ওয়ার্ল্ড সামিট সম্মেলন অনুষ্ঠিত।। দ্বিতীয় অনুষ্ঠান ২০১৩ সালের ১ মার্চ
সৌরভ চৌধুরী,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আরো উন্নত একটি বিশ্ব’ শিরোনামে ১ মার্চ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছিল ওয়ার্ল্ড মার্কেটিং সামিট। গত শনিবার ৩ দিনব্যাপী ওই সম্মেলন শেষ হয়েছে। ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৭ হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি যোগ দেন। যাদের মধ্যে ছিলেন করপোরেট খাতের পেশাজীবী, গবেষক-শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা। সম্মেলনে বিশ্বের প্রখ্যাত মার্কেটিং বিশেযজ্ঞ, ব্র্যান্ড বিশেষজ্ঞ, দেশি-বিদেশি ও অংশগ্রহণকারীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। ৩ মার্চ সম্মেলন শেষ হওয়ায় ভেঙে গেছে মিলনমেলা। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ওয়ার্ল্ড মার্কেটিং সামিটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ধরনের উদ্যোগ এই প্রথম। আর উদ্যোগটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় গ্রহণ করেছেন বিশ্ববরেণ্য মার্কেটিং ব্যক্তিত্ব প্রফেসর ফিলিপ কটলার। এই বিশ্ব সম্মেলনে বিশ্বসেরা মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিংয়ে পথিকৃৎ ব্যক্তিত্বরা মার্কেটিং বা বিপণন নীতি, উপাদান ও অভ্যন্তরীণ নানা অনুষঙ্গ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। আলোচনায় চারটি প্রধান বিষয় বিশেষভাবে প্রাধান্য পায়, শিক্ষা (বাংলাদেশ ও চীন), স্বাস্থ্য (বাংলাদেশ ও ভারত), খাদ্যনিরাপত্তা (আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া) ও পরিবেশ (জার্মানি ও ব্রাজিল)। আলোচকরা এসব খাতে বিভিন্ন মডেল সুপারিশ করছেন। সম্মেলনে মহত্তম মার্কেটিং ব্যক্তিত্বরা পরস্পরের সঙ্গে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে হয়ে একই মঞ্চে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।
তবে আন্তজার্তিক বিপণন সম্মেলনের প্রথম দিকে আয়োজকদের অব্যবস্থাপনায় ছন্দপতন ঘটলেও তা বিষয়ের কাছে মস্নান হয়ে গেছে মনে করেন অংশগ্রহণকারীরা। সম্মেলনে বিদেশ থেকে সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলন সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইন্ডিয়ার দ্য হিন্দু বিজনেস লাইনের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর ও চিফ অব ব্যুরো প্রতিম রজ্ঞন বোস বলেন, প্রথম ওয়ার্ল্ড মার্কেটিং সামিট শুরুটা ভালো হয়েছে তবে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার ঘাটতি ছিল। আশা করি এই সম্মেলনের অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আগামীতে আরো সুন্দর হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা ইন্ডিয়া থেকে ১২ জন সাংবাদিক এই ইভেন্ট কভার করেছি। সব দিক থেকে আমরা সহযোগিতা পেয়েছি। এ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ মার্কেটিংয়ে আরো উন্নত হবে বলে আশা করেন প্রতিম। এ ছাড়া এ সম্মেলন আঞ্চলিক ও বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যেও মার্কেটিংয়ে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন প্রতিম। বাংলাদেশ তার ভালো লাগার একটি জায়গা তবে ঢাকাতে যানজট ও মশা বেশ বিরক্তিকর বলে মন্তব্য করেন প্রতিম।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান করপোরেট কোচের চিফ কনসালট্যান্ট জিসু তরফদার বলেন, সম্মেলনে যোগদান করে আমি মার্কেটিংয়ের অনেক অজানা কথা জানতে পেরেছি। এ ধরনের সম্মেলন আরো হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ওয়ার্ল্ড মার্কেটিং সামিট বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় মার্কেটিং বা বিপণন ব্যবস্থাপনার সামর্থ্যের পূর্ণাঙ্গ উপস্থাপনার সুযোগ তৈরি করেছে। বিশ্বের দেশে দেশে যেসব সমস্যা শত বছর ধরে মানব জাতি সমাধানের চেষ্টা করে চলেছে, সেসব সমস্যার ইতিবাচক সমাধানের মাধ্যমে সমাজ ও মানুষের জীবন যাপনে সুসঙ্গত পরিবর্তন ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মার্কেটিং বা বিপণণ কৌশল প্রণয়নও এ সম্মেলনের অন্যতম উদ্দেশ্য। জাতিসংঘের মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল বা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে বিপণন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ২০১৫ সালের মধ্যে তা বাস্তবায়নেও সচেষ্ট ছিল এই সম্মেলন।
আয়োজকরা জানান, ওয়ার্ল্ড মার্কেটিং সামিট এমন একটি প্লাটফর্ম যার মধ্যদিয়ে শক্তিশালী বাংলাদেশ নিজের ব্র্যান্ডিং উপস্থাপনের সুযোগ পেয়েছে এবং এই বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশ তার সুমহান ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি, সমাজ, অর্থনীতির নানাদিক উপস্থাপন করার মাধ্যমে স্বাধীনতার ৪০ বছরে বাংলাদেশ কতটা উন্নয়ন সাধন করল_ বিশ্ববাসীর সামনে তার প্রামাণ্য এক উপস্থাপনার সুযোগ পেল বাংলাদেশ। সম্মেলন চলাকালে সারাবিশ্বের চোখ ছিল বাংলাদেশে নিবদ্ধ। বিশ্বের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন চিন্তাবিদ ও সিদ্ধান্ত প্রণেতাদের এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে এদেশের ব্যবসা ও বিদেশি বিনিয়োগেও অসীম সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে ৩ মার্চ শেষ হওয়া সম্মেলনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সংগঠন ও স্টেক হোল্ডাদের কোনো ভূমিকা না থাকায় সংশ্লিষ্টরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশে ২০১৩ সালের ১ মার্চ দ্বিতীয় ওয়ার্ল্ড সামিট সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। পরে ২০২১ সালে ফের এই সম্মেলন হবে বলে আয়োজকরা জানান।