ডিসিসি নির্বাচন : তরুণ আলোয় গড়বো দেশ, বঙ্গবন্ধু’র বাংলাদেশ
অনেক দিন পর কলম ধরতেই হলো; কেননা, ডিসিসি নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বাড়ছে উত্তেজনা। মানুষ মনে করছে যোগ্য নেতৃত্বেও প্রয়োজন তরম্নণ নেতৃত্ব প্রয়োজন। আর সেই তরম্নণ যদি ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে হয়; তা-ই মঙ্গল। আর এই মঙ্গল মানুষ চাইছে মনে প্রাণে। কেননা, অতিতের প্রায় সকল নেতাই দূর্নীতির আখড়াঘর হিসেবে পরিচত। যদিও বর্তমানে তাদের অনেকেই ‘এই করবো, সেই করবো, ভালো করবো’ বলে বলে মুখে ফেনা উঠিয়ে ফেলছে; কিন্তু মানুষ তাতে কান দিচ্ছে না। অন্যদিকে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত না হলেও নির্বাচনী হাওয়ায় সরগরম রাজধানী। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের বিলবোর্ড, ব্যানারে ছেয়ে গেছে ঢাকা শহর। নানা রকম সেস্নাগান আর রঙ বেরঙের ছবিসংবলিত পোস্টার শোভা পাচ্ছে সর্বত্রই। ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণে মেয়র পদে জোটবদ্ধভাবে না এককভাবে প্রার্থী দিবে ক্ষমতাসীন জোট তা এখনো স্পষ্ট নয়। আওয়ামী লীগের প্রায় ৯ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর পাশাপাশি জাতীয় পার্টি ও জাসদের তিন প্রার্থী বেশ জোরেশোরে মাঠে নেমেছেন। তবে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করার সব প্রস্ত্ততি নিচ্ছে। অন্যদিকে নির্বাচনের সম্ভাব্য দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নাগরিক ব্যানারে প্রার্থীর সংখ্যা ততই বাড়ছে। ফলে উত্তর ও দক্ষিণ ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন ও জয়লাভ করা আওয়ামী লীগের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিলস্নার মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের দুঃস্বপ্ন মুছে ফেলতে হলে ঢাকার মেয়র নির্বাচনে জয়লাভের বিকল্প কিছু ভাবা উচিত নয় সরকারি দলের। পাশাপাশি বিএনপি ডিসিসি নির্বাচনে প্রার্থী দেবে কি দেবে না তা নিশ্চিত হতে কিছু সময় লাগতে পারে। কিন্তু মহাজোট তথা আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা অনেক আগে থেকেই ওয়ার্ড, পাড়া-মহলস্নায় গণসংযোগ এবং দলীয় মনোনয়ন পেতে লবিং-গ্রুপিং শুরম্ন করেছেন। তাদের মধ্যে ঢাকা (উত্তর) সিটি করপোরেশনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার, নাগরিক কমিটির ব্যানারে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা মীর আখতার হোসাইন, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি চিত্রনায়ক ফারম্নক। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও আওলাদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন, জাতীয় পাটির্র নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ, জাসদ নেত্রী শিরিন আকতার মহাজোটের সমর্থন প্রত্যাশা করছেন। এরই মধ্যে একটি হাস্যেজ্জল পোস্টার ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বিভিন্ন মহলে। সাবেক ছাত্রনেতা ও সমাজসেবক মোমিন মেহেদী’র এই পোস্টারে ব্যবহার করা হয়েছে ‘সম্মিলিত সচেতন নাগরিক সমাজ’-এর নাম। ‘তরম্নণ আলোয় গড়বো দেশ, বঙ্গবন্ধু’র বাংলাদেশ’ শেস্নাগানকে ধারণ করে এগিয়ে আসা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব কনিষ্ট মেয়র প্রার্থী ২৭ বছর বয়সী তরম্নণ নেতা মোমিন মেহেদী মহাজোট বা আওয়ামী লীগের সমর্থন নয়, কামনা করছেন যুদ্ধাপরাধী চক্র ব্যাতিত সকল সচেতন নাগরিকের রায়। শেষ পর্যমত্ম ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণে মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে কে মাঠে থাকবেন সেটা এখনো স্পষ্ট না হলেও সমর্থন প্রত্যাশী সবাই নিজ নিজ পক্ষে জোর তদবির চালাচ্ছেন। তারা নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়মিত উপস্থিত হচ্ছেন। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকেন এমন কর্মসূচি একেবারেই বাদ দিচ্ছেন না তারা। ধারণা করা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে মহাজোটের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হবে। তবে জাসদ প্রার্থী মাঠে থাকার ব্যাপারে অনঢ় বলে শোনা যাচ্ছে। এদিকে জাতীয় পাটির্র প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ রাজধানীজুড়ে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। ধানমন্ডিতে তার নির্বাচনী প্রচারণার একটি কেন্দ্রও চালু করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম উত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে মহাজোটের সমর্থন পাচ্ছেন এমন শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত কী হয় তা নিয়ে বেশ সংশয় রয়েছে। তবে শোনা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। যদি মহাজোটের নেতাদের মতামত নিয়ে উত্তরের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ছিটকে পড়তে পারেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় পাটির্র চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ উত্তর ঢাকায় মহাজোটের প্রার্থী সমর্থনের বেলায় ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্নার কথা বলেছেন। ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদায়ী কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। সংস্কার বাদী’র গুঞ্জনে আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েন সাবেক এ ছাত্রনেতা। তারপর তিনি বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি নাগরিক ব্যানারে প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। মান্নাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার জন্য দলের নীতিনির্ধারকদের একটি বড় অংশ কাজও শুরম্ন করেছেন বলে একটি নির্ভর যোগ্য সূত্র দাবি করেছে। তারা আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের একটি অংশ মনে করে, দলের সমর্থন না পেলে মান্না স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন। সেক্ষেত্রে বিএনপি সুকৌশলে পরোক্ষভাবে তাকে সমর্থন দিলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়বে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মাহমুদুর রহমান মান্না জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থন চাইবেন। আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন। এ ব্যাপারে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি বিশ্বাস করি। আশা করি, আমিই উত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন পাব। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা আমাকেই সমর্থন দিবে। তিনি বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত।
উত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাঈদ খোকন এবং হাজী সেলিম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তবে এখানে মহাজোটের প্রার্থী হতে চান কাজী ফিরোজ রশীদ। এদিকে সাঈদ খোকন বা হাজী সেলিম যে কেউ মনোনয়ন না পেলে তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন। দক্ষিণের প্রার্থী সমর্থনের বিষয়ে বড় ধরনের বেগ পোহাতে হবে ক্ষমতাসীন জোটকে। হাজী সেলিম বলেন, আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে গিয়ে বার বার কারাবরণ, বিএনপি জামায়াতের নির্যাতনে শিকার হয়েছি। কাজেই নেত্রী আমাকেই দলীয় মনোনয়ন দিবে। মনোনয়ন যদি না পান বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময় আসলে দেখতে পারবেন। সাঈদ খোকন বলেন, আমি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমার বাবা সাবেক মেয়র ছিলেন। তার আলাদা একটা ভোট আছে বলেও দাবি করেন খোকন। কাজেই দলীয় মনোনয়নে তিনি শতভাগ আশাবাদী।
এ ব্যাপারে জাতীয় কেন্দ্রীয় নেতা কাজী ফিরোজ রশিদ সংবাদমাধ্যমকে ইতিমধ্যে বলেছেন, মহাজোটগতভাবে কোন প্রার্থী দেয়া হবে না। কারণ এটা জাতীয় কোন নির্বাচন নয়। তাছাড়া মহাজোটগতভাবে কোন প্রার্থী দেয়া হবে না। সুতরাং আমি ডিসিসি নির্বাচন করব। তিনি বলেন, মহাজোটের ব্যানারে নয়, আমি জাতীয় পাটির্র ব্যানারেই নির্বাচন করব।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিলস্না নির্বাচনের পর বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোন ঝুঁকি নিতে নারাজ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। প্রার্থী মনোনয়নে জোটবদ্ধ বা একক নির্বাচন করা হোক না বিদ্রোহী প্রার্থী থাকছেই। সে ক্ষেত্রে তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পর ঢাকাতে বিজয়ী হওয়া আওয়ামী লীগের জন্য অগ্নিপরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ্ই বিষয়টির সাথে যোগ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী তরম্নণ নেতৃত্ব দেয়ার প্রসঙ্গটিও। আর সেই সুযোগে এগিয়ে আসার চেষ্টা করছেন ঢাকা দÿÿণ সিটি কর্পোরেশনের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী মোমিন মেহেদী। সম্প্রতি তিনি সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরম্ন করেন। এই দিন তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেছেন, আমার জানা মতে, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব কনিষ্ঠ মেয়র প্রার্থী হতে যাচ্ছি আমি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ছিলাম আমি। অতএব মানুষের সমস্যাগুলো খুবই কাছ থেকে দেখে এই সিদ্ধামেত্ম আসি যে, মানুষের জন্য আমাদের মত সচেতন নাগরিকদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। তিনি এসময় ঢাকা দÿÿণ সিটি কর্পোরেশনের অধিকাংশ সাধারণ মানুষের দোয়া তাঁর সাথে রয়েছে বলেও উলেস্নখ করেন। এখন প্রশ্ন হলো- সাধারণ মানুষ শুধু দোয়াই দিবে, না সাথে রায়ও দিবে? যদি রায় দেয়; তাহলে অমত্মত রাজধানী বাসী সাবেক সকল অন্ধকার আর কালো জগতের মানুষের হাত রÿা পাবে, রÿা পাবে নগর ভবন, নগরের প্রতিটি প্রাণী আর ইট-পাথরও। এর আগে আমরা যা দেখেছি; তার পুনরাবৃত্তি আসলেই চাই না কেউ; তাই চাই স্বচ্ছ-সুন্দর-যোগ্য-তারম্নণ্যজ্জল মানুষের নেতৃত্ব। আর সেই নেতৃত্ব দিতে আমারতো মনে হয় না যে, মোমিন মেহেদী’র মত নির্ভিক তরম্নণের আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের সমর্থন লাগবে, লাগবে কালো টাকার মহড়া অথবা অস্ত্রেও ঝনঝনানি। প্রয়োজন এখন শুধু প্রত্যয়ী পথ আর মত। তাহলেই সম্ভব নতুন মত, নতুন পথ ধরে সত্যিকারের সুন্দর রাজধানী তথা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ। কালো টাকা, কালো মানুষ, কালো সময় নয়; ঢাকা দÿÿণ সিটি কর্পোরেশন তথা সারাদেশের সকল মানুষ আসুক স্বচ্ছতার সাথে, সুন্দরের সাথে; এটাই এখন প্রত্যাশা।
লায়ন ডা. রাশেদা বেগম, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সুন্দর ঢাকা গড়ি
৩/এ পুরানা পল্টন, ইস্টার্ণ ইডেন, ঢাকা ১০০০