তৃতীয় নয় তরুণ শক্তি চাই রাজনীতির জন্য
তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থান? প্রশ্নবোধক এই বাক্যটিই আমাদের জন্য শেষ নয়। এখানে কেবল শুরম্ন। কেননা, নেপথ্যে কাজ করছে আমত্মর্জাতিক একটি চক্র।& এই চক্রটি আরেকটি ওয়ান-ইলেভেন সৃষ্টির পাঁয়তারাও করছে প্রতিনিয়ত। আওয়ামী লীগ কিংবা প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নয়, এবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হতে পারে বলে বিভিন্ন মহলে রব উঠেছে। একটি আমত্মর্জাতিক গোষ্ঠীর এ দেশীয় এজেন্টরা এই উত্থান ফর্মুলা বাসত্মবায়নে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। “দেশের রাজনীতির বর্তমান ধারা খুব দ্রুত বদলে যাবে। এমন কথাও শোনা যাচ্ছে বাতাসে কান পাতলেই। অন্যদিকে নোবেল বিজয়ী বাঙালি ড. মুহম্মদ ইউনূস বলেছেন আমি বলে দিচ্ছি, দেশের রাজনীতির বর্তমান ধারা খুব দ্রুত বদলে যাবে। আমি বলে দিচ্ছি, আপনারা লিখে রাখেন, দেশের রাজনৈতিক হানাহানি নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। দেশের মানুষ কী চাচ্ছে, রাজনীতিবিদরা তা ধারণা করতে পারছেন না। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য শুধু দাবি জানালেই হবে না। তরম্নণদের নতুনভাবে রাজনীতি করতে হবে। বিকল্প রাজনৈতিক ধারা গড়ে তুলতে হবে। স্বাধীনতার ৪০ বছরে দেশে উলেস্নখযোগ্য সামাজিক পরিবর্তন আসলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন তেমনটি আসেনি উলেস্নখ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, রাজনীতিবিদরা সচেষ্ট হলে দেশকে তারা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন। আমরা এখন ভবিষ্যৎ আবছা দেখছি। সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে না পারায় জাতির ওপর আজ ভর করেছে হতাশা। এ কারণে দেশ ছেড়েই চলে যাচ্ছেন অনেকে। এ অবস্থা থেকে দ্রুত ফিরে আসতে হবে। এসময় তিনি রাজনৈতিক তৃতীয় শক্তির উত্থানের ইঙ্গিত দেন। সম্প্রতি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্যে নড়েচড়ে বসেছেন রাজনীতিবিদরা। শঙ্কিত হয়ে উঠেছে সরকার। ভাবিয়ে তুলেছে সাধারণ মানুষকেও। রাজনৈতিক বিশেস্নষকরা বলছেন, বিগত সময়ে ওয়ান ইলেভেনের সময়ে দেশের রাজনীতিবিদদের চরিত্র হরণের জন্য দেশের এমন বেশ কিছু বুদ্ধিজীবী উঠে পড়ে লেগেছিলেন। তারা এখনো তাই শুরম্ন করেছেন। বিদেশি গোষ্ঠীর মদদে তাদের এ দেশীয় কিছু দোসর উসকানিমূলক বক্তব্য ও কর্মকান্ডের মাধ্যমে একটি তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন। দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে আরেকটি ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা। তাদের মতে, বড় দুটি দলের মধ্যে আটকে পড়েছে এ দেশের রাজনীতি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাছে জনগণ গত ক’ বছরে তাদের দায়িত্বশীলতার যে ভূমিকা আশা করেছিল তা পায়নি। তাই জনগণ এই বৃত্ত থেকে মুক্তি চায়। উন্মেষ ঘটাতে চায় নতুন কোন শক্তির। তবে এটা হবে এ দেশের জনগণেরই সৃষ্ট। আমত্মর্জাতিক কোন গোষ্ঠীর মদদপুষ্ট নয়। সম্প্রতি সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সভায় গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে কথাগুলো বলেছেন, সেই কথার পেছনেও রয়েছে অ- নে-ক কথা। এই কথাগুলো আমাদেরকে বুঝে নিতে হবে। কেননা, বাংলাদেশ মানেই বিএনপি আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদেশে, এই ভূখন্ডে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর না কোন দক্ষ রাজনীতিবিদ এসেছে, না কোন দক্ষ রাজনীতিবিদ নতুন চেতনায় নতুনভাবে দেশ গড়ার এই মহান কাজে অংশ নিতে পেরেছে। বাংলাদেশ ও বাঙালির যে ইতিহাস তা থেকে জানা যায়, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক প্রমুখের সেণহ আর ভালোবাসার হাত ধরে যেভাবে তৈরি হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু; সেভাবে তৈরি হতে পারছে না বর্তমানের কেউ। এমনকি স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৪০ বছরেও কোন নেতা তৈরি হয়নি; যার কথা এবং কাজে মিল ছিল। যখনই কোন নতুন মুখ এসেছে রাজনীতির এই অঙ্গনে; তখন চারপাশ থেকে লোভ আর মোহ এসে ঘিরে ধরেছে অথবা সন্ত্রাসময় সময় কেড়ে নিয়েছে তাঁর জীবন। সত্মব্ধ করে দেয়া হয়েছে তাঁর পথচলা। নতুবা নেতৃত্ব আর বলিষ্ঠতাকে কেড়ে নেয়া হয়েছে নির্ঘাত অর্থেও বিনিময়ে। উদাহরণসরম্নপ বলা যায়, তরম্নণ প্রজন্মেও প্রত্যয়ীমুখগুলোর কথা। যেখানে ড. কামাল হোসেন, ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী, মেজর ইব্রাহীম, মুক্তিযোদ্ধা এম এ জলিল, শিরিন আখতার, ব্যারিস্টার তানিয়া আমির, ড. সারা হোসেন, আন্দালিব রহমান পার্থ প্রমুখের মত অনেকেই এসেছেন; কিন্তু সুযোগ পাচ্ছেন না। কারন হিসেবে দেখা গেছে সুযোগের ষোলভাগ হাতে নিয়ে বসে আছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়ার সমত্মান তারেক রহমান, সাবেক রাষ্ট্রপতির সমত্মান মাহি বি চৌধুরীসহ বেশ কিছু তরম্নন নেতৃত্ব; যাদের যোগ্যতা বলতে আছে কেবলই উত্তরাধিকার সূত্র। এই যোগ্যতার বাইরে তাদের যে যোগ্যতার কথা সবাই-ই জানে তা হলো, দূর্নীতির টাকায় বড় বড় আলিশান বাড়ি বানানো, দামি দামি গাড়ি কেনা আর রঙ মহলে গিয়ে সময় নষ্ট করা। আর কমিউনিস্ট বা ওয়াকার্স পার্টিও কথা বললে বলা যায়, এরা অপেক্ষাতেই থাকে সুযোগ হাতড়ে নেবার। যেমন হাতড়ে নিচ্ছেন লাল পতাকার নাম বিক্রিকারী তথাকথিত বিপস্নবী নেতা রাশেদ খান মেনন, দিলীপ বড়ুয়া আর হারম্নণ চৌধুরীরা। আমাদের আলোকিত সমাজ গড়তে অনেক তরম্নন অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। যাদের আছে দেশকে সুন্দরভাবে গড়ার যোগ্যতা, বলিষ্টতা এবং মেধা। নেই কেবল উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া নেতৃত্ব। অতএব, প্রতিদিন দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিময় এই দেশে আর শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া নয়; প্রয়োজন নতুন আলো নতুন বিশ্বাস আর যোগ্যতার রঙধনুময় আগামী। যেখানে মাহাথির মোহাম্মদ না হোক থাকবে তাঁরই মত কোন যোগ্যতর মানুষ, যেখানে থাকবে উন্নয়নের ছোঁয়া। কথার চেয়ে কাজের প্রতি প্রত্যয়দ্বিপ্ত পথের পথিক আর স্বপ্নময় সকাল। এই কাজটি করতে এগিয়ে আসার সুযোগ দিতে হবে তরম্ননদেরকে। যারা দূর্নীতি নয় সুনীতির ক্যানভাসে আঁকবে বাংলাদেশ। তাই বলে এহসানুল হক মিলন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, পংকজ দেবনাথ, খায়রম্নল কবীর খোকন প্রমুখের মত তথাকথিত তরম্নন নেতা থাকবে না। থাকবে প্রকৃত তরম্নন। যাদের বয়স ২৭ থেকে অবশ্যই ৩৮ বছর। এর বাইরে চলে যাওয়া যুব লীগ, যুব দল বা যুব মৈত্রীর কোন বুড়ো হাম্বাকে আমাদের এই সোনার দেশে নেতৃত্বে দেখতে চায় না কেউ। গত নির্বাচনে তরম্নণরা ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে। আগামী নির্বাচন যদি সুষ্ট হয় তাহলে আমার বিশ্বাস, তরম্নণরা এবার তরম্নণ নেতৃত্বকেই ক্ষমতায় বসাবে। বয়ে চলবে বাংলাদেশ, বয়ে চলবে আমাদের আগামী। তবে চেতনা থাকবে সেই পুরোনো চাউল ভাতে বাড়ার গল্পের মত, বঙ্গবন্ধু। কেননা, চিরমত্মন সত্যিকথা হলো-যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান/ ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান। আর তাই চাই বঙ্গবন্ধু’র আদর্শের স্বাধীনতার চেতনার নতুন নেতৃত্ব। কোন ওয়ান ইলেভেন, কোন আর্মি শাসন দেখার আগেই দেখতে চাই তারম্নণ্যময় ও যোগ্য নেতৃত্ব। যেখানে আর যাই হোক থাকবে না তথাকথিত উত্তরসূরীময় রাজনৈতিক নেতাদের অংশগ্রহন বা আস্ফালন…
মোমিন মেহেদী : কবি ও সাংবাদিক, mominmahadi@gmail.com