রাজশাহীতে গোয়েন্দা পুলিশের ফেনসিডিল ব্যবসায় সম্পৃক্ততাঃ ওসি বরখাস্ত
রাজশাহী প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ রাজশাহীতে ফেনসিডিলসহ গোয়েন্দা পুলিশের তিন কনস্টেবল ধরা পড়ার ঘটনায় ৫ মার্চ বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এতে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফাজ্জল হোসেন খানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁকে সিলেট রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার গভীর রাতে ৯৫৪ বোতল ফেনসিডিলসহ ধরা পড়ার পর রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কনস্টেবল সিদ্দিকুর রহমান, আ. সামাদ, ও লালন মাহমুদকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁদের নামে নগরের রাজপাড়া থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাঁদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আজ রাজশাহী মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার মনিরুল ইসলাম তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এই প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে ফেনসিডিল চোরাচালানের সঙ্গে ওসি তোফাজ্জল হোসেন খানের সুস্পষ্ট সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। যেহেতু স্থানীয়ভাবে কোনো পরিদর্শকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া যায় না। এ জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। নির্দেশনার জন্য তদন্ত প্রতিবেদন সদর দপ্তরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ সময় রাজশাহী পুলিশ মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যায় গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা তাঁদের কার্যালয়ে নেই। সেখানে কয়েকজন কনস্টেবল রয়েছেন। তাঁরা কিছুই বলতে পারছিলেন না। তবে মহানগর পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসবিডি নিউজকে বলেন, তোফাজ্জলের হাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হত্যা মামলাটি রয়েছে। এই বিষয়গুলো তাঁর কাছ থেকে বুঝিয়ে নেয়া হচ্ছে। তা ছাড়া দীর্ঘদিনের মামলার তদন্তের অগ্রগতি এলোমেলো হয়ে যাবে। এ জন্য সময় লাগছে।
রাত সোয়া আটটার দিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুজ্জামান ওসি তোফাজ্জল হোসেন খানকে বরখাস্ত করার বিষয়ে মুখ খোলেন। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে ফেনসিডিল পাচারের ঘটনার সঙ্গে তোফাজ্জল হোসেন খানের জড়িত থাকার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে এসেছে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে যেহেতু একজন পরিদর্শকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার তাঁদের নেই, সেই জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনার জন্য তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, সিসিতে (কমান্ড সার্টিফিকেট) অন্য যে পাঁচ কনস্টেবলের নাম ছিল, তদন্তে ফেনসিডিল বহনের সঙ্গে তাঁদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। আটক তিন কনস্টেবল স্বীকারোক্তিতে অন্য পাঁচ কনস্টেবলকে বলেছেন, ‘তাঁরা ফেনসিডিল নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে ওসি স্যারের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। তোমরা বাড়ি চলে যাও। এ কথায় তাঁরা বাড়ি চলে যান। এ জন্য তাঁদের অভিযুক্ত করা হয়নি।’
তোফাজ্জল হোসেন খান ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। সেই মামলার কী হবে, জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, এ মামলার তদন্ত শেষ হয়ে এসেছে। এ জন্য তোফাজ্জল হোসেন খানকে প্রয়োজন পড়বে না। অন্যদিকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদর রেঞ্জের তত্ত্বাবধায়ক সলিমুল্লাহকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। গতক রোববার থেকে তিনি তদন্ত শুরু করেছেন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার গভীর রাতে ৯৫৪ বোতল ফেনসিডিলসহ রাজশাহী নগরের গোয়েন্দা পুলিশের তিনজন কনস্টেবল ধরা পড়েন। তাঁদের ছাড়াতে ভোর রাতে ভুয়া সিসি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ডিবি) তোফাজ্জল হোসেন খান। ম্যাজিস্ট্রেট সেই সিসিও জব্দ করেছেন।