কষ্টকথা
সমর পালঃ
আমার ঠাকুরদা ব্রিটিশ ভারতের নানা অঞ্চল ঘুরে নানা জাতের ফলগাছ এনে সাজিয়েছিলেন বাড়িসহ চারপাশে প্রকাণ্ড প্রাচীরঘেরা ১১ বিঘার বিশাল বাগান। সেখানে আম, নারকেল, লিচু (বোম্বাই, চীনা বোম্বাই, বেদানা, গ্রিন….), কাঁঠাল, আতা, পেয়ারা, জাম, ক্ষুদিজাম (খুব ছোট আকারের গোলাকার কালোজাম), জামরুল, গোলাপ জাম, ফলসা, তাল, বেল, খেজুর, আমড়া (দেশী), জাম্বুরা, নারকেলি বরই, বাতাবি লেবু, কমলালেবু সবই ছিল।…. কয়েকটি আমের নাম – মাদ্রাজি, দ্বারকা, কৃষাণভোগ, লতা বোম্বাই, আলফানসো, ল্যাংড়া (৩ রকম), ফজলি (৩ রকম), কাঁচামিঠা (৫ রকম), বারোমেসে (বছরে ৩ বার ধরতো), ঝপঝপানে, মুর্শিদাবাদের সিন্দুরি, জাপানি সিন্দুরি, মহারাজ পছন্দ, নবাব পছন্দ, রানী পছন্দ (মিছরিগন্ধা), ভুবন পছন্দ, সরই খাস, বেগম খাস, কালাপাহাড়ি, তুয়া শেখ, ভূতে বোম্বাই (ক্ষীরসাপাত), বৈশাখী, লক্ষ্মীভোগ, গোপালভোগ (কালুয়া), মোহনভোগ, মোহন ঠাকুর, বেঁকি, ভাদুরি, ধরবোম্বাই……ইত্যাদি । আরো ছিল মনে নেই। কেউ আম,ডাব-নারকেল-সুপারি কিনে খায় দেখলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। আমাদের নাটোরের পালপাড়ার এই বাগান থেকে ঢাকায় আসতো ট্রাকভরা আম।
কোথায় হারিয়ে গেল সব……আজ চড়া দামে রাস্তায় কিনে খাই ভেজাল আম।
স্বাধীন দেশে ফল রক্ষার কাজে আমাদের অনীহা যে কত প্রবল তা সহজেই চোখে পড়ে। বিদেশী ফলের সমারোহ দেখে দেখে হারিয়ে ফেলছি দেশী ফলের নাম। আমাদের সন্তানেরা আর কি দেখবে এ মাটিতে জন্মানো ফল ? ছোটবলার পড়া ও দেখার সাথে মিল কোথায় জানি না।
‘আম জাম নারিকেল আতা লেবু কলা
লিচু বেল আনারস কাঁঠাল কমলা
তরমুজ তাল ফুটি খেজুর পেয়ারা
ক্ষীরাই আমড়া কুল আঙ্গুর জাম্বুরা।’- আমাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে দ্রুত।
আমরা কি অপটু নাকি অনুপযুক্ত অথবা কষ্ট না করেই হঠাৎ ফল চাই এবং অন্যের ঘাড় মটকে তরতর করে উপরে বয়ে ওঠার সিঁড়ি খুঁজি শুধু ! আমাদের পূর্বপ্রজন্মের গড়ে তোলা মাটির টান, রক্ত-ঘাম-শ্রমের ফসল অবলীলায় তুলে দিচ্ছি চেনা শত্রুর ক্ষুধার্ত গোলায় !
লেখকঃ সাহিত্যিক/সাবেক তথ্য সচিব।