‘‘টেরম টেরম যুদ্ধ’’
এই মুহুর্তে দিনক্ষণ ঠিক মনে করতে পারছি না। যতদুর সম্ভব ৮০ দশকের শেষের দিককার কথা। সে সময় দেশের একমাত্র টিভি চ্যানেল বিটিভিতে একটি ধারাবাহিক নাটক বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। নাটকের নামটিও মনে নেই। দিন গড়ানোর কারনে স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেছে নামটি। তবে ঐ নাটকের দু’টি চরিত্রের কথা বেশ মনে আছে আমার। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ফেরদৌসি মজুমদার। নাটকের আরেক মজার চরিত্র রমিজ। সম্ভবত আজিজুল হাকিম সেই চরিত্রের অভিনেতা। রমিজ আধপাগলা কিসিমের লোক। এপাড়া ওপাড়া ঘুরে ঘুরে একটি বুলিই আউড়াতো ‘‘ টেরম টেরম যুদ্ধ হবে তোমার সঙ্গে আমার সঙ্গে’’। নাটকটি ছিল গ্রামভিক্তিক একটি নাটক। গ্রামের অধিকাংশ লোকই কোন না কোন কারনে একে অপরের সাথে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত থাকতো।তাতে বেশ বিরক্ত রমিজ। রমিজের কষ্টে তাতে এসে যেতোনা গ্রামবাসীর। সেই নাটকের রমিজের সেই টেরম টেরম যুদ্ধের সাথে আমাদের রাজনীতিবিদদের হাল আমলে ঝগড়া বিবাদের বেশ মিল পাচ্ছি। নেতা নেত্রীদের কথার যুদ্ধ চলছে। ১২ মার্চ হবে দখল আর পেশী শক্তির যুদ্ধ। সরকারি এবং বিরোধীদলের নেতাদের বক্তৃতায় হুুঙ্কার; হুমকী ধমকীতে দেশবাসী রিতিমত ভয়ে তটস্থ হয়ে পরেছে। ত্বতাবাবধায়ক সরকারের দাবী মানা না হলে বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ঢাকা না ছাড়ার নির্দেশ; সেই সঙ্গে উল্টাপাল্ট কিছু হলে খবর আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন সব গরম কথামালায় আমজনতার মাথার মগজ গরম হওয়ার জো হয়েছে। সারই প্রশ্ন কি হবে সে দিন? ১২ মার্চের ‘‘’চলো চলো ঢাকা চলো’ শেস্নাগানে বিএনপির মহাসমাবেশ কি নির্বিঘ্ন ও শামিত্মপূর্ণ হবে? নাকি সরকার ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষে রক্তে রঞ্জিত হবে ঢাকার রাজপথ? অলিতে গলিতে কী বইবে লাশের নহর ? ১২ মার্চ কী আটক যুদ্ধাপারাধীদের অবমুক্ত করে আনবে বিএনপি-জামায়েত শিবির ? ৭১ এর ঘাতক দালাদদের রক্ষায় সেদিন কী ঢাকা লন্ডভন্ড করে দেয়া হবে ? নাকি এই এক দিনের কর্মসূচিতেই সরকারের পতন ঘটে যাবে ? শেখ হাসিনা কী প্রধানমন্ত্রিত্ব হারাবেন ? নাকি আরেকটি ১/১১ আসছে দেশে ? নাকী সরকারী দলের শক্ত প্রতিরোধের মুখে কাছে ঘেঁষতেই অক্ষম হবে বিরোধীদল ? এমন হাজারও প্রাশ্ন দেশবাসীর মনে। জনমনে এ নিয়েই এখন যত শঙ্কা। প্রতিদিন দু’দলের শীর্ষ নেতাদের হুমকি-পাল্টা হুমকির কারণেই রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের আশঙ্কা করা হচেছ বেশি। উভয় দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ও হুমকি-ধমকিতে রাজপথে উত্তাপ বাড়ছে। এতে করে সংঘষের্র আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমরা উদ্বিগ্ন। দু’দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতি অনুরোধ করব, সতর্কতার সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করম্নন, যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। কার্যত মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। উভয় দলকে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা স্মরণ করে সহনশীল মনোভাব নিয়ে ‘সমঝোতার’ রাজনীতি ও ‘সতর্কতা’ অবলম্বনের আহবান জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশেস্নক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। রাজনীতি করলে, ক্ষমতায় থাকলে সভ্যতা-ভব্যতার সবকিছু কি বিসর্জন দিতে হয়? মাননীয় এমপিগণ , মাননীয় মন্ত্রীরা, মাননীয় বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা, আপনারা কি একবারও ভেবে দেখেছেন, দেশবাসীর কাছে কী দৃষ্টামত্ম রেখে যাচেছন আপনারা ? সংগাতের দিকে আপনাদেও কী না গুলেই নয়। আাপনাদেও কাছে কী মানে হয় রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য, না ক্ষমতার দম্ভ প্রকাশের জন্য? আজকের সরকারের মন্ত্রী-সাংসদেরা যেভাবে দম্ভ দেখাচেছন, বিএনপির এমপি নেতারা যেভাবে সংগাতের পথে দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন তা কী আপনাদের সমচিন হচ্ছে ? মার্চের কর্মসূচিকে ঘিরে দুদলের নেতাকর্মীরা একে অন্যকে অশালীন ভাষায় হুমকির মাধ্যমে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। নেতানেত্রীদের শিষ্টাচার বহির্ভূত বক্তব্য শোনায় অভ্যসত্ম দেশের মানুষ। আওয়ামী লীগ নেতা বলেছেন, বিএনপি ঢাকা দখল করবে আর আওয়ামী লীগ তামুক খাবে এটা হবে না। ঢাকা কি কারো নিজস্ব সম্পত্তি? ঢাকা দখলের প্রশ্ন আসে কিভাবে? নেতানেত্রীর কথা শুনে মনে হয়, দেশটা তাদের ইজারা দেয়া হয়েছে। দুদলই দেশের জন্য নয়, ব্যক্তিস্বার্থে ক্ষমতায় যাওয়ার লোভেই রাজনীতিকে আশ্রয় করে কুৎসিত বক্তব্য দিয়ে দেশকে সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
১২ মার্চেও বিএনপির সমাবেশের দুই দিন পর সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররাও। মানুষের আশঙ্কা: রাজপথে পাল্টাপাল্টি এসব শক্তির মহড়া কোথায় নিয়ে যাবে দেশকে? কী প্রমাণ করতে চাইছে বড় দুটো দল, বিশাল বিশাল জনসমাবেশ করে কী বার্তা দিতে চাচ্ছে তারা দেশের মানুষকে?১২ মার্চ কর্মসূচির পর কী? বিএনপি কি এই দিনের জনসমাবেশের শক্তি ও উদ্যমকে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তর করার ক্ষমতা রাখে? আগামী মে মাসে এইচএসসি পরীক্ষা এবং প্রায় একই সময়ের বর্ষাকাল আন্দোলন অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে বিরোধী দলগুলোর জন্য। বাংলাদেশের ইতিহাসও বলে, সরকারবিরোধী আন্দোলনের সেরা ও অনুকূল সময় হচ্ছে সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত। বিএনপি বা তার মিত্রদের কেউ যদি হঠকারী পথে যেতে চায়, তাহলে সম্ভব হলে আগামী এক মাসেই সরকার পতনের পরিস্থিতি সৃষ্টির চিন্তা থাকবে তাদের। এ পথ খুবই বিপজ্জনক, ঝুঁকিপূর্ণ, এমনকি আত্মঘাতী হয়ে উঠতে পারে। যেকোনো বিবেকবান মানুষের কাম্য হবে বরং শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টাই যেন অব্যাহত রাখে বিএনপি। তার সঙ্গে সঙ্গে আগামী নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে যৌক্তিক বিকল্প উত্থাপন করে সংসদ ও সংসদের বাইরে আলোচনার জন্য আন্তরিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে দলটিকে।
১২ মার্চকে ঘিরে জনগন যতনা শংঙ্কিত তার চেয়ে বেশী শংঙ্কিত সরকারীদল। সরকারি মহলে এত তোলপাড় কেন? তাহলে ১২ মাচের্র কর্মসূচির পক্ষে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যত না প্রচার করছেন, তার চেয়ে বেশি করছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ১২ মার্চ বিএনপি ও তার সমর্থিত জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা দরগুলো ‘ঢাকা চলো’ সমাবেশের অনুষ্ঠানে সাত থেকে আট লাখ লোকের সমাবেশ ঘটানোর আয়োজন করছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ সমাবেশ হবে সংক্ষুব্ধ। একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জঙ্গিবাদী দলগুলো ওই সমাবেশে অংশগ্রহণ করে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ নেবে। অনেকের ধারণা, প্রধান বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন চালালেও তাদের মূল উদ্দেশ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম পন্ড করা। ১২ মার্চ সোমবার লাখ লাখ লোক অতিরিক্ত জমা হলে ঢাকার জনজীবন ও কর্মজীবন চাপের মুখে পড়বে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। শোনা যাচ্ছে, দেশের সব জেলা থেকে বিএনপির মোট ৪৫টি কমিটি লোক জড়ো করা আর নিয়ে আসার দায়িত্ব পালন করবে। ঢাকায় ৯ মার্চ থেকে লোক আনা হবে। বিরোধী জোটের অন্য শরিক দলগুলোও অনুরূপভাবে লোক জমায়েত করবে।এতে ঐ দিনটি একটি সাংঘর্ষিক সময় পার করবে। জনগণের এ উদ্বেগের কারণগুলো নির্ণয় করা দরকার। ক্ষমতাসীন দল এবং ক্ষমতায় যেতে চায় দলটির মধ্যে দড়িটানাটানির রেওয়াজ সব দেশেই আছে। এটি আমেরিকায় যেমন সত্য, বাংলাদেশেও। স্বাধীনতার অগ্নিঝরা উত্তাল মার্চে দেশের রাজনীতিও উত্তাল হয়ে উঠেছোমাদেও দেশ। দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল ও জোটের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছে। সরকার ও বিরোধী দলগুলো একইদিনে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি না দিলেও মাঠ দখলে রাখার সর্বোচচ প্রস্তুতি নিয়ে তাদের পরিকল্পনা সাজিয়েছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ৭ মাচের্র গণর্যালি ও ১৪ মাচের্র মহাসমাবেশ এবং বিএনপিসহ ৪ দলীয় জোটের ১২ মাচের্র চলো চলো ঢাকা চলো কর্মসূচি রাজনীতিকে উত্তাল করে তুলেছে। বিএনপিসহ জোট সঙ্গীরা যেকোনো মূল্যে ১২ মাচের্র কর্মসূচি সফল করা ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের যেকোনো মূল্যে নৈরাজ্য প্রতিহত করার ঘোষণা নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে নানা আশঙ্কা। এদিকে কর্মসূচি নিয়ে সরকার ও বিরোধীদলীয় নেতাদের মধ্যে চলছে তুমুল বাকযুদ্ধ। সরকারদলীয় নেতারা বলছেন, ৭ মাচের্র গণর্যালিকে লাখো মানুষের জনসমুদ্রে পরিণত করে বিএনপির ১২ মার্চ ঢাকা দখলের সাধ মিটিয়ে দেয়া হবে। ওইদিন প্রমাণ হবে, বিএনপি-জামায়াতের চেয়ে আওয়ামী লীগের শক্তি-সামর্থ্য অনেক বেশি।
দুই পক্ষের নেতারা তাদের নিজ নিজ কর্মসূচি সফল করতে এরই মধ্যে একাধিক বর্ধিত সভা, জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে কর্মিসমাবেশ, গণসংযোগ, সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যৌথসভা, সংসদ সদস্য এবং সমমনা পেশাজীবী ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। এসব বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী নিজ নিজ দলে রণপ্রস্তুতি চলছে। জানা গেছে, রাজপথে কর্তৃত্ব বজায় রাখতে ও রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দল ও জোটকে চাপে রাখতে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট ধারাবাহিক কর্মসূচি শুরু করেছে এ মাসে। আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল এখন পর্যন্ত মার্চ জুড়ে দুটি মহাসমাবেশ, একটি গণর্যালি, ২টি মানববন্ধন ও একটি সমাবেশে ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে ৭ মার্চ ঢাকায় গণর্যালি কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র রম্নখতে ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের দাবিতে ৯ মার্চ জেলায় জেলায় এবং ১১ মার্চ রাজধানীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে ১৪ দল। একই দাবিতে ১৪ মার্চ ঢাকায় ও ২৩ মার্চ খুলনায় মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ১৪ দল। অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ শীর্ষক মহাসমাবেশের মাধ্যমে সারাদেশের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে তুলতে চাইছে। এছাড়া ১২ মাচের্র মহাসমাবেশ থেকে আনেদালনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সেদিন ঘোষণা হবে ধারাবাহিক কর্মসূচি। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, মহাসমাবেশের নামে ঢাকা দখলের পরিকল্পনা করছে বিএনপি-জামায়াত। এর মধ্য দিয়ে সরকার পতনের টার্গেটও আছে তাদের। এ কারণে সরকারও বেশ সতর্ক হয়ে আছে। নাশকতার সন্দেহ থাকায় ১২ মাচের্র মহাসমাবেশ মাথায় রেখে নানামুখী পরিকল্পনাও রয়েছে। মহাসমাবেশে অংশ নিতে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের একটি অংশ গ্রেফতার এড়াতে আগেভাগেই ঢাকায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ জন্য ঢাকার আবাসিক হোটেলগুলোতে বিশেষ অভিযান চালাতে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঝুঁকি এড়াতে সন্দেহভাজন বিএনপি নেতাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রাখার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মহাসমাবেশ সফল করতে জেলা সফরে যেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে ইতিমধ্যে গঠন করা হয়েছে ৪২টি কমিটি। বর্তমানে সারাদেশ সফরে রয়েছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদের সমন্বয়ে মহাসমাবেশের প্রস্তুতির জন্য গঠন করা হয়েছে আটটি উপকমিটি। কমিটিগুলো হচ্ছেথ ব্যবস্থাপনা, প্রচার, আপ্যায়ন, দফতর, আবাসন, চিকিৎসা, আইন-শৃঙ্খলা ও আইন সহায়তা, মঞ্চ প্রভৃতি।ঢাকায় প্রচার ও গণসংযোগ চালাতে থানাভিত্তিক ৪২টি এবং ওয়ার্ডভিত্তিক ১০০টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওইসব কমিটির সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রচার চালানোর জন্য দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকার প্রবেশমুখে আটটি স্থানে মহাসমাবেশে আগত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের স্বাগত জানাবে দলটি। স্থানগুলো হচ্ছেথ যাত্রাবাড়ী, সদরঘাট, মহাখালী, গাবতলী, কমলাপুর, আজমপুর, নয়াবাজার, শ্যামপুর বুঙ্গিগঙ্গা সেতুর প্রান্ত। সকাল থেকে ওইসব স্থানে মঞ্চ তৈরি করে নেতাকর্মীরা চেয়ারে বসে থাকবেন।
আমরা গত ৩ দশক ধরে দেখে আসছি শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার হাতেই ঘুরে ফিরে থাকে দেশের রাজনীতির চাবিকাঠি। মাঝখানে ২ বছর বাদে ২ দশক ধরে পালাক্রমে তারাই একজন দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং আরেকজন বিরোধী দলীয় নেত্রী। এ ২ শীর্ষ নেত্রী যখন পরস্পরবিরোধী নিজ নিজ অবস্থানে অনড় তখন রাজনীতিতে সংকট ও অচলাবস্থা সৃষ্টি হবেথ এটাই স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই। আর এ সংকট অব্যাহত থাকার আশঙ্কাই প্রবল। কারণ সবাই জানে, সময় বদলালেও ২ নেত্রীর মনমানসিকতা এবং রাজনীতির ধারা বদলায় না। ২ জনই সরকারে থাকলে এক রকম অবস্থান নেন আর বিরোধী দলে থাকলে অন্য রকম। আর যখন যেখানেই থাকুন না কেন, বদলায় না তাদের জেদি মনোভাব। ফলে রাজনৈতিক সংকটেরও স্থায়ী সমাধান হয় না, কাটে না দেশবাসীর উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। এ অবস্থায় দেশের রাজনীতি ক্ষেত্রে সংকটের কালো ছায়া কেবল প্রলম্বিতই হচ্ছে। মাঝে মধ্যে আশার আলো দেখা দিলেও জট যেন কিছুতেই খুলছে না, বরং নতুন জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে রাজনীতিতে প্রধান ইস্যু হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রশ্ন। এ ব্যাপারে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার সুবাতাম বইলেও তা বাসত্মবায়নের কোনো সম্ভাবনাই চোখে পড়ে না। আসলে রাজনীতি নিয়ে লিখতে গেলে একই কথা বারবার ঘুরে-ফিরে আসে এবং তা হতাশায় ভরা। কারন এর আগেও এধেশে বহুবার আমরা এমন অবস্থা দেখেছি। বিদেশের চাপের পরেও সমঝতায় বসানো যায়নি দু’দলকে। সমঝোতা ছিল কেবলই মরিচিকা মাত্র। তাই আশার আলো খুব কমই দেখা যায় এবং আশার কথা বলার সুযোগও কম। তারপরও রাজনীতি নিয়ে লিখতে হয়। কারণ রাজনীতির মারপ্যাঁচেই ঘুরছে মানুষের ভাগ্যের চাকা। আর সংবাদপত্র পাঠকদের সবচেয়ে প্রিয় বিষয়টিও রাজনীতিই।
দেশের বিদ্যমান অস্থিতিশীল অবস্থা জনমনে অনাস্থা এবং আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। দেশে প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি, হানাহানি, নৈরাজ্য লেগেই আছে। অথচ রাজনীতিবিদদের ও নেতৃত্বকারীদের লক্ষ্য রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিয়ে এদেশে এখন অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় দেশবাসী চায় রাজনৈতিক সমঝোতা। আমাদের বিরোধী এবং সরকারি উভয় দলকেই দেশের ১৬ কোটি মানুষের শামিত্মর লক্ষ্য সমঝোতার দিকে এগিয়ে আসতে হবে। আর এখনই দেশকে স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে পরিণত করার সময়। আর এর জন্য প্রয়োজন ঐক্যমত। নেতৃত্বকারী এবং রাজনৈতিক সকল দলগুলোকে হিংসা বা প্রতিহিংসা নয়, দেশকে ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রকৃত ভালবাসতে হবে। তাহলে দেশে হয়তো পুনরায় আশার আলো দেখা দিবে। আর এর অন্যথা করলেই দেশ যে ধাবিত হবে ১/১১ দিকে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
দেশের বড় দু’দলের নেত্রীর কর্মকান্ডে প্রশ্ন এসে যায়,দেশের রাজনীতি কি এভাবেই চলবে? এভাবেই কি সরকারি ও বিরোধী দল যুদ্ধ জিইয়ে রাখবে? এভাবেই কি আমরা সর্বনাশের পথে হাঁটতে থাকব? আপনারা ভেবে দেখেছেন কী মার্চ ১৯৭১ আর মার্চ ২০১২-এর মধ্যে কত আকাশ-পাতাল ফাড়াক। একাত্তরের মার্চে স্বাধীনতা লাভের জন্য সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। আজ জাতি পুরো বিভক্ত। কোনো একটি জাতীয় ইস্যুতে প্রধান দুটি দল একমত হতে পারছে না। একদল যদি বলে সূর্য পূর্ব দিকে উঠবে, অন্য দল বলবে পশ্চিমে। যেকোনো জাতির প্রধান শক্তি হলো জাতীয় ঐক্যমত। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার পর একদিনের জন্যও সেই মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি এদেশে। স্বাধীনতার ৪১তম বার্ষিকীতে রাজনীতিকেরা কি মনে রেখেছেন শহীদদের কথা? তাঁরা কি একবারও ভেবে দেখেছেন, ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়ে যে দেশটি স্বাধীন করে গেছেন, আমরা তাঁদের জন্য কী করেছি, কী দিয়েছি? তাঁরা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে আদর্শকে সামনে রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তাঁদের জন্য আপনারা কী করেছেন? তাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে আপনারা আজ প্রধানমন্ত্রী কেউ বিরোধী দলের নেতা। তাঁদের জন্যই তো এই রাষ্ট্র, এই সরকার ও এই বিরোধী দল। তাদেও কথা বেবে হলেওামত্মত দেশকে ভারবাসুন, দেশের মানুষের কথা ভাবুন। দেশের ১৬ কোটি মানুষ, প্রতি পাঁচ বছর পর যাঁদের ভোটে আপনারা নির্বাচিত হন, তাঁদের জন্য কী করেছেন, কী করবেন? জনগনের স্বার্থে হলেও তা ভাববার প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে জনগন কিন্তু আপনাদের একদিন এর জবাব ঠিকি দেবে। অতএব সাবধান হওয়ার সময় এখনই।
-(লেখক : লায়ন মীর আব্দুল আলীম, সাংবাদিক,কলামিষ্ট, newsstore09@gmail.com )