দু’দিনব্যাপী ৫ম জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে নির্বাচন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা, জাতীয় সংসদ-সব নির্বাচনেই তরুণ প্রজন্মের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকে। এসব নির্বাচনে অনেক ক্ষেত্রেই তরুণদের হাতে বিড়ি-সিগারেট তুলে দেয়া হয়। প্রকারামত্মরে নির্বাচন তরুণদের নেশার দিকে ধাবিত করে। তাই সব নির্বাচনে ধূমপানসহ তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। পাশাপাশি নৈতিক ও সামাজিক কারণে এসব নির্বাচনে অধূমপায়ীদের প্রাধান্য দেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব ও কর্তব্য হওয়া উচিত।
২ মার্চ ১০টায় মানিকগঞ্জের কৈট্টায় প্রশিকা এইচআরডি সেন্টারে ২দিনব্যাপী ৫ম তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক জাতীয় কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা উপরোক্ত আহবান জানান। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালার উদ্বোধনী অধিবেশনে অতিথি আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) এর উপদেষ্টা স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেকনিক্যাল অফিসার ডাঃ মাহফুজুল হক, হেলথ ব্রিজ এর আঞ্চলিক উপদেষ্টা দেবরা ইফরমসন। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আয়োজক কমিটির সদস্য বিধান চন্দ্র পাল। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিগত দিনের কার্যক্রমের উপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচনের সময় তরুণদের মধ্যে ধূমপান বা অন্যান্য নেশার প্রচলন বেড়ে যায়। অনেকে নতুন করে এসব নেশার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং এই নেশা পরবর্তী সময়ে একজন তরুণকে কর্মউপযোগী না করে অন্যান্য অপকর্মে ধাবিত করে। ধূমপায়ী ব্যক্তি নিজের অর্থ অপচয় করছেন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ নষ্ট করছেন। যে নিজের অর্থ অপচয় করেন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ নষ্ট করেন সে ব্যক্তি নির্বাচিত হলে প্রতিষ্ঠানের অর্থও অপচয় করবেন। তার কাছে জনস্বাস্থ্য-পরিবেশএর বিষয়গুলো উপেক্ষিত থাকবে। তাই নির্বাচনে অধূমপায়ীদের প্রাধান্য দিতে হবে। যারা অধূমপায়ী তাদেরকে সবার মাঝে আলাদা করে তুলে ধরতে হবে।
পরিবেশবিদ আবু নাসের খান বলেন, তামাক সেবন শুধু সেবীরই ক্ষতি করছে না। এর ফলে পরিবেশ, অর্থনীতি মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। তামাক চাষ খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলছে। বিশেষ করে, খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হুমকি। তামাক পাতা প্রক্রিয়াজাত করণে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন হচ্ছে। পার্বত্য এলাকায় সংরক্ষিত বন বিভাগের গাছ কেটেও তামাক চাষ করা হচ্ছে। চলনবিল এর মত উর্বর শস্য এলাকায়ও তামাক চাষ হচ্ছে। এভাবে খাদ্যের জমিগুলো তামাকের দখলে চলে যাচ্ছে। তাই তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে হবে।
ডাঃ মাহফুজুল হক বলেন, ধূমপানসহ তামাক সেবনে ক্যান্সার, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, এজমা ও হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রামত্ম হয়ে পৃথিবীতে প্রতি ৬.৪ সেকেন্ডে একজন ৫৪ লক্ষ মানুষ মারা যায়। পরোক্ষ ধূমপানের কারণেও ৬ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশে ২০০৪ সালে ১২ লক্ষ মানুষ ৮টি কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩ লক্ষ ৮২ হাজার মানুষ শারীরিক কর্মক্ষমতা হারায় এবং ৫৭ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বর্তমানে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এসব নিয়ন্ত্রণে সরকার আইন করেছে। কিন্তু এ আইন অনেক দুর্বল। তাই এ দুর্বলতাগুলো দূর করতে আইন সংশোধন প্রয়োজন। দেবরা ইফরমসন বলেন, পৃথিবীতে অসংক্রামক রোগ বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য উন্নত দেশগুলো কঠোরভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ করছে। আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তির এফসিটিসির আলোকে ছবিসহ সতর্কবাণী প্রদান করা হচ্ছে। তামাকের উপর কর বৃদ্ধি করছে।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সারাদেশের বেসরকারি সংগঠনগুলো ধারাবাহিকভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মশালা সারাদেশে পরিচালিত বেসরকারি সংগঠনগুলোর কর্মসূচীরই সমন্বয় করে থাকে।
দুদিনব্যাপী ৫ম জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মশালা’র প্রথম দিন আজ ২ মার্চ তামাকের উপর কর বৃদ্ধির গুরুত্ব বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম সুজন, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে তামাক নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উন্নয়নে করণীয় বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার সৈয়দা অনন্যা রহমান। বিকাল ৪টায় পোস্টার প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণকারী প্রায় ১৫০টি বেসরকারি সংগঠন তাদের স্ব স্ব এলাকার চিত্র তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ৯ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট বেসরকারি সংগঠনগুলোর তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সমন্বয় ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মশালা শুরু করে ২০০০ সালে। ২০০৩ সাল থেকে প্রতি দু’বছর পর পর জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মশালা আয়োজন করে আসছে। ২০০৩ সালে প্রথম, ২০০৫ সালে দ্বিতীয়, ২০০৭ সালে তৃতীয় এবং ২০১০ সালে চতুর্থ জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।