মানবেতর জীবন যাপন করছেন পুরান ঢাকাবাসী!
প্রাণের শহর আমাদের এই ঢাকা। অন্তহীন সমস্যার মাঝেও বেঁচে থাকার তীব্র আকাঙ্খা নিয়ে প্রতি নিয়ত ঢাকায় ছুটে আসছেন মানুষ। একটি চাকরি বা ব্যবসা করে নিশ্চিত জীবন যাপন করতে চাওয়া কী অপরাধ? মানুষ হিসেবে এটুকু চাহিদা আমাদের থাকতেই পারে। এক সময়ের নানান ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকা ক্রমেই মানুষ বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ, মশা-মাছির উপদ্রব, মাদক আতংক, পানিতে দুর্গন্ধ প্রভৃতি বিবিধ সমস্যা এখন এলাকাবাসীর নিত্যসঙ্গী। এসবিডি নিউজ24 ডট কম সবর্দা পাঠকের চাহিদা পূরণে স্বচেষ্ট। পত্রিকাটির বিশেষ প্রতিনিধি সৌরভ চৌধুরী পুরানো ঢাকাবাসীর বেহাল দশার চিত্র তুলে ধরেছেন। তাদের মানবেতর জীবন যাপনের করুণ কাহিনী এখানে প্রকাশ করা হলো। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে,অবিলম্বে সরকার এসব সমস্যা নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নবাবপুর, ঠাটারীবাজার, যোগীনগর-ওয়ারী রাস্তাটির দীর্ঘদিন যাবত্ বেহালদশা। মেরামত ও সংস্কার না করায় যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি রাস্তাটি কোন মতে সংস্কার করা হলেও ম্যানহোলে ঢাকনা বসানোর কাজ গত তিন মাসেও শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ঢিমেতালে কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা। ম্যানহোলে ঢাকনা বসানোর কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় গত দুই মাস নবাবপুর হয়ে ঠাটারীবাজার, যোগীনগর-ওয়ারী-জয়কালী মন্দির রাস্তায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ পথে যাতায়াতকারী মানুষ বিপাকে পড়েছেন। দোকান মালিকরা মালপত্র আনা-নেয়া করতে পারছে না। ঠাটারীবাজার বটতলার দোকানী মনির হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, গত তিন মাস ধরে কাজ চলছে কিন্তু শেষ হচ্ছে না। পায়ে হেঁটে চলাও দুরূহ। যোগীনগরের বাসিন্দা মোরশালিন আহমেদ বলেন, স্যুয়ারেজের পচা গন্ধে পরিবেশ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বাড়ির দরজা-জানালা খোলা যাচ্ছে না, দিন-রাত বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে।
যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। নবাবপুর হাইস্কুলের সামনে সিটি কর্পোরেশন ডাস্টবিন স্থাপন করেছে। পুরো এলাকার ময়লা-আবর্জনা সেখানে ফেলা হচ্ছে। বনগ্রাম সড়ক, যোগীনগর ও ঠাটারীবাজারে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। কর্পোরেশনে লিখিত অভিযোগ করেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
পুরান ঢাকায় ১৫ দিন যাবত্ মশা-মাছির উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্ধ্যার আগেই ঝাঁকে-ঝাঁকে মশা নেমে আসে। সিটি কর্পোরেশন মশার ‘ওষুধ’ স্প্রে না করায় উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। বাসিন্দা দিলরুবা বেগম বলেন, দিনে মশা রাতে মাছি এই নিয়ে ঢাকায় আছি। নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে প্রতিদিনই মশা-মাছির উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিসিসি মোটেও নজর দিচ্ছে না। রোগ-বালাই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঠাটারীবাজার, যোগীনগর ও ওয়ারী এলাকায় মাদকের আতংক বেড়েছে। মাদক বিক্রি ও সেবনের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক অভিভাবকই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বিপদে পড়েছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ বিশেষ মহল তরুণ-যুবসমাজকে মাদকাসক্ত করে বিপথগামী করে তুলছে। অভিভাবক মোর্শেদ আলম বলেন, একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ফ্যাসাদে পড়েছেন। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে মাদক সেবন করেছে। তিনি ছেলেকে মাদকাসক্তিমুক্ত করতে মিরপুরে একটি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করেছেন।
পুরান ঢাকায় ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ। গত ১৫ দিন এই দুরবস্থা চলছে। কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও সুফল পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। ওয়ারীর বাসিন্দা মাহাবুবুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, ১৫-২০ দিন ধরে ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। রান্না-বান্নার কাজেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কয়েকদিন যাবত্ বাইরে থেকে পানি কিনে কাজ চালাচ্ছেন। ওয়াসার স্থানীয় কার্যালয় কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন বলেন, ওয়াসার পানিতে পয়ঃবর্জ্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন বাইরে থেকে পানি কিনতে তাকে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। বনগ্রাম রোডের বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, গরমকাল না আসতেই পানি সংকট দেখা দিয়েছে। পানি সংকটের উপর দুর্গন্ধ, সব মিলিয়ে পরিস্থিতি দুর্বিষহ।
ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী আজিজুল হক বলেন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পানি সরবরাহ করাই ঢাকা ওয়াসার মূল লক্ষ্য। পুরান ঢাকার কিছু কিছু স্থানে ওয়াসার লাইনে লিকেজ থাকায় তা দিয়ে কোন কোন সময় ময়লা-আবর্জনা প্রবেশ করে পানিতে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করতে পারে। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ামাত্রই ওয়াসার কর্মীরা ছুটে যাচ্ছেন ঘটনাস্থলে।