লোড শেডিং এর তীব্রতায় অতিষ্ট জন-জীবন!
প্রধান প্রতিবেদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ গ্রীষ্ম মৌসুমের পুরো তাপদাহ শুরুই হয়নি অথচ এখনই রাজধানীসহ সারাদেশে দৈনিক ৭ থেকে ৮ বার লোডশেডিং হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় এর পরিমাণ আরো বেশি। সামনেই সেচ মৌসুম, এ সময়ে তীব্র লোডশেডিংয়ের আশঙ্কায় ভুগছেন দেশবাসী। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানিয়েছে, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেচ মৌসুমে লোডশেডিং মোকাবিলা করা হবে। একই সঙ্গে লোডশেডিংয়ের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের স্বল্পতাকে দায়ী করা হয়েছে।
অন্যদিকে রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টগুলোতে পুরনো যন্ত্রপাতি বসানোর কারণে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারী খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর রামপুরা, নারিন্দা, বেগমগঞ্জ লেন, শনির আখড়া, গেন্ডারিয়া, দয়াগঞ্জ এবং মিরপুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। এসব এলাকায় দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। এ ছাড়া মতিঝিল, উত্তরা, বাসাবো, মুগদা, পুরানা পল্টন, আগারগাঁও এলাকাতেও নিয়মিত লোডশেডিং হচ্ছে। পিডিবি সূত্রে জানা যায়, দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে দিনে (রাত ৮টা) পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৯৯ মেগাওয়াট এবং রাতে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ফলে দিনে ঘাটতি থাকছে প্রায় ২ হাজার ১০১ মেগাওয়াট এবং রাতে ৬৬০ মেগাওয়াট। আর দিনে-রাতে মিলে গড়ে মোট লোডশেডিং ধরা হয়েছে ৫৯৭ মেগাওয়াট।
পিডিবির সূত্র মতে, গতকাল ঢাকায় ১৭৭ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামে ৭৯ মেগাওয়াট, খুলনায় ৮১ মেগাওয়াট, রাজশাহীতে ৭৮ মেগাওয়াট, কুমিল্লায় ৫২ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ৪৩ মেগাওয়াট, সিলেটে ২৬ মেগাওয়াট, বরিশালে ১৭ মেগাওয়াট এবং রংপুরে ৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লোডশেডিং করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান এ এস এম আলমগীর কবির বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ আছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরকারি একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রও চলছে না। নতুন কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ অনিশ্চিত অবস্থায়ই আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গ্যাস সংকটের ফলে বর্তমানে ৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১ হাজার ১২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক কেন্দ্র বন্ধই থাকছে। এমন কেন্দ্র হচ্ছে, রাউজান বিদ্যুৎকেন্দ্র (৩৮০ মেগাওয়াট), শিকলবাহা (৪০ মেগাওয়াট) এবং শিকলবাহা (১৫০ মেগাওয়াট) বিদ্যুৎ কেন্দ্র গ্যাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে কম উৎপাদন হওয়া কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে_ ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, টঙ্গী, সিদ্ধিরগঞ্জ পিকিং পাওয়ার প্লান্ট, মেঘনা ঘাট পাওয়ার প্লান্ট ও হরিপুর পাওয়ার প্লান্ট। পিডিবির তথ্য মতে, বর্তমান সরকারের সময়ে ৩ বছরে ২ হাজার ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। আরো ৫ হাজার ২১৯ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য ৫০টি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হওয়ার জন্য শুধু গ্যাস সংকট নয়, এজন্য অনেকে রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টে অতি পুরনো যন্ত্রপাতি বসানোকেও দায়ী করছেন অনেকে। তাদের মতে, রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টে (ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র) অতি পুরনো যন্ত্রপাতি বসানোর কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিপরীতে জ্বালানি তেলের চাহিদা অনেক বেশি। ফলে বেশি তেল পোড়ালেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না কেন্দ্রগুলো।