আবহাওয়ার ঊষ্ণতার সাথে সমান্তরালে সারাদেশে বাড়ছে লোডশেডিং
প্রধান প্রতিবেদক,এসবিডি নিউজ 24 ডট কমঃ
শীত না কাটতেই লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল। গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে দক্ষিণ পশ্চিমের ২১ জেলার শহরাঞ্চলে দিনে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ বার লোডশেডিং করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। পল্লী ও মফস্বল অঞ্চলে তা ৪ থেকে ৫ বার বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। চলতি সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ সংকট আরো প্রকট হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগবিহীন এ অঞ্চলের বিদ্যুৎ নির্ভর শিল্প কল কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিঘ্নিত হচ্ছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনা। বিদ্যুৎ বিভাগ দাবি করেছে, উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা অনেক বেশি হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে নিয়মিত লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তাছাড়া সেচ মৌসুম শুরু হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। এদিকে দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি হলেও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় ক্রমশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে এ অঞ্চলের মানুষ।
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় বিদ্যুৎ বিপণন ও বিতরণের দায়িত্ব নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির আওতাভুক্ত জেলাগুলোতে বর্তমানে প্রতিদিন মোট বিদ্যুৎ চাহিদা সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট। কখনো কখনো তা বেড়ে যাচ্ছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে এ চাহিদা প্রায় ৮০০ মেগাওয়াটে পেঁৗছায়। তখন বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকে
প্রায় আড়াইশ মেগাওয়াট। এ মুহূর্তে চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন পিক আওয়ারে ৬০-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকছে। ফলে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সেচ মৌসুমে কৃষকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে শহরাঞ্চলে লোডশেডিং বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হলে কিছুটা হলেও সংকট উত্তরণ সম্ভব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল ২১ জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল পিকআওয়ারে ৪৯৫ দশমিক ৫ মেগাওয়াট। সরবরাহ ছিল ৪৪৩ দশমিক ৮ মেগাওয়াট। লোডশেডিং ছিল ৫১ দশমিক ৭ মেগাওয়াট। এ মাসের শুরুতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৭২০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৫৬৫ মেগাওয়াট। এ হিসাবে লোডশেডিং ছিল ১৫৫ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদন বিষয়ে ওজোপাডিকো সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন এ অঞ্চলের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে গড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬২০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে খুলনা রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট ৪০ মেগাওয়াট, খুলনা কুইক রেন্টাল ৫২ মেগাওয়াট, কেপিসিএল-১ ১১৪ মেগাওয়াট, কেপিসিএল-২ ১১৭ মেগাওয়াট, নওয়াপাড়া-১ ২২ মেগাওয়াট, নওয়াপাড়া-২ ৪১ মেগাওয়াট, ভেড়ামারা-১ ১৬ মেগাওয়াট, ভেড়ামারা-২ ১৪ মেগাওয়াট, ভেড়ামারা-৩ ১৬ মেগাওয়াট, ভেড়ামারা রেন্টাল ৬৭ মেগাওয়াট, বরিশাল-১ ও ২ ৩১ মেগাওয়াট, ফরিদপুর রেন্টাল ১৬ মেগাওয়াট, গোপালগঞ্জ পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট ৭১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। খুলনার ১১০ ও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দুটি বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বহুদিনের পুরাতন হওয়ায় ক্ষমতার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। জাতীয় গ্রিড থেকেও প্রায়শ পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।
বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাগেরহাটের রামপালে প্রস্তাবিত ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০১৫ সালের আগে উৎপাদনে যেতে পারবে না। খুলনার ১১০ ও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটির মেয়াদ বহু আগেই উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কেন্দ্রগুলো সংস্কার করে পুনরায় চালানো হলেও তা বেশিদিন ঠিক থাকছে না। কোনো না কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়ে দিনের পর দিন আবার এগুলো বন্ধ থাকছে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে খুলনায় ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কথা বলা হলেও সরকার পরিবর্তনের পর এ প্রস্তাবনাটি ফাইলবন্দি হয়ে রয়েছে। আপাতত আর কোনো নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনা খুলনায় নেই।
এদিকে শীত কাটতে না কাটতেই বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে মানুষ। চলমান এসএসসি ও আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। গ্যাস সংযোগবিহীন এ অঞ্চলের শিল্প কলকারখানাগুলো সবই মূলত বিদ্যুৎ নির্ভর। তাই বিদ্যুতের ঘাটতি শিল্প উৎপাদন ব্যাহত করছে। এমনিতেই জ্বালানি তেলের দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধিতে এ অঞ্চলের হাজার হাজার ক্ষুদ্র মাঝারী ও বৃহৎ শিল্প লোকসানের মুখে রয়েছে। এ অবস্থায় লোডশেডিং লোকসানের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। রাতে লোডশেডিং হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপ ও অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে লোডশেডিং বৃদ্ধি পেলে জন দুর্ভোগ আরো বাড়বে। দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে কিন্তু গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ সেভাবে বাড়েনি। এ কারণে সাধারণ মানুষ ক্রমশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। সরকারি পর্যায়ে বারবার বিদ্যুতের উৎপাদন অনেক বেড়েছে বলা হলেও কার্যক্ষেত্রে তার খুব একটা প্রতিফলন।