স্বাধীনতা এবং সরকারের নিজের পায়ে কুড়াল মারার গল্প

স্বাধীনতা এবং সরকারের নিজের পায়ে কুড়াল মারার গল্প

মোমিন মেহেদীঃ

স্বাধীনতা, উলঙ্গ কিশোর। এমন একটি কাব্য পতাকা  নির্মলেন্দু গুণ তুলে ধরেছেন স্বাধীনতার জন্য। যেখানে তিনি যুদ্ধময় জীবনের স্মৃতি এঁকে তুলে ধরেছেন,  জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উল্ঙ্গ শিশুর মত বেরিয়ে এসেছো পথে, /স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবী হও। /তোমার পরমায়ু বৃদ্ধি পাক আমার অসিত্মত্বে, স্বপ্নে,/ প্রাত্যহিক বাহুর পেশীতে,/ জীবনের রাজপথে, মিছিলে মিছিলে; তুমি বেঁচে থাকো,/ তুমি দীর্ঘজীবী হও।/ তোমার হা-করা মুখে প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাসত্ম অবধি হরতাল ছিল একদিন, ছিল ধর্মঘট, /ছিলো কারখানার ধুলো। তুমি বেঁচেছিলে মানুষের কলকোলাহলে, /জননীর নাভিমূলে ক্ষতচিহ্ন রেখে যে তুমি উল্ঙ্গ শিশু রাজপথে বেরিয়ে এসেছো, সে-ই তুমি আর কতদিন /‘স্বাধীনতা, স্বাধীনতা’ বলে ঘুরবে উলঙ্গ হয়ে পথে পথে সম্রাটের মতো?/ জননীর নাভিমূল থেকে ক্ষতচিহ্ন মুছে দিয়ে উদ্ধত হাতের মুঠোয় নেচে ওঠা,/ বেঁচে থাকা হে আমার দূঃখ, স্বাধীনতা, তুমিও পোশাক পরো; ক্ষামত্ম করো উলঙ্গ ভ্রমণ, নয়তো আমারো শরীরি থেকে ছিঁড়ে ফেলো স্বাধীনতা নামের পতাকা। /বলো উলঙ্গতা স্বাধীনতা নয়, বলো দূঃখ কোনো স্বাধীনতা নয়, বলো ক্ষুধা কোন স্বাধীনতা নয়, বলো ঘৃণা কোন স্বাধীনতা নয়। /জননীর নাভিমূল ছিন্ন-করা রক্তজ কিশোর তুমি স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবী হও। /তুমি বেঁচে থাকো আমার অসিত্মত্বে, স্বপ্নে, প্রেমে,বল পেন্সিলের যথেচ্ছ অক্ষরে, শব্দে, যৌবনে, কবিতায়…

এত ভালোবাসা যে স্বাধীনতার জন্য, যে স্বাধীনতার জন্য এত যুদ্ধ, এত ত্যাগ; সেই স্বাধীনতার মাসে স্বাধীনতার চেতনাকে পায়ে দলে এগিয়ে চলেছে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক গোষ্ঠি ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। তারা এই স্বাধীনতার মাসেই দুঃসাহসের পসরা সাজাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী সমর্থক গোষ্ঠি বৃদ্ধির লÿÿ্য প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত শিশু-কিশোর সংগঠন ফুলকুঁড়ি প্রকাশ করেছে ‘ফুলকুঁড়ি’ নামক মাসিক পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা। যেখানে স্বাধীনতার বিপÿÿ একাধিক লেখা রয়েছে। সরাসরি স্বাধীনতার চেতনায় আঘাত করেছেন, ‘ফলকুঁড়ি’র সম্পাদক জয়নুল আবেদীন আজাদ। শুধু এখানে্ শেষ নয় জামায়াত-শিবির আর যুদ্ধাপরাধীদের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামে ও নয়াদিগমেত্ম স্বাধীনতার এই পুরো মাসে বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছে স্বাধীনতার বিপÿÿ। আর সবচেয়ে যে অন্যায়টি তারা বারবার করছে, তা হলো-সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তারা তাদের এই পত্রিকা দু’টিতে কোন রকম সম্মান প্রদশর্ন না করেই বিভিন্ন লেখা ও সংবাদ প্রকাশ করছে। এমতবস্থায় প্রয়োজন স্বাধনীনতার মাসেই সত্মব্ধ করে দেয়া এই অন্ধকারময় পত্রিকা দু’টির কর্মকান্ড। পাশাপাশি ‘নতুন কিশোর কন্ঠ’ ও ছাত্র সংবাদ নামে ছাত্রশবিরের আরো দু’টি মুখপত্র বন্ধ করাও এখন স্বাধীনতার দাবি।  কেননা, এই দু’টি পত্রিকা দিনের পর দিন আমাদেও স্বাধীনতার চেতনাকে ভুলুন্ঠিত করছে। ধুলিস্যাৎ করার চেষ্টা করছে স্বাধীনতার রঙধনুময় স্বপ্নগুলোকে। কবি শামসুর রাহমানের স্বাধীনতা তুমি কবিতার মত করে আমাদেরকে উচ্চারণ করতে হবে সাহসকথা। বলতে হবে, স্বাধীনতা তুমি রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।/ স্বাধীনতা তুমি  কাজী নজরম্নল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো/ মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উলস্নাসে কাঁপা-/ স্বাধীনতা তুমি শহীদ মিনারে অমর একুশে  ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা/ স্বাধীনতা তুমি পতাকা-শোভিত  শেস্নাগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।/ স্বাধীনতা তুমি ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।/ স্বাধীনতা তুমি  রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।/ স্বাধীনতা তুমি মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।/ স্বাধীনতা তুমি অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।/ স্বাধীনতা তুমি বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর/ শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ…

সতেজ এই ভাষণের মত করে গড়ে উঠুক আমাদের বাংলাদেশ। যেখানে যুদ্ধময় জীবন জেগে উঠবে ভালোবাসার রঙধনুতে। মানুষ মনের সাথে সখ্যতা গড়ে এগিয়ে যাবে জীবনের যুদ্ধে। এই যুদ্ধ আমাদেরকে উপহার দেবে বাংলাদেশের রঙিন পরিবেশ। প্রত্যয়ে পথ চলায় থাকবে বাঙালি জাতির প্রেরণা- চেতনা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঠিক সম্মান-শ্রদ্ধা। আর এই পরিস্থিতি তৈরী করতে হলে অবশ্যই তথাকথিত শিশু-কিশোর পত্রিকা ফুলকুঁড়ি, নতুন কিশোর কন্ঠ, ছাত্র সংবাদ,  দৈনিক সংগ্রাম, নয়াদিগমত্মসহ সকল যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সমর্থক গোষ্ঠির পত্রিকা নিষিদ্ধ করতে হবে। স্বাধীনতার এই মাসে যে কথাটি না বললেই নয়; তা হলো- সমাজের সত্য কথা লেখার অপরাধে কবি ও কথাশিল্পী তসলিমা নাসরিনের বই যদি নিষদ্ধ করতে পারে বিএনপি-জামায়াত-জঙ্গী সরকার। তাহলে স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী এই সরকার কেন বন্ধ করতে পারবে তথাকথিত ঐ পত্রিকাগুলো? সরকার এই সময়ে যদি এই পত্রিকাগুলো বন্ধ না করে, তাহলে তা হবে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা গল্পের মতই। যাইহোক, স্বাধীনতার সূর্যদিন মানেই ২৬ মার্চ। একাত্তরের ২৫ মার্চ ছিল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বর্বর তারিখ। এই দিনে পাক হায়েনারা ঝাপিয়ে পড়েছিল নিরহ বাঙালির উপর। আর তাই ২৬ মার্চ শুরম্ন হয়েছিল সারাদেশে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধযাত্রা। যে কারণে ২৬ মার্চে এ দিনটি ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। বর্বর পাকিসত্মানের বিরম্নদ্ধে দীর্ঘ নয় মাসের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম হয়। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। কিন্তু আয়তনের হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে ৯৩তম, ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪র্থ। বাংলাদেশের ওয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলে ২০০৬ সালে প্রাপ্ত পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুযায়ী বাংলাদেশ অঞ্চলে জনবসতি গড়ে উঠেছিলো প্রায় ৪ হাজার বছর আগে।  সেই বাংলাদেশে স্বাধীনতার চেতনা- প্রেরণা বয়ে চলুক প্রাণের প্রত্যয়ে। আর কালো পত্রিকা, কালো মানুষ মানেই যখন যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সমর্থক গোষ্ঠি; তখন সত্যের আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে যাক, ধ্বংশ হয়ে যাক যত হায়েনা সম চেষ্টা…

মোমিন মেহেদী : কলাম লেখক ও রাজনীতিক, email:mominmahadi@gmail.com

ফিচার সম্পাদক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।