এনজিও দুর্নীতিঃ ৫০ লাখ টাকার প্রায় ৩০ লাখ টাকাই লুটপাটের অভিযোগ
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ সাতক্ষীরার আশাশুনিতে ঘূর্ণিঝড় আইলায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য দাতা সংস্থার দেয়া ৫০ লাখ টাকার প্রায় ৩০ লাখ টাকাই লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্তের পর আশাশুনি উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তা আবুল হাসান বলছেন, ফরাসি দাতা সংস্থা এসিএফর দেয়া অর্থে নিম্নমানের শীতবস্ত্র বিতরণ করে স্থানীয় এনজিও ‘অগ্রগতি সংস্থা’ বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছে। আশাশুনির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গিয়াসউদ্দীনের নির্দেশে ওই এলাকা ঘুরে বিষয়টি তদন্ত করেন প্রকল্প কর্মকর্তা হাসান। তিনি বলেন, “দুই হাজার একশ দুর্গত পরিবারের মধ্যে এসব কম্বল, চাঁদর ও সোয়েটার বিতরণ করা হয়। এ প্রকল্প থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা লোপাটের সত্যতা পাওয়া গেছে। ২/১ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।” আশাশুনির কুল্যা গ্রামের ইউনুস হোসেনসহ বেশ কয়েকজন ত্রাণ গ্রহীতা অভিযোগ করেন, কম্বল, সোয়েটার ও চাদরের দাম কোনোভাবেই পাঁচশ’ টাকার বেশি হবে না। ত্রাণের বস্ত্রের মান দেখে দামের ব্যাপারে যে কেউ প্রশ্ন তুলবেন- এমন মন্তব্য আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার গিয়াস উদ্দীনের। তিনি বলেন, “আমি নিজেই এ ব্যাপারে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে যাদেরকে শীতবস্ত্র দেয়া হয়েছে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অভিযোগ, এসিএফ ও অগ্রগতি সংস্থা তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।”
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সংস্থা সাতক্ষীরার ‘অগ্রগতি সংস্থার’ নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সবুরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে, দাতা সংস্থা এসিএফ (ফ্রান্স) সাতক্ষীরা অফিসের লজিস্টিক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর শফিকুর রহমান জানান, ঢাকাতেই দরপত্রের মাধ্যমে শীতবস্ত্র কেনা হয়েছে। কোনো অনিয়ম করা হয়নি। ত্রাণ হিসেব দেয়া কম্বল, সোয়েটার ও চাদরের দাম নিয়ে অভিযোগ সম্পর্কে আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
একটি সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও বরগুনা জেলার পাঁচটি উপজেলায় সাত হাজার পাঁচশ’ পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। প্রত্যেক পরিবারকে একটি করে কম্বল, চাঁদর ও সোয়েটার প্রদানের জন্য এক কোটি ৮১ লাখ ২১ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেয় এসিএফ (ফ্রান্স)।
এর মধ্যে সাতক্ষীরার আশাশুনিতে দুই হাজার একশ’ পরিবারকে বাছাই করে এই ত্রাণ প্রদান করা হয়। এসিএফ বস্ত্র ক্রয় মূল্য বাবদ এক কোটি ৫৭ লাখ ৬০ হাজার ৪০০ টাকা, পরিহন বাবদ ছয় লাখ ৫৫ হাজার টাকা, ডিজিবিলিটি বাবদ ৪৫ হাজার টাকা, বিতরনকারীদের পারিশ্রমিক বাবদ ১৬ লাখ ১১ হাজার একশ’ টাকা ও অডিট বাবদ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ ভাগ করে দেয়। এতে দেখা যায়, প্রতি পরিবারের ত্রাণের জন্য বরাদ্দ ছিল দুই হাজার একশ’ টাকা। আশাশুনিতে শীতবস্ত্র ক্রয় বাবদ ৪৪ লাখ ১২ হাজর নয়শ’ ১২ টাকা বরাদ্দ ছিলো। অভিযোগকারীরা বলছেন, পবিবার প্রতি দুই হাজার ১০১ টাকা মূল্যের শীতবস্ত্র বিতরণের কথা থাকলেও ৫/৬শ’ টাকা মূল্যের শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখতে সরকারী নীতি ও দাতা সংস্থার শর্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের সম্পৃক্ত করে এসব ত্রাণ বিতরণ করার কথা। পরে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দীনের কাছে প্রত্যায়নপত্র নিতে গেলে তার সন্দেহ হয়। প্রত্যায়নপত্র না দিয়ে তিনি উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তাকে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন।