রাজধানীতে স্বস্ত্রীক খুন সাংবাদিক সাগর সরওয়ারঃ ঘটনার রহস্য উন্মোচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ!
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ২৪ ডট কমঃ মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি খুন হয়েছেন। ৫৮/এ/২ ইন্দিরা রোড পশ্চিম রাজাবাজারের শাহজালাল রশিদ লজের ভাড়া বাসায় (এ/৪ ফ্ল্যাট) শুক্রবার গভীর রাতে তারা খুন হন। প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপের নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা ওই সাংবাদিক দম্পতি খুন হওয়ার খবরে তাদের বাসায় উপস্থিত হয়েছেন সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসহ বিশিষ্টজনরা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি দুটি তরুণ প্রাণ এভাবে অকালে ঝরে গেল। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, যে করেই হোক এমন ঘটনা বন্ধ করুন।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সমাজে যারা বিশৃংখল সৃষ্টি করতে চায়, বিঘ্ন করতে চায় স্বাভাবিক সামাজিক জীবন, তাদের দ্বারাই এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘এমন দুটি প্রাণ হারিয়ে যেতে পারে, তাদেরকে হত্যা করা হতে পারে- একথা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দু’জন প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিকের মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক ও বিয়োগান্তক। আমরা গোটা পুলিশ পরিবার এ ঘটনায় গভীর শোকাহত। পুলিশের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবার-পরিজনসহ সকলের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।’ ঘটনাটি হত্যা নাকি ডাকাতি- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অল্প সময় আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এই মুহূর্তে কোন মন্তব্য করা যাচ্ছে না।’ তবে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যত দ্রুত সম্ভব জড়িতদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এপিএস (মিডিয়া) মাহবুবুল আলম শাকিল সাংবাদিকদের বলেন, ‘নৃশংস ও মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল। এই সাংবাদিক দম্পতি মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে নিজেদের এবং জাতিকে এগিয়ে নিয়েছে। তাদের মৃত্যতে গোটা জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালে মেহেরুর রুনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে বিরোধী দলের সংবাদ কাভার করতেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী তাকে খুব স্নেহ করতেন। এ ঘটনায় তিনি মর্মাহত। প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া ঘটনার সাথে যারাই জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানান, সকাল থেকে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধতন ঘটনাস্থল পরিদশর্ন করেছেন।
সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন শেরেবাংলানগর থানার উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, ‘ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন এই সাংবাদিক দম্পতি।’ হাত-পা বেঁধে তাদের খুন করা হয়েছে। সারা শরীরে এলোপাতারি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শোবার ঘরের মেঝেতে তাদের রক্তাক্ত মৃতদেহ পাওয়া গেছে। পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, রক্ত শুকিয়ে যাওয়াতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে না ঘটনাটি ঠিক কখন ঘটেছে। এদিকে ভবনের নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পালকে পুলিশ আটক করেছে। সাগর সরওয়ার অফিসের কাজ শেষে রাত দুটায় বাসায় ফেরেন বলে জানিয়েছে ওই ভবনের নিরাপত্তকর্মী। তেজগাঁও জোনের উপকমিশনার (ডিসি) ইমাম আলী বলেন, ‘ঘটনা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। শোবার ঘরের গ্রিল কিছুটা ফাঁকা রয়েছে। ওই ফাঁক দিয়ে একজন মানুষের অনায়াসে প্রবেশ করা সম্ভব।’ তিনি জানান, সিআইডিকে খবর দেয়া হয়েছে।
উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সাংবাদিক দম্পতির সাত বছর বয়সী একমাত্র ছেলে মাহির সারোয়ার মেঘ অক্ষত রয়েছে।’ তাদের কর্মস্থল টিভি চ্যানেল ও অন্যান্য চ্যানেল থেকে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করা হচ্ছে। দুই জন লোক এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে ওই দম্পতির একমাত্র সন্তান মেঘ। তাদের ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র তছনছ করা হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে ডাকাতির ঘটনা। তবে খুনিরা ডাকাতির উদ্দেশে তাদের খুন করেছে নাকি খুন করে ডাকাতির ঘটনা সাজাতে আসবাব তছনছ করেছে তা এই মুহূর্তে বলতে পারছে না পুলিশ।