কূটনীতিক হত্যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব না পড়লেই ভালো
রাজধানীর অভিজাত এলাকার কূটনৈতিক পাড়ায় সৌদি দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি সৌদি নাগরিক খালাফ আল আলীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। খোদ রাজধানী ঢাকার কূটনীতিক পাড়া হিসেবে পরিচিত গুলশান এলাকায় খুন করা হয় তাঁকে। ঢাকায় কোনও বিদেশী দুতাবাস কর্মকর্তা খুনের ঘটনা এই প্রথম। গুলশান কূটনৈতিক জোন। রাজধানীর সবচেয়ে নিরাপদ এলাকা বলে চিহ্নিত। বলা হয়, কূটনৈতিক জোন নিশি্ছদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনীর এলাকা। আর এখানেই খুন হলেন সৌদি দুতাবাসে কর্মরত খালাফ আল আলী। খুবই পরিকল্পিত হত্যাকান্ড এটি। খুব কাছ থেকে খালাফকে মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হতে পারে। খুনিরা গুলি করে প্রাইভেটকারে চড়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে গেছে । অথচ কূটনৈতিক এলাকায় পুলিশের নজরদারি একটু বেশি থাকার কথা। এজন্য বিশেষ ব্যবস্থা ও বাহিনীও কার্যকর আছে। এর মধ্যে দিয়ে কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাটাই চোখে পড়ে। নিরাপত্তার শৈথিল্যের কারণেই অপরাধ সংঘটনের পর অপরাধীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। কূটনীতিক এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে নিশি্ছদ্র নয় সেটা আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। সরকারকে অবশ্যই কূটনীতিক এলাকার নিরাপত্তা দুর্বলতা দূর করতে হবে। খুনিরা যে পেশাদার তা মোটামুটি নিশ্চিত আমাদের গেয়েন্দারা। বাংলাদেশকে আমত্মর্জাতিকভাবে হেয় করতেই এমন হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটান হতে পারে এমন মমত্মব্য করেছে দেশের পত্রপত্রিকা গুলো। বাংলাদেশে সৌদি দূতাবাসের নাগরিককে এভাবে হত্যার পেছনে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তবে খালাফ পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের শিকার তাতে কোন সনেদহ নেই। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আমত্মর্জাতিকভাবে হেয় করতেই খালাফকে হত্যা করা হতে পারে। এমন পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাত করার কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। এর আগে সরকারের পতন ঘটানোর জন্য সম্প্রতি সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী মহলটি। সামরিক অভ্যুত্থানের তদমত্ম ও বিচারকার্য শেষ না হতেই সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ইতোপূর্বে যুদ্ধাপরাধীর বিচার বাধাগ্রসত্ম করতে এই মহলটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে মাঠে নামিয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা সরকারের উচ্চপর্যায়ে রিপোর্ট দিয়েছে। এটা কোন ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তের হাতে খুন হওয়ার ঘটনা নয় বলে তদমত্মকারীদের ধারণা। সৌদিও সাথে সরকারের সম্পর্কের অবনতীর ঘটারেনার অপচেষ্টার কথাও উঠে আসছে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জোরে সোরেই বলেছেন, বিদেশিরাও আজ বাংলাদেশে নিরাপদ নয়। এই সরকার বেডরম্নমে নিরাপত্তা দিতে পারছে না, রাসত্মাঘাটে নিরাপত্তা দিতে পারছে না, এমনকি বিদেশিদেরর নিরাপত্তা দিতে পারছে না। এমন বক্তব্য ভিনদেশীদের মধ্যে আরও আতংক তৈরি করবে বৈকি। যাই ঘটুক না কেন এ হত্যা কান্ড সুখকর নয় বাংলাদেশের জন্য। সরকারের পÿ থেকে বারবার বলা হচ্ছে দুদেশের মধ্যে এ জন্য কোনপ্রভাব পরবে না। কিন্তু বহিবিশ্বে বাঙ্গালীর প্রতি যে আতংক তৈরি হচ্ছে তা আমরা সুধরে নেব কি করে ? সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে বর্তমানে বৈধ ২৬ লাখসহ ৪০ লাখ বাংলাদেশি। ৮ বাংলাদেশী সৌদি আরবে যে হত্যার ঘটনা ঘটালো আর তাদেও শিরচ্ছেদেও ঘটনায় পুরো বাংলাদেশীদেও মাথা কাটা গেছে। এই কজনের জন্যই ৪০ লাখ বাংলাদেশীকে বিশাবস করতে পারছে না সৌদিয়ানরা। ৪০ লাখ বাংলাদেশির অধিকাংশই কঠোর পরিশ্রমি বিশাবাসী এবং সৎ হওয়ার পরও তাদেও কারনে এরাও কোথাও বিশ্বাস অর্জ করতে পারছে না। এর পর বাংলাদেশে সৌদি দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি খুন হওয়ার পর বাংলাদেশী প্রবাসিদেও অবস্থান কোয় গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়।
একজন বিদেশী নাগরিক এভাবে খুন হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য সত্যিই খুব লজ্জার। বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশীদেও জন্য তা সত্যিই খুব আতঙ্কের। এ ধরনের হত্যাকান্ডের ফলে বিদেশীরা বাংলাদেশে আসতে ভয় পাবেন। এতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। বিশেষ করে সৌদি আরবে বহু বাংলাদেশী অবস্থান করেন। বাংলাদেশে সৌদি দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা নিজ বাসার সামনে এভাবে খুন হবেন ভাবাই যায় না। এতে সৌদি আরব প্রবাসী বাংলাদেশীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে । জাতীয় দৈনিকের এক সংবাদে জানা গেছে নিহত খালাফ নাকি প্রায়ই অভিযোগ করতেন, তাঁর প্রিয় বাইসাইকেলটি কে বা কারা প্রায় সময়ই নষ্ট করে রাখে। এতে খালাফ বিরক্তি প্রকাশ করতেন। ওইদিন খালাফ বাইসাইকেল নষ্ট থাকায় হেঁটেই ব্যায়াম করতে বের হন। এ ঘটনা থেকে বুঝা যায় তাকে কেউ না কেতউ আগে থেকেই উত্যক্ত করতো।পত্রিকামেত্ম আরও জানতে পারলাম ১২ মার্চ বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য কেউ এটি ঘটাতে পারে। এই হত্যাকা-কে পূর্ব পরিকল্পিত এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য বলে তদমত্মকারীরা প্রাথমকি ধারণায় উপনীত হয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, হত্যাকান্ডের ধরন রহস্যময়। কি কারণে সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে তার অনুসন্ধান চলছে।
সৌদি আরবের কোনও পদস্থ নাগরীক বাংলাদেশে খুন হওয়ার ঘটনার একটা আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। কম করে ২০ লক্ষ বাংলাদেশি বর্তমানে সৌদির বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তাই এই হত্যাকান্ডকে অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশের রাজনীতিকদের একাংশ। এই ঘটনার পরপরই সারা বিশ্বে সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সৌদী আরবে বাংলাদেশী প্রবাসীরা উদ্বেগ উৎকন্ঠা ও চরম আতঙ্কের মাঝে দিন কাটাচ্ছেন। প্রবাসীরা মনে করেন, বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার অভাবে সৌদী আরবে প্রবাসীরা নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। এহেন অবস্থায় সৌদী আরবের একজন দূতাবাস কর্মকর্তা খুনের ঘটনায় পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে চলে যাবে। কেউ কেউ বলেছেন জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় ব্যর্থ এই সরকার সৌদী কর্মকর্তা খুনের দায় কিছুতেই এড়াতে পারেন না। এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার না হলে সরকার গড়িমসি করলে সৌদী আরব থেকে সব বাংলাদেশীদের খালি হাতে ফিরে যেতে হতে পারে। কয়েক মাস আগে সেখানে খুনের দায়ে ৮ বাংলাদেশীর শিরচ্ছেদের ঘটনা নিয়েও পানি অনেক ঘোলা হয়েছে। প্রবাসীরা বলেছেন, অবিলম্বে এই হত্যাকান্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টামত্মমূলক শাসিত্ম দিতে হবে। অন্যথায় প্রবাসীরা কোনরূপ প্রতিকূল অবস্থার স্বীকার হলে এর সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। বিষয়টি চরম মাত্রায় স্পর্শকাতর। এখন বাংলাদেশ সরকারের উচিত, এ ব্যাপারে জোরালো তৎপরতা চালানো। ব্যাপকভিত্তিক দ্রুত তদমত্ম চালিয়ে এ খুনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা। খুনিদের খুঁজে বের করতে সরকারের তৎপরতা এমনভাবে চালাতে হবে, যাতে করে সৌদি সরকারের মধ্যে আস’া জন্মে যে, খুনিদের চিহ্নিত করতে ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করতে সরকার পুরোপুরি আন্তরিক। এ ক্ষেত্রে সৌদি সরকারকে আস’ায় আনতে না পারলে আমাদের জন্য তা বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনতে হবে। ভুললে চলবে না, বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী সৌদি আরবে কমর্রত আছেন। তা ছাড়া আগামী দিনে আরো প্রচুর বাংলাদেশীর কর্মসংস’ান সে দেশে হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাইরে দুই দেশের বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পকের্র বিষয়টিও কম গুরম্নত্বের নয়।
সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে বর্তমানে বৈধ ২৬ লাখসহ ৪০ লাখ বাংলাদেশি । পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশীদের শ্রমবাজারের ৮০ শতাংশই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক। এর ৩৬ শতাংশ সৌদি আরবে। বিদেশে বাংলাদেশের প্রায় ৭৫ লাখ শ্রমিক রয়েছেন। ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয় সৌদি আরবে। এ সংখ্যা বাংলাদেশ থেকে মোট প্রেরিত জনশক্তির প্রায় ৩৭ শতাংশ। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর সৌদি আরবে গড়ে প্রায় দুলাখ জনশক্তি রফতানি হয়। তবে এ চিত্র পাল্টে যায় ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময়। হঠাৎ করেই বাংলাদেশের নাগরিকদের কাজের জন্য নতুন ভিসা, আকামা নবায়ন ও পরিবর্তন বন্ধ করে দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। এরপর চালুর আশ্বাস পাওয়া গেলেও চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে তা আর হয়নি। বরং আকামা (ওয়ার্ক পারমিট) পরিবর্তন জটিলতার কারণে সৌদি আরব থেকে প্রতি মাসেই হাজার হাজার শ্রমিক ফেরত আসছে অব্যাহতভাবে। দেশটিতে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত অর্ধেক প্রবাসী বাংলাদেশীই এখন অবৈধ। কারণ বাংলাদেশীদের ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন বন্ধ রয়েছে কয়েক বছর ধরে। বিদেশিদের জন্য সৌদি আরবে আকামার মেয়াদ থাকে তিন থেকে পাঁচ বছর। এর মধ্যেই আকামা নবায়ন বা পরিবর্তনের সুযোগ আছে। তবে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনসহ অন্য সব দেশের জন্যই আকামা নবায়ন বা পরিবর্তনের দরজা রয়েছে খোলা। সেসব দেশের নাগরিকদের কোনো ভোগান্তিও নেই। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৭৬ সাল থেকে গত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সৌদি আরবে গেছেন ২৫ লাখ ৮০ হাজার ১৯৮ জন বাংলাদেশি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সৌদি আরবে জনশক্তি রফতানি বন্ধ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তা সমাধানে অগ্রগতি নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফরকালে সৌদি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর আকামা পরিবর্তন ও নবায়ন জটিলতা দূর হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন; কিন্তু এখন পর্যন্ত তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। ঢাকায় সৌদী আরবের একজন দূতাবাস কর্মকর্তা খুনের ঘটনার কারণে শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাতে দেশের অর্থনীতিতে এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজধানীর অভিজাত গুলশান এলাকায় প্রবেশে রাতে বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট থাকার পরও অস্ত্রধারীরা কিভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটাল, স্বভাবতই তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একের পর এক মানুষ হত্যা কিংবা গুপ্তহত্যার শিকার হবে ধার আইন-শৃংখলা বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে- এটি কোনমতেই কাম্য হতে পারে না। সমাজ তার স্বাভাবিক গতিতে চলবে; মানুষ ভয়-ভীতি মুক্ত হয়ে যার যার কর্মে নিয়োজিত থাকবে- এটাই নিয়ম। এর ব্যত্যয় ঘটলেই সমাজজীবন এক অরাজক অবস্থার মধ্যে নিপতিত হয়। হত্যা, নৈরাজ্য আর বিশৃংখলার হাত থেকে সমাজ ও সমাজের মানুষকে রক্ষা করাই আইন-শৃংখলা বাহিনীর কাজ। এ বাহিনীর কাছ থেকে মানুষ যদি প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা না পায়, তাহলে কোথায় থাকে আইনের শাসন? সৌদি খালাফ খুনের ঘটনাকে পুলিশ যদিও পরিকল্পিত একটি হত্যাকান্ড বলে মনে করছে, কিন্তু এতে তাদের দায়মোচন ঘটে না। এমনিতেই দেশে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ বিভিন্নভাবে অস্বাভাবিক ও অপমৃত্যুর শিকার হচ্ছে। বিদেশীদের ক্ষেত্রেও যদি এমনটি ঘটতে থাকে, তাহলে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। এটিও কম উদ্বেগজনক নয়। সৌদি আরব আমাদের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সর্ববৃহৎ বাজার। সেখানকার শ্রমবাজারে আমাদের অবস্থান নানা কারণে নাজুক হয়ে উঠেছে। সৌদী আরবের একজন দূতাবাস কর্মকর্তা খুনের ঘটনায় যদি এটি আরও নড়বড়ে হয়ে যায়, তাহলে এদেশের কর্ম-প্রতাশী অগণিত সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ওই দেশে চাকরিরত বাংলাদেশীরাও এক কঠিন অবস্থায় পড়তে পারেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের হত্যাকান্ডের বিশেস্নষণে সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা হত্যাকান্ডটি যে পূর্ব পরিকল্পিত তাতে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই। এই কর্মকর্তা প্রতি রাতেই এগারোটার পর হাঁটতে বের হন। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে তার ভাড়া বাসার সামনের রাস্তা দিয়েই হাঁটেন তিনি। নির্জন রাতে তার হাঁটার সময়সূচী আগেই জেনে নিয়ে ঘাতক দল দিয়ে ঘটনাস্থল রেকি করানো হয়েছে। একটি মাত্র গুলি করে হত্যাকা- নিশ্চিত না করেই ঘাতকরা সটকে পড়েছে। দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় পড়ে থাকা গুলিবিদ্ধ সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পরও তার পরিচয় ছিল অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা ঘাতকচক্রকে ভাড়া করে এনে সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তার হত্যাকান্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।এটা নিছক ছিনতাইকারী বা দুর্বৃত্ত চক্রের হাতে নিহত হওয়ার ঘটনা নয় বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে। সৌদি শ্রমবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিহত সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা এই বিষয়টি দেখাশোনা করতেন। তবে এটা যে পরিকল্পিতভাবে সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপারে দেশে-বিদেশে অপপ্রচার চালানোর উদ্দেশ্যে ঘটানো হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক ও সহযোগীদের জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীরা এ জন্য বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছেন। বিরাট অঙ্কের টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা। এ পরিস্থিতিতে সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা হত্যাকা–র ঘটনার বেনিফিট পাবে যুদ্ধাপরাধীরা। আগামী ১২ মার্চ ডেডলাইনকে সামনে রেখে এই ধরনের হত্যাকা–র মতো আরও ঘটনা যে ঘটতে পারে তা গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট দিয়েছে।
এই খুনের ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার উদ্বিগ্ন। বিরোধী দলও এ ব্যাপারে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। এ ধরনের উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। কারণ ঘটনাটি দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তেমনটি ঘটলে বাংলাদেশকে বড়মাপের ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে। তাই ঘটনার জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করার পাশাপাশি যথার্থ কূটনৈতিক উদ্যোগ চালিয়ে যেতে হবে। শুধু সরকারের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে থেমে থাকলেই চলবে না। তা ছাড়া কূটনৈতিক জোনের নিরাপত্তাব্যবস’া আরো জোরদার করতে হবে, যাতে করে এ ধরনের কূটনীতিক হত্যার ঘটনা দ্বিতীয়বার ঘটার সুযোগ না হয়। দেশে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সন্ত্রাসীদের গুলিতে সৌদি কর্মকর্তার মৃত্যুর পর বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচিত হচ্ছে। এ ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে কমর্রত বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তার অভাব বোধ হবে। দেশের মানুষ আইনশৃঙ্খলাজনিত সে সন্দেহ-সংশয়ে এতদিন ভুগেছে, এখন সেই সন্দেহ-সংশয়ে পড়েছে এদেশে কমর্রত ভিনদেশি বাসিন্দারাও। তাদের সন্দেহ-সংশয় দূর করার কার্যকর পন্থা হচ্ছে সৌদি কর্মকর্তার হত্যাকারীদের দ্রুততার সঙ্গে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা। সৌদি কর্মকর্তার হত্যার রহস্য উন্মোচন করে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। খালাফ হত্যার ঘটনায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে সরকার। আমাদের কথা হচ্ছে, কেবল আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতিতে কাজ হবে না।সৌদি আরব বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী দেশ। দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের স্বার্থে সৌদি কর্মকর্তার হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার করা জরম্নরি।
-(লেখক : লায়ন মীর আব্দুল আলীম, সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও নিউজ-বাংলাদেশ ডটকমের সম্পাদক।),