সকল প্রাণের মাঝে ছড়িয়ে থাকুক ভালোবাসার ব্যাপ্তি

সকল প্রাণের মাঝে ছড়িয়ে থাকুক ভালোবাসার ব্যাপ্তি

সৌরভ চৌধুরী,এসবিডি নিউজ২৪ ডট কমঃ প্রাচীন সূর্য আজ প্রভাতেও দশদিগন্তে সোনাঝরা আলোর নাচন তুলবে প্রতিদিনের মতোই। হৃদয়বনে ছড়িয়ে দেবে চঞ্চলা-গুঞ্জরণ। মনে লাগবে দোলা। ভালোবাসার রঙে রাঙাবে হৃদয়। এই দিন স্বপ্নের দিন। এই দিন স্বপ্নরঙিন। আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসার দিন।
প্রেমপিয়াসী যুগলরা বছরের এই একটি দিনকে বেছে নিয়েছে হৃদয়ের ব্যাকুল কথার কলি ফোটাতে। আজ হৃদয় গহনে তারাপুঞ্জের মতো ফুটবে চন্ডী দাসের সেই অনাদিকালের সুর ‘দুঁহু তার দুঁহু কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া/অর্ধতিল না দেখিলে যায় যে মরিয়া/সখি কেমনে বাঁধিব হিয়া…’। কারো কারো এদিন কাটবে ‘সখি ভালোবাসা কারে কয়’… আকুতি নিয়ে। আর প্রেমিক-প্রেমিকার প্রাণে এক অলৌকিক শিহরণ যূথবদ্ধ দ্যোতনা তুলবে : ‘মৃত্যুর মুখে দাঁড়ায়ে জানিব তুমি আছ আমি আছি’।
আজ বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতায়, নিভৃত চারণে আর ভালোবাসার উৎসবে মুখর হবে জনপদ। এ দিনে চকোলেট, পারফিউম, কার্ড, ই-মেইল, মুঠো ফোনের এসএমএস, ফেসবুকে প্রেমবার্তা-গিফট, আংটি, প্রিয় পোশাক, খেলনা মার্জার, বই অথবা বুকের ভেতর থাকে যে গোলাপের ইশারা, সেই রক্তগোলাপ হয়ে ওঠে প্রথম অনুষঙ্গ। নীল খামে হালকা লিপস্টিকের দাগ, একটা গোলাপ ফুল, চকোলেট ক্যান্ডি আর ছোট্ট চিরকুট। তাতে দুছত্র গদ্য অথবা পদ্যে প্রেমের উর্মি। ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালনের এই রীতিটি মূলত পশ্চিমা ঘরানার। আমাদের দেশে বিগত কয়েক বছর ধরে এ দিবস পালন করছে তরুণ-তরুণীরা। অনেকে মনে করেন সনাতন ধর্মাচারীগণ দোল যাত্রা, বাসন্তী পূজা, হোলি উৎসবে প্রণয়কে মুখ্য করে রেখেছিল। প্রচারণা দাক্ষিণ্যে আমাদের বসন্ত উৎসবকে পাশ্চাত্য ভ্যালেন্টাইন্স ডের মোড়কে অধিকার করে নিয়েছে। পাশ্চাত্যে সেই খ্রিস্ট্রীয় ষোড়শ শতাব্দী থেকেই ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদযাপিত হয়ে আসছে। হালে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এটা উৎসবের রূপ পাচ্ছে। বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে এনেছি একশ’ ৮টি নীলপদ্ম কিংবা তোমার জন্য আনতে পারি ৭টি অমরাবতী। প্রেমিকের জন্য এই অসাধ্য আকুলতার পেছনের গল্পটি শুরু হয়েছিল সেই ২৬৯ খ্রিস্টাব্দে। প্রধান যে কাহিনীটি প্রচলিত আছে তা হল, রোমান একজন খ্রিস্টান পাদ্রি বা সেন্টের কাহিনী অনুসারে। তার নাম সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। তিনি ছিলেন একজন পাদ্রি এবং একই সঙ্গে চিকিৎসক। কিন্তু সে সময় রোমানদের দেব-দেবী পূজার বিষয়টি ছিল মুখ্য। তারা খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী ছিল না। খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের অভিযোগে ২৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের আদেশে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
রোমের চিকিৎসক তরুণ যাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের চিকিৎসায় দৃষ্টি ফিরে পেয়েছিল নগর জেলারের দুহিতা। সেই থেকে জন্ম নিয়েছিল তাদের ভালোবাসার অমরগাথা। ভালোবাসার অপরাধে তাকে ফাঁসিতে ঝুলতে হয় ফেব্রুয়ারির এই ১৪ তারিখে। মৃত্যুর আগে প্রেমিকার উদ্দেশে ভ্যালেন্টাইন লিখে যায় তার শেষ চিঠি। হৃদয়ের সবটুকু কথা শেষে লেখা থাকে ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’। অতঃপর এই ভালোবাসাকে স্বীকৃতি পেতে দুই শতাব্দী নীরবে-নিভৃতে পালন করতে হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে। ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে রোমের রাজা পপ জেলুসিয়াস এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন্স দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। আরো একজন ভ্যালেন্টাইনের নাম পাওয়া যায় ইতিহাসে। যুবকদের বিয়ে করতে রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তার যে উদ্দেশ্য ছিল তা হল, যুদ্ধের জন্য ভালো সৈন্য মিলবে না। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন এই নিয়ম ভেঙে প্রেম করেন। তারপর আইন ভেঙে বিয়ে করেন। ফলে তার মৃত্যুদন্ড হয়। আমাদের দেশে এদিন কেবল প্রেম বিনিময় নয়, তরুণ-তরুণীদের মধ্যে গোপনে বিয়ের হিড়িক পড়ে। রাজধানীর উদ্যানমালা, বইমেলা, ক্যাম্পাস, কফিশপ, ফাস্টফুড শপ, ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর, লং ড্রাইভ অথবা নির্জন গৃহকোণে একান্তে নিভৃতে কাটান প্রণয়কাতর তরুণ-তরুণীরা। ১৪ ফেব্রুয়ারি কেবল যে তরুণ-তরুণীদের তা নয়, এদিনে পিতা-মাতা-সন্তানের ভালোবাসাও এ দিবসকে বড়মাত্রায় উদ্ভাসিত করে। যারা একটু বিজ্ঞ, তারা বলে থাকেন : ‘প্রেমের দিন থাকে না, ভালোবাসলেই ভ্যালেন্টাইন্স, সেলিব্রেট করলেই ভালেন্টাইন্স ডে’।
আজ ভালোবাসা দিবসে চারদিকে নানা আয়োজনের ছড়াছড়ি। ইতিমধ্যেই গুচ্ছ গুচ্ছ অফার ঘোষণা দিয়েছে অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বইমেলা, ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর, পাঁচতারকা হোটেল ছাড়াও স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে বর্ণাঢ্য আয়োজন থাকছে।

 

Admin

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।