দফায় দফায় বাড়ছে বাসভাড়া; সমান্তরালে কমছে যাত্রীসেবার মান!
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ২৪ ডট কমঃ তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দফায় দফায় ভাড়া বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি যাত্রীসেবার মান। দূরপাল্লার বাসে চড়ে সুস্থ শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন এমন নজির খুবই কম। দুই-চার ঘণ্টা বাসে থাকলেই শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে এসব বাস চলছে। নগর পরিবহনেরও একই দশার চিত্র। এমনকি অনেক বাসের হেড লাইটও নেই।
সূত্র জানায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর দূরপাল্লার বাস ভাড়া বেড়েছে ১০০ থেকে দেড়শ টাকা। গত বছরে ঢাকা থেকে ঝালকাঠির ভাড়া ছিল ৩০০ টাকা। এখন নেয়া হচ্ছে চার থেকে সাড়ে চারশ টাকা। ঢাকা থেকে ঝালকাঠির দূরত্ব প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার। সরকার নির্ধারিত বাস ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৩৫ পয়সা হিসেবে সাড়ে তিনশ টাকা হওয়ার কথা ছিল। সর্বশেষ গত মাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও আরো বেশি আদায় করা হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা। সর্বশেষ ২ জানুয়ারি এই বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৪২ কিলোমিটার। সরকার নির্ধারিত ভাড়া হওয়ার কথা সোয়া তিনশ টাকা। কিন্তু ঢাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে চার থেকে সাড়ে চারশ টাকা।
এভাবে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বগুড়া, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-দিনাজপুর, ঢাকা-বরিশাল এবং ঢাকা-রংপুরসহ প্রতিটি রুটেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বিলাসবহুল বাসে এই ভাড়া আরো কয়েকগুণ বেশি। তবে ওইসব বাসের অনেকগুলোই মানসম্পন্ন হওয়ায় সে ক্ষেত্র যাত্রীদের অভিযোগ কম। বিলাসবহুল ছাড়া অধিকাংশ পরিবহনের ক্ষেত্রেই যাত্রীদের অভিযোগ দফায় দফায় ভাড়া বৃদ্ধি হলেও যাত্রীসেবার মান না বেড়ে আরো কমেছে। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা আবু বকর জানান, তিনি ফরিদপুর থেকে একটি বাসে ঢাকা আসছিলেন। দৌলতদিয়া ঘাটে প্রায় ২ ঘণ্টা বাসটি আটকে থাকে যানজটে। এ সময় যাত্রীরা বাসের ভেতরে গরমে ছটফট করছিল। বাসের চালক-সুপারভাইজারকে সবাই অনুরোধ করেন ফ্যানগুলো ছেড়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু ফ্যানগুলো ছিল অকেজো। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, যাত্রীদের নিয়ে শত শত মাইল যে বাস পাড়ি দিচ্ছে তার অধিকাংশই দূরপাল্লায় চলার উপযুক্ত নয়। গত রোববার পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে সকাল ৯টায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা হানিফ পরিবহনের বাসটি রাস্তায় তিনবার অকেজো হয়ে পড়ে বলে ওই বাসের যাত্রীরা জানিয়েছেন। সকাল ৯টায় ভা-ারিয়া থেকে ছেড়ে ওই বাসটি ঢাকায় পেঁৗছেছে রাত সাড়ে ৮ টায়। এর মধ্যে পথে পথে দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলার ভোগান্তি তো রয়েছেই। যাত্রীরা এর প্রতিবাদ করলে পরিবহন শ্রমিকদের কাছে নাজেহাল হতে হয়।
একাধিক পরিবহন মালিক দাবি করছেন তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তুলানায় কম নিচ্ছেন। দক্ষিণবঙ্গ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তানভির রানা বলেন, সরকার নির্ধারিত রেটে ঢাকা থেকে বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চলে যেতে তাদের ভাড়া হয় যাত্রীপ্রতি ৩৮৫ টাকা। কিন্তু তারা ৩০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন। তিনি দাবি করেন, যাত্রীসেবার মান ঠিক রেখেই তারা বাস চালাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিটি বাস কাউন্টারে বাস ভাড়া এবং গন্তব্যের দূরত্ব সংবলিত তালিকা থাকার কথা। কিন্তু কোনো পরিবহন কাউন্টারেই তা নেই। বিভিন্ন কাউন্টারে গিয়ে জানা গেছে, বিআরটিএ ওই তালিকা দেয়ার কথা বললেও এখনো তালিকা সরবরাহ করা হয়নি। ফলে তারা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন। এগুলো তদারকি করার কেউ নেই। বাস কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। একইসঙ্গে যাত্রীসেবার মানও নির্ধারণ করা হচ্ছে না। ফলে লক্কড়-ঝক্কড় পুরনো নষ্ট বাসগুলো রাস্তায় চলছে। আর প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ এর ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ভাড়া বাড়ালেও পরিবহন কোম্পানিগুলো যাত্রীসেবার মান ঠিক রাখতে পারছে কি না এমন প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি পরিবহন মালিকরা।