১১ ফেব্রুয়ারীঃ বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসনের ১৬৫তম জন্মদিন
শুভাশিস ব্যানার্জিঃ আমরা প্রাত্যহিক জীবনে এমন অনেক জিনিস ব্যবহার করি যার জনক স্বয়ং এডিসন। যার প্রতিভার পরিমাপ করা প্রায় দুঃসাধ্য। তার আবিস্কৃত প্রতিটি যন্ত্র আজ মানব জীবনের সাথে একাত্ম হয়ে আছে। এসব বাদ দিয়ে আমাদের জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারিনা। যখন-ই আমরা কোন ইলেকট্রিক লাইট জ্বালাই অর্থাৎ বাল্ব অথবা গ্রামো ফোনে রেকর্ড বাজিয়ে সুরের মূর্ছনায় মুগ্ধ হই,অথবা সিনেমা হলে ছবি দেখি এসবই মহা মনীষী এডিসনের হাতের ছোয়ায় তৈরি। তাই তাকে যান্ত্রিক সভ্যতার জনক বলা হয়। ১৮৪৭ সালে ১১ ফেব্রুয়ারী কানাডায় মিলান শহরে টমাস আলভা এডিসন জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম ছিল স্যামুয়েল অডেন এডিসন। ছেলেবেলার অস্ভব দূরন্ত ছিলেন এডিসন। এডিসনের যখন ৭ বছর তখন তার পরিবার আমেরিকার মিশিগানের অর্ন্তগত পোর্ট হারান শহরে বসবাস শুরু করে এবং এখানেই ১৮৫৫ সালে এডিসনকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। ছোটকাল থেকেই তিনি অসম্ভব মেধাবী ছিলেন। কিন্তু স্কুলের বাধা ধরা পাঠ্যসূচী পড়ালেখা তার কাছে ভাল লাগতো না। আর ক্লাসে বসতেন সবার পেছনে। শিক্ষকরা অভিযোগ করতেন লেখা পড়ায় তার মন নেই একদিন ক্লাসের পড়া না পড়ায় শিক্ষক বলেছিলেন এডিসন তোমার মগজ নেই। এডিসন রেগে গেলেন। ঐদিনের পর থেকে আর কোনদিন স্কুলে যাননি। বাড়ীতে মায়ের কাছেই লেখা
পড়া করতেন। মায়ের আশা ছিল এই ছেলে একদিন জগত বিখ্যাত হবেন। পরবর্তী জীবনে এডিসনের মায়ের কথাই সত্য হল। এডিসনের বয়স যখন ১২ বছর বয়স তখন রেলগাড়িতে পত্রিকা বিক্রি করতে লাগলেন। তা থেকে যত টাকা লাভ হয় তা দিয়ে তিনি নানা যন্ত্রপাতি কিনতে লাগলেন। রেলগাড়ির ফাকা কামরাতেই গবেষনা ওছাপার কাজ শুরু করলেন। পত্রিকার সকল কাজই এডিসন নিজে করতেন। পত্রিকার নাম ছিল উইকলি হেরাল্ড। আর বাড়ীর নিচতলায় গবেষনার কাজ করতেন। ১৮৮৭ সালে শব্দের গতিকে কিভাবে ছবির গতিতে আনা যায় তা নিয়ে গবেষনা করে ২ বছরের মধ্যে আবিস্কার করলেন কিনেটোগ্রাফ যা গতিশীল ছবি তোলার জন্য প্রথম ক্যামেরা। তখন বানিজ্যিকভাবে ছায়াছবি নির্মানেও সিনেমার যাবতীয় জিনিস আবিস্কার করেন। ১৯২২ সালে আবিস্কার করেন কিনেটোফোন যা সিনেমা ক্যামেরার সাথে সংযুক্ত করা হল এবং এর সাথে কাইনেটোস্কোপের কাজ করতে পারত । কাইনেটোস্কোপ যা এক্স-রশ্মি ব্যবহার করে এই যন্ত্র আজও চিকিৎসার কাজে লাগানো হয়। বাড়ীর গবেষনাগারে বসে ১৮৫৭-৫৮ সালে এডিসন টেলিগ্রাফ বানিয়ে ফেলেন। ১৮৬২ সালে একদিন রেলস্টেশনে দাড়িয়ে আছেন এমন সময় দেখলেন একটি ছেলে রেল লাইনের উপর খোলা করছে এবং পেছনের দিক থেকে গাড়ি আসছে। এমন সময় এডিসন লাফ দিয়ে ছেলেটিকে তুলে আনলেন। ছেলেটি ছিল স্টেশন মাস্টার ম্যাকেঞ্জির ছেলে। স্টেশন মাস্টার মুগ্ধ হয়ে এডিসনের খোজ খবর নিয়ে টেলিগ্রাফে ভর্তি করে দিলেন। অবশেষে টেলিগ্রাফের অপারেটর হিসেবে চাকুরী পেলেন। তার টেলিগ্রাফ নিয়ে গবেষনা চলতে থাকলো। টেলিফোন আবিস্কার করেছিলেন গ্রাহামবেল কিন্তু তার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে নানা সমস্যা ছিল। পরে এডিসন টেলিফোন ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করে তৈরি করলেন ট্রান্সমিটার। ফলে গ্রাহকের কথা স্পষ্ট শোনা গেল। ১৮৭৭ সালে ১৮ জুলাই এডিসন নিজের গলার স্বর রেকর্ড করলেন এবং উপস্থিত জনতার মাঝে বাজিয়ে শোনালেন। এডিসনের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লো চতুর্দিকে । ১৮৭৯ সালের ২১ অক্টোবর একটি কাচের বাল্বে সরু একটি কার্বন ফিলামেন্ট সংযুক্ত করে বিদ্যুৎ পাঠালেন এডিসন। জ্বলে ইঠলো বাল্বটি । এক নাগারে ৪০ ঘন্টা জ্বললো বাল্বটি। ফিলামেনটি কিছুই হল না। আবিস্কার করলেন বৈদ্যুতিক বাল্ব । যা আজ পৃথিবীর অন্ধকার ঘরগুলোকে আলোকিত করছে । আমেরিকার নৌবাহিনীর অন্যতম উপদেষ্টা ছিলেন এডিসন। কাজের জন্য তিনি গোটা চল্লিশেক আবিস্কার নৌবহিনীকে দিয়ে গেছেন। এডিসন ছিলেন খুবই পরিশ্রমী। তিনি টানা ৫/৬ রাত না ঘুমিয়ে গবেষনা করতেন এবং কাজের টেবিলে ঘুমিয়ে যেতেন। তিনি বলতেন প্রতিভায় আমি বিশ্বাস করি না,পরিশ্রমই হল প্রতিভার মুল কথা। তিনি দু হাজার ৯৩টি পেটেন্ট নিয়েছিলেন। ১৮৮২ সালে শুধু এক বছরেই ১৪১টি পেটেন্টের দরখাস্ত করেছিলেন। তার নোট বই ও ডায়রীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। এই মহান কর্মবীর মানুষটি মৃত্যু হয় ১৯৩১ সালের ১৮ অক্টোবর। তার মৃত্যুর পর নিউইর্য়ক পত্রিকায় লিখা হয় মানুষের ইতিহাসে এডিসনের মাথার দাম সবচেয়ে বেশী । কারন এমন সৃজনী শক্তি অন্য কোন মানুষের মধ্যে দেখা যায়নি। এডিসন আজ আমাদের মাঝে বেঁচে নেই । কিন্তু তার এবং গবেষনা গুনে আজও তিনি সারা পৃথিবীর মানুষের মাঝে চির অমর হয়ে আছেন।
লেখকঃ শুভাশিস ব্যানার্জি।
(সম্পাদক,এসবিডি নিউজ২৪ ডট কম।)