ওয়াসার দুর্গন্ধযুক্ত পানি নগরবাসীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে
সৌরভ চৌধুরী,এসবিডি নিউজ 24 ডট কমঃ
বিশুদ্ধ পানির সংকট থেকে মুক্তি মিলছে না রাজধানীবাসীর। তার উপর দুর্গন্ধযুক্ত পানি নগরবাসীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। অনেক চেষ্টার পরও কোন কোন এলাকায় এক বালতি পানিও মিলছে না।
পুরনো ঢাকা ছাপিয়ে পানি সংকট বর্তমানে ছড়িয়ে পড়েছে মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায়। পুরনো ঢাকার সিংহ ভাগ এলাকায় দুর্গন্ধ, ময়লা ও ফেনাযুক্ত ঘোলাটে পানি সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত এই পানিতে বেশ কিছু দিন ধরে এই সমস্যা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজধানীর অভিজাত গুলশান এভিনিউয়ের এলাকার বেশ কিছু সড়কে গত তিনদিন ধরে ওয়াসার পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। টাকা দিয়েও ওয়াসার এক গাড়ি পানি সংগ্রহ করতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা। অবশ্য ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছেন, গুলশানের পানি সংকট নিরসনে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। গত দুইদিন ধরে মহাখালী থেকে আনা পাঁচটি গাড়ি দিয়ে রাত-দিন পানি সরবরাহের কাজ চলছে। বিদ্যুত্ বিভ্রাট ও লোডশেডিং পানি সংকটের কারণ বলে জানা গেছে। ওয়াসা দাবি করেছে গত বৃহস্পতিবার কয়েকটি সড়কের পানি সংকট সহনীয় পর্যায়ে আনা হয়েছে। পানি সংকট সম্পর্কে গুলশান এভিনিউ এলাকার ১২৬ নম্বর রোডের বাসিন্দা ব্যারিস্টার লুত্ফর রহমান বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে গুলশান এভিনিউয়ের ৯৫, ৯৮, ৯৯, ১২৫, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১২৯, ১৩০সহ আশপাশের দশ থেকে ১৫টি সড়কে ওয়াসার পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। টাকা দিয়েও ওয়াসার এক গাড়ি পানি সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ভিআইপিদের পানি যোগান দিতেই মনযোগী। তারা সাধারণদের প্রতি নজর দেয়ার সুযোগই পাচ্ছে না। বাইরে থেকে কেনা পানি দিয়ে কোন মতে জীবন ধারণের চেষ্টা করছে অধিকাংশ পরিবার।
গুলশান-১ এর ২৭ নম্বর সড়কের বাসিন্দা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘চরম পানি সংকটে ভুগছি গত তিনদিন ধরে। ওয়াসা কার্যালয়ে দফায় দফায় লোক পাঠিয়েও কাজ হচ্ছে না। ওয়াসার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না।’
পুরনো ঢাকায় বাড়ছে পানিবাহিত রোগ-বালাই: নোংরা পানি পান করায় পুরান ঢাকায় পেটেরপীড়াসহ নানা পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। পুরনো ঢাকার ওয়ারী, শশী মোহন বসাক লেন, বনগ্রাম ও মৈশুণ্ডি এলাকায় গত এক মাস ধরে পানি সংকট লেগে আছে। সারাদিন চেষ্টার পরও এক বালতি পানি জোগার করা সম্ভব হচ্ছে না। দিন-রাত চেষ্টার পর যতটুকু পানি সংগ্রহ করা হচ্ছে তাতেও দুর্গন্ধ। ফেনাযুক্ত কালচে পানি গৃহস্থালীর কাজে, রান্নাবান্নায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না। উত্তর মৈশুণ্ডির গৃহবধূ নাজমা আক্তার বলেন, ভোর রাত থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত কিছুটা পানি ওয়াসার লাইনে আসলেও তা তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত। ফুটানোর পর পানির পাত্রের তলায় কালো কাদার মতো গাদ জমা হচ্ছে। এই পানি পান করা সম্ভব হচ্ছে না। দক্ষিণ মৈশুণ্ডির বাসিন্দা জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, টেপের মুখ খোলা মাত্রই পানি না এসে বিকট শব্দে হাওয়া বের হয়। এতে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ায়। ময়লাযুক্ত পানি দিয়ে থালা-বাসন মাজা, এমনকি কাপড়-চোপড় ধোয়ার কাজেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন নগদ টাকায় পানি কিনতে হচ্ছে।
চকবাজার এলাকার বাসিন্দা সাফিন আহমেদ জানান, গত সাতদিন ধরে তিনি পানি কিনে পান করছেন। কেনা পানিতেও ভেজাল বলে তিনি অভিযোগ করেন। কেনা পানি পান করে তার একমাত্র কন্যা ঐশী ও তার স্ত্রী পেটেরপীড়ায় ভুগছেন গত দুইদিন ধরে। অভিন্ন অভিযোগ করেন চম্পাটুলী লেনের বাসিন্দা রেশমা বেগম। তিনি বলেন, ওয়াসার সংগৃহীত পানি দিয়ে টয়লেটে যাওয়াও নিরাপদ নয়। ঐ পানি ব্যবহারের পর শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলকায়। শিশুদের দেহে পাছরা হচ্ছে। পানি নিয়ে একই রকম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সুত্রাপুর, সদরঘাট, ইসলামপুর, বংশাল, জয়কালী মন্দির, মিটফোর্ড, জুড়াইন, শ্যামপুর, ধোলাইখাল, ধোলাইপাড়, পোস্তগোলা, টিপু সুলতান রোড, কুলুটোলা, ওয়ারী, বনগ্রাম রোড, গোপীবাগ, অভয়দাস লেন, জিয়া মাঠ ও মুরাদ সড়ক, ঠাটারী বাজার, চকবাজার, নয়া বাজারসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মানুষ। যোগীনগরের ইসমাইল হোসেন বলেন, ওয়াসার লাইনের পানিতে পয়ঃবর্জ্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি ওয়াসার স্থানীয় অভিযোগ কেন্দে অভিযোগ করেছেন কিন্তু কোন সুফল পাওয়া যায়নি।