সাংবাদিক দম্পতি খুনঃ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে ধূম্রজাল।। ২২ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে সাংবাদিকদের প্রতিবাদ সমাবেশ
বিশেষ প্রতিবেদক,এসবিডি নিউজ 24 ডট কমঃ
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ২২ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে সাংবাদিক সংগঠনগুলো বলেছে, এর আগেই দাবি পূরণ না হলে ‘চূড়ান্ত কর্মসূচি’ ঘোষণা করা হবে।
এর আগে বেঁধে দেয়া ৭২ ঘণ্টা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও সাগর-রুনির খুনি গ্রেপ্তার না হওয়ায় শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে যৌথসভায় বসে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সরকার ও বিরোধীদলপন্থী দুটি অংশ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।
সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রহুল আমিন গাজী বলেন, সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা নিশ্চিত করার দাবিতে ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে সাংবাদিকরা।
ওইদিন সারা দেশে প্রেসক্লাবসহ সাংবাদিকদের সব সংগঠন একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে।
“২২ ফেব্রুয়ারির আগে সাগর-রুনির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে ওই দিন চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে”, বলেন রহুল আমিন গাজী।
উল্লেখ্য, গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ থাকলেও পুলিশ তা পারেনি। আঙুলের ছাপের প্রতিবেদনে পুলিশ বলেছে, তারা যে আলামত পেয়েছে তা অস্পষ্ট। ফলে এ পর্যন্ত তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতির তথ্যও পুলিশ দিতে পারেনি।
খোদ প্রধানমন্ত্রী এ মামলার বিষয়টি তদারকি করছেন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছেন, এ মামলা ‘ধামাচাপা’ পড়ার কোনো কারণ নেই।
সাংবাদিকদের যৌথসভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে রহুল আমিন বলেন, “আজকের দিনটি ঐতিহাসিক, কোনো ধরনের মতভেদ ছাড়াই সাগর-রুনির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আমরা ঐকবদ্ধ হয়েছি। এই ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। আশাকরি এতে আর কেউ ভাঙন ধরাতে পারবে না।” প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও সাগর-রুনির খুনিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
বিএফইউজের একাংশের এ সভাপতি অভিযোগ করেন, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলের বিভিন্ন কর্তা ব্যক্তি এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বক্তব্যে তদন্ত নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তদন্তে যতো বিলম্ব হবে সাংবাদিক সমাজের উদ্বেগ ও ক্ষোভ ততো বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এতে জনগণের মাঝেও সন্দেহ-সংশয় বাড়বে। তাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।”
বিগত বছরগুলোতে সাংবাদিকরা হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনাগুলোরও সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
বিএফইউজের অপর অংশের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “সাংবাদিকদের মধ্যে বিভিন্ন বিভেদ থাকতে পারে। তবে তিনটি প্রশ্নে কোনো বিভেদ নেই, সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার, সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ এবং নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে কাজ করার অধিকার।”
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নিয়ে ‘ধূম্রজাল’ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দ্রুত এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের সনাক্ত করে তাদের বিচার করতে হবে।”
অন্যদের মধ্যে বিএফইউজের দুই অংশের মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া ও শওকত মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি ওমর ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ, অপর অংশের সভাপতি আবদুস শহিদ ও সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু প্রেস বিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।