পরিবহন সেক্টরের ৯৩২টি সংগঠনের মধ্যে ৬৮৬টি-ই অবৈধ
বাদল রহমান,এসবিডি নিউজ২৪ ডট কমঃ দেশের সড়ক পরিবহন সেক্টরে মালিক ও শ্রমিকদের মোট ৯৩২টি সংগঠন রয়েছে। এর মধ্যে ৬৮৬টি সংগঠনই অবৈধ। এসব সংগঠনের কারণে এ খাতে অবৈধ চাঁদাবাজি বাড়ছে। এসব সংগঠন নিষিদ্ধ করলে পরিবহন খাতে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ হবে বলে মনে করছে সংসদীয় কমিটি ও মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। এদিকে মালিক সংগঠনগুলো বলছে, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও শ্রম অধিদপ্তর- এ দুই জায়গা থেকে মালিক সংগঠনগুলো নিবন্ধন করায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এছাড়া পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো এশটি যৌথ প্রস্তাবনা দিয়েছে সংসদীয় কমিটির কাছে। রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধে সুপারিশমালা তৈরি করতে শ্রম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৪ নাম্বার উপ-কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও উপ-কমিটির আহ্বায়ক মো. ইসরাফিল আলম বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। কমিটির সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর ইসরাফিল আলম বলেন, পরিবহন খাতে যে অবৈধ চাঁদাবাজি চলছে তার জন্য এসব অবৈধ সংগঠনগুলোও দায়ী। কমিটির বৈঠকে মালিক-শ্রমিক উভয় সংগঠনই এসব সংগঠন বন্ধ করতে একমত হয়েছে। সংসদীয় উপ-কমিটিও তাদের সঙ্গে একমত। ইসরাফিল আরো বলেন, দেশের সব সেক্টরের মালিক সংগঠনগুলো জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নিবন্ধন নেয়। পরিবহন খাতে এসব মালিক সংগঠনগুলোকে শ্রম অধিদপ্তর এবং জয়েন্ট স্টক কোম্পানি দুই জায়গা থেকেই নিবন্ধন নিতে হয়। এতে করে সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে মালিক সংগঠনগুলো জানিয়েছে। তিনি বলেন, মালিক সংগঠনগুলো চায় শুধু জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে নিবন্ধন নিতে। কমিটিও তাদের সঙ্গে একমত হয়েছে। এ বিষয়ে কিছু বিধি সংশোধনের প্রয়োজন হবে। কমিটির সে ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবে। এদিকে, যৌথ প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সড়ক পরিবহন সংগঠন ও বাস-ট্রাক টার্মিনাল বা ছোট গাড়ির স্ট্যান্ডগুলোতে অবৈধ চাঁদা আদায় ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারই হচ্ছে সব গোলযোগের উৎস। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সব মালিক ও শ্রমিক সংগঠন পরিচালনা ব্যয় বাবদ নির্ধারিত চাঁদা আদায় করার কথা। অথচ বহিরাগত ও স্বার্থান্বেষী মহলের হস্তক্ষেপে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুযোগমতো অতিরিক্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। প্রস্তাবনার শুরুতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অপপ্রয়াসের ফলে কায়েমি স্বার্থান্বেষীরা পরিবহন খাতে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর ওপর অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে চাঁদাবাজি শুরু করেছে। অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধে ওই প্রস্তাবনায় ১৭টি সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, বিধি-বহির্ভূত চাঁদা আদায় বন্ধে সরকারি সিদ্ধান্তের পাশাপাশি মালিক, শ্রমিক, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও পুলিশ বিভাগের আন্তরিকতা প্রয়োজন। আরো বলা হয়েছে, এক জেলার একাধিক স্থানে কোনোভাবেই চাঁদা আদায় করা যাবে না। এক জেলায় একাধিক সংগঠন থাকলে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো আলোচনা করে একটি স্থান নির্ধারণ করবে। আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ও ফেরিঘাটের চাঁদাবাজি বন্ধে ইজারা পদ্ধতি বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে যৌথ প্রস্তাবনায়। বলা হয়েছে, যাত্রী হয়রানি বন্ধে প্রচলিত ইজারাদারি বাতিল করে শ্রমিক সংগঠনের মাধ্যমে নির্ধারিত টোল আদায়কারী নিয়োগ করা যেতে পারে। যৌথ প্রস্তাবনার সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে একটি একটি উপ-কমিটি গঠনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিটির সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি, বাংলাদেশ ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে বাংলাদেশ ট্রাংক-লরি শ্রমিক ফেড়ারেশন, বিপ্লবী শ্রমিক পরিবহৎন শ্রমিক ফেডারেশন, সংযুক্ত ট্রাক বন্দোবস্তকারী পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, ট্যাক্সিক্যাব-মাইক্রোবাস চালক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠক করেছে সরকার।