মহান স্বাধীনতা দিবসঃ বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন আজ
সৌরভ চৌধুরী,এসবিডি নিউজ 24 ডট কমঃ বাঙালি জাতির আবেগ আর আনন্দের দিন আজ। আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা দিবস। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনতা পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা করে। বিশ্বের সব মানুষকে বীর বাঙালিদের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন ঘোষণার আহ্বান জানানোর মধ্যদিয়ে ঘোষিত হয় মুক্তি সংগ্রামের দৃপ্ত শপথ। বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে জাতি ৪২তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করছে। এ বছর মহান স্বাধীনতার ৪১ বছর পূর্তি হওয়ায় দিবসটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এ ছাড়া স্বাধীনতাবিরোধী ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর মাধ্যমে এবারের স্বাধীনতা দিবস জাতীয় জীবনে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বাঙালির স্বাধীনতা অন্যসব স্বাধীনতার মতো নয়। পৃথিবীর অনেক দেশ দীর্ঘ সময় যুদ্ধ করেও স্বাধীনতা পায়নি। ভারত উপমহাদেশে প্রত্যেকটি দেশ স্বাধীন হয়েছে ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে। একটি নির্দিষ্ট তারিখে ব্রিটেন আমেরিকাকে স্বাধীন করে দিয়েছিল। কিন্তু বাঙালি স্বাধীনতা অর্জন করেছে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে। তাই এ স্বধীনতা অন্যসব স্বধীনতা থেকে আলাদা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বড়ই গর্বের, বড়ই আনন্দের। আমাদের প্রাণপ্রিয় এই স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সেদিন যারা অবস্থান নিয়েছিল তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ ও বিচারের শপথ নেয়ার দিন আজ।
বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এ স্বাধীনতার ১৯৭১ সালে আকস্মিকভাবে সূচনা হয়নি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের কাছ থেকে স্বাধিকার অর্জনে যে সংগ্রাম পরিচালিত হয় সেখানেও নেতৃত্বে ছিল বাঙালিরা। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের প্রতি তাদের প্রভুসুলভ আচরণ ত্যাগ করতে পারেনি। সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও প্রায় সব ক্ষেত্রে বাঙালিদের প্রতি বঞ্চনা করে পাকিস্তানিরা। উন্নয়ন, চাকরি, শিক্ষাক্ষেত্রেও এই বঞ্চনা বাঙালিকে আরো বেশি ক্ষুব্ধ করে তোলে। পশ্চিম পাকিস্তানিদের শাসক হওয়ার মানসিকতা পাকিস্তানের দুটি অংশের মানুষের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে। তারা বাঙালিদের ওপর শোষণ, নিপীড়ন চালাতে থাকে। তবে রাজনৈতিকভাবে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় বেশি সচেতন ছিল। তাদের অধিকার সচেতনতা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তোলে। তারা এই ভূখ-ের জনগণের অধিকার দিতে চায়নি। ফলে এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের মধ্য দিয়েই বাঙালিকে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়েছে। মার্চ থেকে ডিসেম্বর মাত্র নয় মাসে বিশ্বের বুকে নতুন এক জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
সরকারি ছুটির দিন আজ। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে আরো বেগবান করতে দেশ-বিদেশে বসবাসরত সব নাগরিককে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গতকাল এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় দিন। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা। তিনি এ মহান দিনে জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থকসহ সকল স্তরের জনগণকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, তাদের অসামান্য অবদান ও সাহসী ভূমিকা দেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করে। তিনি বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মহান স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়া। সে লক্ষ্য অর্জনে সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর প্রতি স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নবিরোধী যে কোনো অপতৎপরতা নস্যাৎ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আজ এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতাকে অর্থপূর্ণ করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে হবে। দিনবদল এবং দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অসামপ্রদায়িকতা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, সপরিবারে জাতির পিতা হত্যার রায় কার্যকর করার পর সরকার যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী, সামপ্রদায়িক ও চিহ্নিত প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি গণতন্ত্র ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বানচাল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তিনি দেশবাসীকে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের উন্নয়নবিরোধী যে কোনো অপতৎপরতা নস্যাৎ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক বাণীতে বলেন, ২৬ মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনে এক গৌরবোজ্জ্বল সোনালি দিন। একটি শোষণ, বঞ্চনাহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এ দেশের মানুষ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় স্বাধীনতার ৪১ বছর পার হলেও আমরা সে লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হইনি। বারবার ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী শক্তি আমাদের সে লক্ষ্য পূরণ করতে দেয়নি।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এক বাণীতে দেশবাসীর প্রতি অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাণীতে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বলেন, ৩০ লাখ মানুষের জীবন এবং লাখো মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তার সুফল দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে পেঁৗছে দিতে হবে। আমাদের স্বাধীনতার এই বীরগাথা ইতিহাস যুগ যুগ ধরে দেশের আপামর জনগণকে দেশাত্মবোধে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার ৪১ বছর পরও আমরা অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারিনি। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। সেই মুক্তি অর্জনের জন্য দেশবাসীকে এখন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি পালনের জন্য নানা কর্মসূচি পালন করছে।