যশোরে বিএসএফের গুলিতে আহত ২, চুয়াডাঙ্গায় ৬ জনকে নির্যাতন
এসবিডি নিউজ ২৪ ডট কম,ডেক্সঃ বাংলাদেশ-ভারতের বিভিন্ন সীমান্তে আবারো উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে এক বাংলাদেশি যুবককে নগ্ন করে নির্যাতনের ঘটনায় দেশে-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় না থামতে সাতক্ষীরা ও যশোর সীমান্তে আবারো ধরে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি রাখাল গুরুতর আহত হয়েছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বেণীপুর সীমান্ত থেকে ৬ বাংলাদেশি কিশোরকে ধরে নিয়ে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায় বিএসএফ। এদের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হাবিবুর রহমান ওরফে হারান কৌশলে পালিয়ে এলেও বাকি কিশোররা এখনো বিএসএফের কাছে বন্দি রয়েছে। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএসএফের মহাপরিচালক ইউ কে বনশাল বলেছিলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত সীমান্তে অপরাধ বন্ধ না হচ্ছে ততদিন সীমান্তে গুলিবর্ষণ বন্ধ করা কখনোই সম্ভব নয়।’ বিএসএফ প্রধানের এই বক্তব্যের ২ দিন পরই যশোর ও সাতক্ষীরা সীমান্তে এই ঘটনা ঘটেছে। এদিকে সীমান্তে বিএসএফের হামলার ঘটনায় প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, কোনোভাবেই কোনো ধরনের হত্যাকান্ড গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যদিকে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আনোয়ার হোসেন বলেছেন, বিএসএফের এই ধরনের মন্তব্য অগ্রহণযোগ্য। দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বৈঠকে দেয়া প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ। এদিকে বিএসএফের প্রধানের বক্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলেছে, বন্ধুপ্রতিম দুটি দেশ যখন সীমান্তে গুলি চালানো বন্ধের চেষ্টায় লিপ্ত, ঠিক এই সময়ে বিএসএফ মহাপরিচালকের এমন উক্তি এ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে। আমাদের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, গতকাল ভোরে কাকডাঙ্গা সীমান্তে বাংলাদেশ ভূখন্ডে সোনাই নদী তীরে বসে থাকা অবস্থায় বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি রাখাল গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গুলিবিদ্ধরা হল কলারোয়ার কেড়াগাছি গ্রামের ইয়াকুব আলী ও কায়বা গ্রামের আবদুল হামিদ। এ ঘটনা নিয়ে সাতক্ষীরা সীমান্তজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। গুলিবর্ষণ ঘটনার পর উভয়পক্ষের ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিজিবি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিএসএফ এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এমনটি ঘটবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অপরদিকে চোরাচালানিদের হামলায় আহত এক বিএসএফ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে বলে পতাকা বৈঠকে বিএসএফ জানিয়েছে। বিজিবির ৩৮ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু বাসির জানান, কাকডাঙ্গার বিপরীতে বিএসএফের তারালি ক্যাম্প সদস্যরা পর পর ৪ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। তাদের গুলি সোনাই নদীর তীরে বাংলাদেশ ভূখন্ডে বসে থাকা রাখালদের দেহে বিদ্ধ হয়। তিনি জানান, তাৎক্ষণিকভাবে বিজিবির পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানানো হয়। পরে সকালে সীমান্তের কালিয়ানীতে বিজিবি ও বিএসএফের ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশ ভূখন্ডের মধ্যে গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। দেড় ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে বিএসএফ গুলিবর্ষণ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। ভবিষ্যতে এমনটি ঘটবে না বলে তারা প্রতিশ্রুতি দেয়। চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি কুসুমপুর ক্যাম্প বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) কমান্ডার রেজাউল করীমের বরাত দিয়ে জানান, জেলার জীবননগর উপজেলার কয়া গ্রামের সলেমান আলীর ছেলে খায়রুল ইসলাম (১৭), আশাদুল ইসলামের ছেলে সুমন (১৬), আবুল কালামের ছেলে লাল্টু (১৫), রমজান আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৬), মুছাবারির ছেলে হাবিবুর রহমান ওরফে হারান এবং ধান্যখোলা গ্রামের মলি্লক মন্ডলের ছেলে ইছাহক আলী মঙ্গলবার রাতে উপজেলার বেণীপুর সীমান্ত দিয়ে গরু আনার জন্য ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা তাদের সীমান্ত থেকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে। এদের মধ্যে হাবিবুর রহমান বুধবার সন্ধ্যায় কৌশলে পালিয়ে এলে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে অপহৃত ৫ জনকে ভারতের মোনাগঞ্জ ক্যাম্প বিএসএফ আটক করে কোর্টে চালান দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।