বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং অমর একুশ
এসবিডি নিউজ 24 ডট কম,ডেক্সঃ
মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারী) অমর একুশ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পরম শ্রদ্ধায় বিশ্ববাসী পালন করবেন এই দিনটি। ১৯৫২ সালের এই দিনে সারাদেশে বিরাজ করছিল টান টান উত্তেজনা। ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তান মুসলিম লীগের সম্মেলন উপলক্ষে পল্টন ময়দানে আয়োজিত জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন ঘোষণা করলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা। তখন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র-জনতা নাজিম উদ্দিনের এ ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন। প্রাদেশিক পরিষদের বাজেট অধিবেশনকে সামনে রেখে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ভাষা দিবস ঘোষণা করে সারাদেশে সর্বাত্মক হরতাল ডাকা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি বিকালে মাইকে পূর্ব পাকিস্তান সরকার ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা করে। ১৪৪ ধারা জারি করার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রসমাজ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। সেদিন ছাত্রদের আন্দোলনের প্রস্তুতির তীব্রতা ও অনমনীয়ভাব দেখে সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে সমাবেশ ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করে দেয়।
সরকারি এক নির্দেশে বলা হয়, ‘ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করে এক মাসের জন্য ঢাকা শহরে সভা, শোভাযাত্রা প্রভৃতি নিষিদ্ধ করেছেন।’
তবে এসব ভয়-ভীতিতেও দমানো যায়নি ছাত্রদের। সরকারের ১৪৪ ধারা প্রবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে ২১-এর কর্মসূচি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর সর্বদলীয় রাষ্ট্র রভাষা সংগ্রাম কর্মপরিষদের যে বৈঠক হয় সেখানে ১১-৪ ভোটে ১৪৪ ধারা না ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়। তবে ছাত্ররা বিশেষ করে অলি আহাদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ এর বিরোধিতা করে। অলি আহাদ বলেছিলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। আগামীকাল (২১ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় যে ছাত্র সভা হবে তাতে ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে যদি রায় হয় তবে আমরা ভাঙার পক্ষে।’ পরদিন অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসভায় রফিক, শফিক, সালাম, জব্বারের মতো যুবকদের বুকের তাজা রক্তের প্রতিবাদের যে প্রতিফলন ঘটেছিল, তা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসেই শুধু নয় বাঙালি জাতির পরবর্তীকাল ও বর্তমানেও বাংলাদেশের যে কোনো আন্দোলন সংগ্রামের জন্য প্রেরণাদায়ী ও গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রদের প্রবল প্রত্যাশার মুখে ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিকদের হিসাব-নিকাশের রাজনীতি উড়ে গিয়েছিল। অনেক দেরি হলেও রক্তের বিনিময়ে বাঙালি পেয়েছিল তার মুক্তির, গন্তব্যের দিশা।