চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি হবে ৪৬ হাজার ৩২৮ কোটি টাকাঃ অর্থমন্ত্রী
দীপু রহমান,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি হবে ৪৬ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ১ শতাংশ, যা বিগত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি বাড়ায় এ বাড়তি দায় গিয়ে পড়বে পরবর্তী বছরে। আবার ভর্তুকি-ব্যয় কমাতে সরকার আগামী দিনেও জ্বালানির (গ্যাস-বিদ্যুত্) দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, যতক্ষণ না জ্বালানির দেশীয় মূল্য আমদানি-মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, ততক্ষণ এ সমন্বয় অব্যাহত থাকবে।
২০১১-১২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে ১১ মার্চ (রোববার) এসব কথা বলেন। স্পিকার আবদুল হামিদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। অর্থমন্ত্রী এ সময় পরিষ্কার ভাষায় স্বীকার করে নেন যে জ্বালানি খাতের ভর্তুকি মেটাতে ও সরকারের রাজস্ব ব্যয়ের প্রভাবে মূল্যস্ফীতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এ প্রসঙ্গে সার্বিক অর্থনীতির ওপর চাপ বিবেচনা করে ব্যয় নিয়ন্ত্রণে সরকারের চেষ্টার কথাও জানান সংসদকে। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি খাত হতে উত্সারিত বাড়তি ভর্তুকি-ব্যয়ের কারণে ও সম্প্রসারণশীল রাজস্ব খাতের প্রভাবে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি, লেনদেন ভারসাম্যে অস্থিরতা, বেসরকারি ঋণ-সংকটসহ সার্বিক অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য চাপ বিবেচনা করে ব্যয় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ অর্থমন্ত্রী জানান, বাজেটে ভর্তুকি ধরা হয়েছিল জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ বা ২০ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। কিন্তু ভর্তুকি বেড়ে হচ্ছে জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আবদুল মুহিত বলেন, ‘এ বছর ভর্তুকি বাবদ জিডিপির ৩ দশমিক ২ শতাংশ বরাদ্দ প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাকি ১ দশমিক ১ শতাংশ আগামী অর্থবছরে পরিশোধের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ অর্থমন্ত্রী জানান, ভর্তুকি-ব্যয়ের কারণেই মূলত অনুন্নয়ন ব্যয় বেড়েছে। ভর্তুকির চাপ কমানো ও সরকারের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার উদ্দেশ্যে বিদ্যুত্ ও জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে একাধিকবার দাম সমন্বয় করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের সমন্বয় অব্যাহত থাকবে।
আবদুল মুহিত বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সরকারি ব্যয় বাড়লেও (৪১ শতাংশ) বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবহার (২৪ শতাংশ) আশানুরূপ হারে বাড়েনি। ডিসেম্বর পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মোট বরাদ্দের ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রকল্প সাহায্য বাস্তবায়নের হার মাত্র ১৭ শতাংশ, যা চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ কারণে এডিপি সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে সাড়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানান, দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশ। তবে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রধান রপ্তানিকারক দেশগুলোর অর্থনীতিতে শ্লথগতির কারণে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কিছুটা নিম্নমুখী। অন্যদিকে খাদ্য আমদানি কমে আসা এবং মুদ্রানীতিতে ধারাবাহিক ও সময়োপযোগী বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে আমদানি-ব্যয় কমতে শুরু করেছে। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আমদানি ব্যয়ে প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ। একই সময়ে রেমিট্যান্স (প্রবাসী-আয়) আয়প্রবাহ বেড়েছে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রবাসে শ্রমিকের অভিবাসনসংখ্যা বেড়েছে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন করে এক লাখ এক হাজার ২৭৭ জনের অভিবাসন হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ডিসেম্বরে হয়েছিল ৯৬৩ কোটি ডলার।
অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মূলত খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ফলে সামগ্রিকভাবে এ সময় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানিসহ খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পাশের দেশ, বিশেষ করে ভারতের উচ্চ মূল্যস্ফীতি, টাকার অবচিতি, ভর্তুকি-ব্যয় বৃদ্ধিজনিত সরকারি ঋণ গ্রহণ ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বীজ টাকা (কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া) সৃষ্টি মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কাজ করেছে।’ প্রতিবেদনের শেষ ভাগে এসে অর্থমন্ত্রী সমালোচকদের বিষয়ে বলেন, ‘এ দেশের বিভিন্ন শ্রেণীর পেশাজীবীদের কেউ কেউ সব সময়ই নেতিবাচক মনোভাবাপন্নে তিলকে তাল করতে বড় আনন্দ পান। যখনই কোনো দুঃসংবাদ পান, তখনই তা সাগ্রহে গ্রহণ করেন এবং বিষয়টির অগ্র-পশ্চাত্ বিবেচনা ও বিচার-বিশ্লেষণ না করে তাত্ক্ষণিক অ্যাডহক নেতিবাচক মন্তব্য করতে অত্যন্ত উত্সাহী থাকেন। সরকারকে সাবধান করার জন্য এই প্রক্রিয়া যথাযথ হলেও এর যে হতাশাজনক প্রতিক্রিয়া হয়, তা সমাজ ও বহির্বিশ্বের জন্য একান্তই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং দেশের জন্য ক্ষতিকারক বলে আমি মনে করি।’