মার্কিন ডলারের দর বৃদ্ধিঃ বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থির
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের দর বৃদ্ধি ও অস্থিরতা তৈরির ক্ষেত্রে ভূমিকা নেয়ার দায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এই চার ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় নির্বাহীকে কারণ দর্শাতে নির্দেশ দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পৃথক পরিদর্শন প্রতিবেদনে এই ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে বৈদেশিক মুদ্রার কেনাবেচায় নানা অনিয়মের তথ্য উদ্ঘাটিত হয়। যেমন: বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে বৈদেশিক মুদ্রা কিনলেও নিয়ম অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংককে তা জানানো হয়নি। আবার জানালেও অসত্য তথ্য দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। অন্যদিকে আমদানি বিলের জন্য ঘোষিত দরের চেয়ে বেশি দরে ডলার বিক্রি করেছে একাধিক ব্যাংক। একই সঙ্গে স্থানীয় বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ভিন্ন মুদ্রায় মার্কিন ডলারের মূল্যও (ক্রস কারেন্সি রেট) বেশি নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে ব্যাংকগুলো দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরিতে ভূমিকা নিয়েছে এবং তাতে বাজারে ডলারের দর বেড়েছে। সূত্রগুলো বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে হঠাৎ করে স্থানীয় বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ডলারের দর বৃদ্ধি ও অস্থিরতার বিষয়টি প্রশ্নের জন্ম দেয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার হিসাব হচ্ছে, বৈদেশিক বাণিজ্যে দেশের ঘাটতি থাকলেও প্রবাসী-আয় (রেমিট্যান্স) দিয়ে তার সমন্বয় হয়ে যায়। গত অক্টোবর মাসে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হলেও তা আবার উদ্বৃত্ত হয় পরের মাসেই। এ অবস্থায় গত জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় ভাগে এসে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পরিদর্শক দল পাঠায় বিভিন্ন ব্যাংকে। পরিদর্শক দল অনিয়ম উদ্ঘাটন করে।
প্রতিবেদন অনুসারে, প্রাইম ব্যাংক ১৭ থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন দিনে এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ব্রিটিশ পাউন্ড কিনলেও বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো প্রতিবেদনে তার তথ্য উল্লেখ করেনি। ব্যাংকটি ১৯ জানুয়ারি মার্কিন ডলারের বিসি সেলিং রেট প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ঘোষণা করে বিক্রি করেছে সর্বোচ্চ ৮৫ দশমিক ৯০ টাকায়। আবার ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি ডলারের বিসি সেলিং রেট ছিল ৮৫ দশমিক ১০ টাকা। কিন্তু এই দুই দিন আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তারাই আবার ভিন্ন মুদ্রা দিয়ে মার্কিন ডলার ক্রয় (ক্রস কারেন্সি ট্রেড) করে যথাক্রমে ৮৫ দশমিক ৫৩ ও ৮৫ দশমিক ৪৯ টাকা দরে।
প্রাইম ব্যাংকের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ হচ্ছে, ডিলিং রুমের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়ের দৈনন্দিন তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি। ১৭ থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এমন দৈনন্দিন তথ্য দেয়া হয়নি। প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এহসান খসরু অবশ্য দাবি করেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাঁদের কারণ দর্শাতে বলেনি। তিনি বলেন, বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে বৈদেশিক মুদ্রা কেনার তথ্য সময় ব্যবধানের কারণে এক দিন পর তাঁরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানান। বাংলাদেশ ব্যাংক তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল, কেন বৈদেশিক মুদ্রা কেনার দিনের তথ্য জানানো হয়নি। তার ব্যাখ্যা তাঁরা এভাবেই দিয়েছেন। বাকি বিষয়গুলো নিয়ে কোনো চিঠি আসেনি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ব্র্যাক ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, লন্ডনে অবস্থিত নিজস্ব এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ব্রিটিশ পাউন্ড কিনলেও তার দর বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনি। অন্যদিকে ২৩ জানুয়ারি ঘোষিত বিসি সেলিং রেট ৮৫ দশমিক শূন্য ৪ টাকা থাকলেও গুলশান শাখা একটি করপোরেট গ্রাহকের কাছ থেকে আমদানি বিল খুলতে মূল্য নিয়েছে ৮৫ দশমিক ৫০ টাকা। আবার ২৫ জানুয়ারি ডলারের বিসি সেলিং রেট ছিল ৮৫ দশমিক ২৯ টাকা। কিন্তু অপর একটি ব্যাংকের কাছে ভিন্ন মুদ্রায় ডলার বিক্রি করেছে ৮৫ দশমিক ৮২ টাকা দরে। একই দিন একটি বিদেশি ব্যাংকের গ্রাহক একটি বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে ডলারের মূল্য নেওয়া হয়েছে ৮৫ দশমিক ৫৫ টাকা। আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ১০ থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে যে দরে বৈদেশিক মুদ্রা কিনেছে তার চেয়ে কম দাম উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংককে তথ্য দিয়েছে। আবার অপর এক দিন বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় করা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংককে তা জানানো হয়নি। যোগাযোগ করা হলে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একরামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকব বলে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছি।’
সাউথইস্ট ব্যাংক ১৮ থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে যে দরে বৈদেশিক মুদ্রা কিনেছে, তার চেয়ে কম দাম উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংককে তথ্য দিয়েছে। ব্যাংকের এমডি মাহবুবুল আলম বলেন, ভুল কিছু হয়েছিল। তবে ভবিষ্যতে আর যাতে এমন অনিয়ম না হয়, তার জন্য ব্যাংক সতর্ক থাকবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছে।