ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট!

ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট!

ভোজ্যতেল ও চিনির পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও তৈরি করা হচ্ছে সংকট! খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সংকটের কথা বলে দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে মজুদ তথ্যে দেখা গেছে, বর্তমানে সয়াবিন তেল ১ লাখ ৪০ হাজার মে.টন, পাম ১ লাখ ৩৩ হাজার মে.টন এবং চিনির মজুদ রয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৫০ মে.টন।
ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। প্রায় দুমাস ধরেই এই দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হলেও সেই দাম মানছে না ব্যবসায়ীরা। পাইকারি এবং খুচরা বাজারে তৈরি করা হচ্ছে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চাহিদামতো তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি প্রেরিত দেশের শীর্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রিফাইনারি মিল থেকে মধ্যস্বত্বভোগী ডিও ব্যবসায়ীরা তেলের সেলস অর্ডার কিনে নিচ্ছে এবং তারা তেল মজুদ করে বাজারে সংকট তৈরি করছে, ফলে বাড়ছে দাম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ২৬ জানুয়ারি ভোজ্যতেল এবং চিনি উৎপাদনকারীদের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠকে এলসি পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং পরিবেশক প্রথা কার্যকরের বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরিকৃত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের শীর্ষ পাঁচ সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী কোম্পানির মধ্যে সিটি গ্রুপের কাছে বর্তমানে তেল মজুদ আছে ৬ হাজার মে.টন। এলসির পরিমাণ সাড়ে ১৭ হাজার মে.টন। যা চলতি মাসের মাঝামাঝিতে দেশে আসবে। মেরিন ভেজিটেবলের (নূরজাহান) কাছে মজুদ আছে ৬ হাজার মে.টন, টি কে গ্রুপের (পুষ্টি) কাছে ১৯ হাজার মে.টন, মোস্তফা ভেজিটেবলের (মোস্তফা) কাছে মজুদ আছে ৭ হাজার ৪০০ মে.টন এবং এস আলমের (মোরগ) কাছে মজুদ আছে ১ লাখ ৮ হাজার ৬৪০ মে.টন ও পাইপলাইনে আছে ৩৮ হাজার মে.টন সয়াবিন। যা ৩১ মার্চ দেশে আসবে। অর্থাৎ বর্তমানে সয়াবিন মজুদ আছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৪০ মে.টন এবং পাইপলাইনে আছে ৫৫ হাজার ৫০০ মে.টন।
এ ছাড়া পামঅয়েলের মজুদও রয়েছে স্বাভাবিক। তথ্যে দেখা গেছে, সিটি গ্রুপের কাছে বর্তমানে মজুদ রয়েছে ৫ হাজার মে.টন এবং মালয়েশিয়া থেকে আমদানিকৃত পাইপলাইনে আছে সাড়ে ১৫ হাজার মে.টন তেল। মেরিন ভেজিটেবল মজুদ আছে ২ হাজার মে.টন, টি কে গ্রুপের কাছে ৭ হাজার মে.টন এবং পাইপলাইনে আছে ৭ হাজার মে.টন। যা ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে দেশে আসবে। মোস্তফা ভেজিটেবলের কাছে মজুদ আছে ৭ হাজার মে.টন, এস আলমের কাছে ৮২ হাজার ১৫১ মে.টন, মেঘনা গ্রুপের কাছে ২৫ হাজার মে.টন, এস এ রিফাইনারির কাছে রয়েছে ৪ হাজার ৯১১ মে.টন। পাইপলাইনে আছে আরো ৫ হাজার মে.টন। পাম আয়েল মোট মজুদ রয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬২ মে. টন এবং পাইপলাইনে রয়েছে ৩৯ হাজার ৫০০ মে.টন। এ ছাড়া চিনির ক্ষেত্রে সিটি গ্রুপের কাছে মজুদ আছে ৪৫ হাজার মে.টন এবং পাইপলাইনে আছে ৪০ হাজার মে.টন। আব্দুল মোনেম সুগার লিমিটেড মজুদ আছে ৫৬ হাজার ৭৫০ মে.টন এবং পাইপলাইনে আছে ১৫ হাজার মে.টন, দেশবন্ধু সুগারমিলস মজুদ আছে ২৭ হাজার মে.টন এবং পাইপলাইনে আছে ২৫ হাজার মে.টন। এস আলম গ্রুপের মজুদ আছে ৪২ হাজার ৭০০ মে.টন এবং পাইপলাইনে আছে ১ লাখ ৩০ হাজার মে.টন ও মেঘনা গ্রুপের কাছে মজুদ আছে ১ লাখ ২০ হাজার মে. টন চিনি। অর্থাৎ মোট চিনি মজুদ আছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৫০ মে.টন এবং পাইপলাইনে আছে ২ লাখ ১০ হাজার মে.টন।
উল্লেখ্য, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় ১৩ লাখ মে.টন এবং চিনির চাহিদা রয়েছে সাড়ে ১৫ হাজার মে.টন। বর্তমানে এই দুই পণ্য যে পরিমাণ মজুদ রয়েছে তাতে বাজারে সংকট তৈরির সম্ভাবনা নেই। তারপরও সংকট তৈরি করা হচ্ছে। সরকারের কঠোর নজরদারি না থাকায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভোজ্যতেল উৎপাদনকারীরা পরিবেশকদের তেল ও চিনি সরবরাহ করছে না। তারা ডিও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পরিবেশকরা পণ্য উত্তোলন করছে না। তারা বাকিতে মালামাল ক্রয় করতে চায়। এ কারণে পরিবেশকরা মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছ থেকে পণ্য কিনে বেশি দামে বিক্রি করছে। রাজধানীর খুচরাবাজারে প্রতি কেজি সয়াবিন বিক্রি করা হচ্ছে ১৩৫ টাকায় এবং বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন বিক্রি করা হচ্ছে ১৩০ টাকায়। অথচ খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি সয়াবিন বিক্রির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা আছে ১০৯ এবং চিনি বিক্রি করা হচ্ছে ৬০-৬২ টাকায়।

বিশেষ প্রতিনিধি

Related articles

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।