম সুজন। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি আরও বলেন, বিশ্বের সকল উন্নত শহরেই যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে হাঁটাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। আমরাও সেদিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে এডিবি গাজীপুর থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) করিডোরে হাঁটা, সাইকেল ও রিকশায় চলাচলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলার চিন্তা খুবই আধুনিক এবং বিজ্ঞানসম্মত। এতে করে যারা বিআরটি ব্যবহার করবে তাদের বাস স্ট্যান্ডে আসা এবং বাসস্ট্যান্ডে নেমে গন্তব্যে যাওয়ার পথ সুগম হবে। যারা কোন যানবাহন ব্যবহার না করে শুধু পায়ে হেঁটে যাতায়াত করেন তারাও এ থেকে সুবিধা পাবেন।
দেবরা ইফরমসন বলেন, যে শহরে মানুষ নিরাপদে, নির্বিঘেœ, স্বাচ্ছন্দে হাঁটতে পারে না, সেটা আধুনিক শহর হিসাবে বিবেচিত হয় না। মানুষের মধ্যে ডায়বেটিস, হৃদরোগসহ নানারকম অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া দূষণ, জ্বালানি ব্যয়, দূর্ঘটনা, যাতায়াত ব্যয়ও গাণিতিক হারে বাড়ছে। এসব মোকাবেলায় পথচারীদের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করে শহরের যাতায়াত পরিকল্পনা গড়ে তোলা দরকার। ডেভিড মার্গনস্টের্ন বলেন, এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক গাজীপুর থেকে ঢাকার বিমানবন্দর পর্যন্ত শুধু বাসের জন্য আলাদা লেন (বাস রেপিড ট্রানজিট-বিআরটি) গড়ে তোলার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। এতে প্রতিদিন ১ লক্ষাধিক মানুষ সহজে যাতায়াত করতে পারবে। যা নগরে যাতায়াত সঙ্কট কিছুটা কমিয়ে আনবে। এছাড়া এ বিশেষ বাস লেনের সুবিধা যেন পথচারীরা পায়, সেজন্য পথচারীবান্ধব পরিবেশও গড়ে তোলা হবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন-এর প্রশাসক শাহ কামাল বলেন, গাজীপুর নতুন সিটি করপোরেশন। কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে সর্ববৃহৎ। গাজীপুরে হাঁটার পরিবেশ ভাল নয়। আগামী দিনে হাঁটার জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে সিটি করপোরেশন কাজ করবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুর রহমান বলেন, হাঁটাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে এলজিইডি ভূমিকা রাখবে। এডিবি’র চলমান বিআরটি’র সঙ্গেও আমরা যুক্ত। তাই আগামী দিনে শহরগুলোতে পথচারীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে আমরা কাজ করব।
সভাপতির বক্তব্যে সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মানুষ যতক্ষণ সুস্থ্য থাকে ততক্ষণই হাঁটে। এছাড়া শারীরিকভাবে অনেকে চলতে পারে না, তাদের জন্য ফুটপাতগুলোতে চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে বেলা ১.৩০ মিনিট পর্যন্ত কারিগরি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. সারওয়ার জাহান। এতে ঢাকার পথচারীদের সমস্যা ও সমাধাণে করণীয় এবং পথচারীবান্ধব মডেল হিসাবে শাহজালাল এভিনিউ (উত্তরা) বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দেবরা ইফরমসন, সাইকেল ও রিকশনাসহ অযান্ত্রিক যানের আধুনিকতা ও প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এডিবি’র উর্ধ্বতন যাতায়াত বিশেষজ্ঞ লয়েড রাইট, বাইসাইকেল পরিচালনা বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এডিবি’র অযান্ত্রিক যান বিশেষজ্ঞ ব্রাডলে শ্ররোয়েডর। এতে ঢাকা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, ঢাকা’র উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, রাজউক, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএসহ বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।