পানি উন্নয়ন বোর্ডকে শুধু জনগণের জন্য কাজ করলে হবে নাঃ ড. খুরশীদ আলম
জলবায়ু অভিযোজন সংক্রান্ত অবকাঠামোগত বিষয়ক উন্নয়ন উদ্যোগগুলোকে কার্যকর এবং ব্যয়সাশ্রয়ী করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে জন-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বোর্ডের প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবি জানিয়েছে অধিকার ভিত্তিক কয়েকটি নাগরিক সংগঠন। আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত ‘‘অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জন-অংশগ্রহণ: প্রেক্ষিত জলবায়ু পরিবর্তন পরিকল্পনা -২০০৯’’ শীর্ষক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন। ইক্যুইটি এন্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ (ইক্যুইটিবিডি) এবং ক্যাম্পেইন ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুড (সিএসআরএল) যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। ইক্যুইটিবিডি’র প্রধান সঞ্চালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সাবেক বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, সংসদ সদস্য এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সমপর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সোহরাব আলী সানা, সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য একে এম এম ফজলুল হক, অক্সফাম বাংলাদেশ’র নীতি ও অধিপরামর্শ সমন্বয়কারী মনীষা বিশ্বাস, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল’র জাকির হোসেন এবং সিডিপি’র জাহাঙ্গীর হোসেন মাসুম। এতে জলবায়ু পরিবর্তন ও অবকাঠামো বিষয়ে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পানি উন্নয়ন বোডের্র সাবেক বিশেষজ্ঞ ড. খুরশীদ আলম, ইক্যুইটিবিডি’র সৈয়দ আমিনুল হক ও হিউম্যানিটি ওয়াচ’র হাসান মেহেদী।
ড. খুরশীদ আলম তার উপস্থাপনায় প্রযুক্তির সঙ্গে সামাজিক সম্পৃক্তার বিষয়টিকে সমন্বিত করার দাবি জানান। তাঁর মতে, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে শুধু জনগণের জন্য কাজ করলে হবে না, জনগণকে নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাধ তৈরির ক্ষেত্রে ’টপ ডাউন এপ্রোচ বা ‘সবার জন্য একই মাপ’ তত্ত্বের বাইরে আসতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বর্তমান কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে পানি ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আলাদা কর্তৃপক্ষ বা পৃথক বোর্ড তৈরি করা প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। ব্যয় কমানোর জন্য তিনি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে বাধ নির্মাণ ও খাল খনন করার জন্য পরামর্শ দেন।
সাবেক মন্ত্রী খ ম জাহাঙ্গীর হোসেন তিনটি সুনির্দিষ্ট উদ্যোগের পরামর্শ দেন, বাধ নির্মাণ করার ক্ষেত্রে ভূমির ক্ষতি কমানোর উদ্যোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডে বিভিন্ন প্রকল্পের আর্থিক প্রাক্কলন পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। তিনি আরও বলেন যে বাঁধ নির্মানের ক্ষেত্রে লাভ-ক্ষদিৎত বিবেচনা না করে বরং জনগনকে রক্ষার প্রয়োজনেই করতে হবে।
সংসদ সদস্য একে এম এম ফজলুল হক এবং সোহরাব আলী সানাও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সকল পর্যায়ে শীর্ষ আমলাতন্ত্রের বাইরেও জন অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি দেশের যে কোন উন্নয়ন পরিকল্পনায় জন-অংশগ্রহন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারি ক্রয় নীতিমালায় পরিবর্তনের সুপারিশ করেন টিআইবি’র সমন্বয়কারী জাকির হোসেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ক্লাইমেট ট্রাস্ট ফান্ড এবং ক্লাইমেট রেসিয়য়েন্স ফান্ড থেকে ইতিমধ্যে অবকাঠামো বিষয়ক যেসব প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে সেগুলোর পরিবেশগত প্রভাব যাচাই করে দেখা হয়নি। এর মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড পেয়েছে মোট বরাদ্দের প্রায় ৩৩% বা প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।
অক্সফাম বাংলাদেশ’র মনীষা বিশ্বাস সকল অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারী ও শিশুদের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করার আহবান জানান। ভোলা থেকে আগত নেয়ামত উল্লাহ বলেন, বাধপার্শ্ববর্তী এলাকায় বসতি স্থাপনকারীদেরকে বাধ রক্ষণাবেক্ষণের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন, এবং তাদেরকে সংশ্লিষ্ট জমি থেকে আয় নিশ্চিত করার উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে, তাদের অধিকারের বিষয়েও সংশ্লিষ্টদেরকে সংবেদনশীল থাকতে হবে। হাসান মেহেদী এবং জাহাঙ্গীর আলম মাসুম নদী ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার ক্ষেত্রে জোয়ার আধার ব্যবস্থাপনা অনুসরণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।