কপোতাক্ষ নদের বুকে বাঁধঃ সংঘর্ষের আশঙ্কা
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ সাতক্ষীরার তালায় কপোতাক্ষের বুকে বাঁধ দেয়াকে কেন্দ্র করে কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন সমন্বয় কমিটি,কপোতাক্ষ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ,উপজেলা পানি কমিটি ও স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধি মূখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। দেয়া হচ্ছে কর্মসূচি পাল্টা কর্মসূচি । কর্মসূচি পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে যে কোন মুহুর্তে সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, রোববার বেলা ১১টায় সকালে স্থানীয় দুই ইউপি চেয়ারম্যান কপোতাক্ষ’র বুকে নতুন বাঁধ নির্মানের পক্ষে স্থানীয় ডাকবাংলো চত্বরে এক সমাবেশ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্বারক লিপি প্রদান করেছে। তালা সদরের ইউপি চেয়ারম্যান এসএম নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, তালার খলিলনগর ইউপি চেয়ারম্যান প্রনব ঘোষ , ছাড়াও বক্তব্য রাখেন,বি এম জুলফিকার রায়হান,রাজু আহম্মেদ ও শিক্ষক মুকুন্দ রায় প্রমূখ। এসময় বক্তারা অনিতিবিলম্বে কপোতাক্ষ খননসহ ৬ দফা দাবী জানায়।
বক্তারা বলেন, এ মহলকে আগামি বন্যায় তালাবাসিকে ডুবিয়ে মারতে ষড়যন্ত্র করে বাঁধ বন্ধ করার তৎপরতা চালাচ্ছে।
৪ মার্চ সকালে তালা উপজেলা পানি কমিটি পক্ষ থেকে নতুন বাঁধ বন্ধ করে আগের সীমানায় বাঁধ ও কপোতাক্ষ নদ চলতি বছর খননের দাবীতে সাতক্ষীরা জেলা প্রসাশক বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করেছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম,তালা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তারী সুলতানা,অ্যাড.আব্দুর রহিম,অ্যাড.জিল্লুর রহমান,অধ্যাপক হাসেম আলী ফকির, উপজেলা পানি কমিটির সাধারন সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান, আব্দুল আলিম, মুক্তিযোদ্ধা ময়নুল ইসলাম, শফিকুল ইসলামসহ অনেকে।
তারা আরও জানায় ৪ মার্চ বিকেলে কপোতাক্ষ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ কপোতাক্ষ’র বুকে নতুন বাঁধ নির্মানের বিপক্ষে পুরাতন সিনেমাহল চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। কপোতাক্ষ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ’র আহবায়ক প্রদীপ মজুমদার লিখিত বক্তব্যে জানান,কপোতাক্ষ নদের মধ্যে দিয়ে বেড়িবাঁধ দেয়া হচ্ছে। আগের সীমানায় বাঁধ দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন,ভূমিদস্যুদের দখল বুঝে দিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উঠে পড়ে লেগেছে। দখল আর অবৈধ স্থাপনার কারনে কপোতাক্ষ নদ আজ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান সরদার ইমান আলী, অধ্যাপক মোঃ রফিকুর ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন জোয়ার্দ্দার, গোলাম মোস্তফা,উদয় দাসসহ কপোতাক্ষ অবাহিকার বিভিন্নস্তরের মানুষ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধি তাদের অপকর্ম ঢাকতে নতুন বাঁধের শ্রমিক দিয়ে এই সমাবেশ করে ঘোলা পানিতে মাছ স্বীকার করার চেষ্টা করছে। তালাবাসির স্বার্থে ও কপোতাক্ষ নদের অস্তিত্বের প্রশ্নে কোনো আপোষ করা হবে না। কোনো প্রকার হুমকি-ধামকিতে কেউ এ আন্দোলন বন্ধ করতে পারবে না। আগের সীমানায় বাঁধ দিলে জেঁগে উঠা চরের বাণিজ্যে হবেনা উল্লেখ আরও বলা হয়,নতুন করে বাঁধ না দিলে জেঁগে উঠা চর ভুমিদুস্যদের কাছে বিক্রি করা যাচ্ছে না। যে কারনে তারা নতুন বাঁধ দিতে উঠে পড়ে লেগেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কপোতক্ষ নদের বুকে বেড়িবাঁধ নির্মাণ নিয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মশিউর রহমান সরেজমিনে পরিদর্শনে এসে ৫০ মিটার (১০৮ হাত) সরিয়ে বাঁধ নির্মান করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ কপোতাক্ষ নদীর বুকে ভেড়ীবাঁধ নির্মান করে নদীকে সংকুচিত করার প্রতিবাদে অবিলম্বে সকল অবৈধ বাঁধ অপসরন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং সরকারের গৃহীত প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবীতে কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন সমন্বয় কমিটি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছর (কাবিখা) কাজের বিনিময় খাদ্য প্রকল্পের আওতায় তালা সদর ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষ তালার মেলা বাজার হতে তালা বাজারের খেয়াঘাট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এবং বেসরকারী সংস্থা কারিতাস প্রায় ৫৩ লাখ টাকা ব্যায়ে তালার খলিলনগর ইউনিয়নের ‘হরিশচন্দ্রকাটি নিলু কবিরাজের বাড়ীর পাশ হতে গঙ্গারামপুর-ঘোষনগর পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার কপোতাক্ষ নদের মাধ্য দিয়ে ভেড়িবাঁধ নির্মান করা হচ্ছে।