১২৯ জন বিদেশি পাচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য সম্মাননা
সৌরভ চৌধুরী, এসবিডি নিউজ 24 ডট কমঃ মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আগামী মাসে ১২৯ জন বিদেশি নাগরিককে সম্মাননা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ২৭ মার্চ এ সম্মাননা অনুষ্ঠান ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন।
এর আগে গত বছর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে এ সম্মাননা দেয়া হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বহু বিদেশি নাগরিক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে অর্থ, আশ্রয় ও মানসিকভাবে সহায়তা করেছিলেন। এসব অবদানের কথা বিবেচনা করে স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত বছর বিদেশি নাগরিকদের সম্মাননা দেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। এ উপলক্ষে একটি জাতীয় কমিটি গঠিত হয়।
প্রথমে প্রায় সাড়ে পাঁচশ বিদেশি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা তৈরি করা হয়। এরপর দীর্ঘ যাচাই-বাছাই ও তথ্য সংগ্রহের পর এবার ১২৯ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ভারতের ৩৬ জন নাগরিক ও ৩টি প্রতিষ্ঠান এবং ভারতের জনগণ ও ভারত সরকার এ পুরস্কার পাচ্ছেন। এ ছাড়া রাশিয়ার ৯ জন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৮ জন, যুক্তরাজ্যের ১০ জন ও ২টি প্রতিষ্ঠান, জার্মানির ৪ জন, পাকিস্তানের ৬ জন, জাপানের ৪ জন, নেপালের ২ জন এবং ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, আয়ারল্যান্ড, যুগোশ্লাভিয়া, ইতালি, কিউবা, আর্জেন্টিনা, ভেনিজুয়েলা, সুইজারল্যান্ড, ভুটান, সুইডেন, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, হল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, পোল্যান্ড ও ভিয়েতনামের ১ জন করে নাগরিক এ সম্মাননা পাচ্ছেন। সম্মাননাপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন ভারতীয় শচীন্দ্র লাল সিংহ, রাজ্যেশ্বর রাও, সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়, পি এ সাংমা, বিচারপতি সা’দাত আবুল মাসুদ, মহারানি বিভা কুমারী দেবী, প্রফেসর দিলীপ চক্রবর্তী, সমর সেন, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, পন্ডিত রবিশঙ্কর, ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব মাদার তেরেসা, অভিনেত্রী ওয়াহিদা রেহমান, অভিনেতা সুনীল দত্ত, অভিনেত্রী নার্গিস দত্ত, কবি ও গীতিকার কাইফি আজমি, কণ্ঠশিল্পী ভূপেন হাজারিকা, অ্যাডভোকেট সুব্রত রায় চৌধুরী, ফিল্ড মার্শাল এস এ এম মানেকশ, লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, লে. জেনারেল জ্যাকব, ল্যান্স নায়েক আলবার্ট এক্কা পরম বীর চক্র, নারায়ণ দেশাই, মানিক সরকার, আই পি গুপ্ত, জিবি হাসপাতাল ও সার্জন সুপারিনটেন্ডেন্ট ডা. রথীন দত্ত, রওশন আরা বেগম সাংমা, দশরথ দেব বর্মণ, ডিপি ধর, কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকর, জেনারেল উবান, গোলক মজুমদার, পি এন হাকসার, ড. করণ সিং, সরদার শরণ সিং, শরৎ চন্দ্র সিংহ, ভারতীয় জনগণ, মিত্র বাহিনী, রেডিও আকাশবাণী, বিশ্বশান্তি পরিষদ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহায়ক সমিতি; রাশিয়ার নিকোলি ভিক্টোরেভিচ পদগোর্নি, অাঁদ্রে গ্রোমিকো, ইয়াকোভ আলেকজান্দ্রোভিচ মালিক, আলেক্সি নিকোলভিচ কোসিগিন, প্রফেসর ভস্নাদিমির স্ট্যানিস, লিওনিদ ব্রেজনেভ, নিকোলাই ফিরাইবিন, আনাতলি ডবরিনিন, অ্যাডমিরাল জুয়েনকো ও তার দল, সিপিএসইউর ১৭ সদস্যবিশিষ্ট পলিটব্যুরো; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর এডওয়ার্ড মুর কেনেডি, রিচার্ড টেইলর, অ্যানা টেইলর, অ্যানা ব্রাউন টেইলর, আর্চার কে বস্নাড, লিয়ার লেভিন, ফাদার উইলিয়াম বি টিম, সিনেটর ফ্রেড রয় হ্যারিস, সিনেটর চার্লস পার্সি, ডা. জোসেফ গার্স্ট, ড্যান কগিন, উইলিয়াম গ্রিনো, এডওয়ার্ড সি মেসন, প্রফেসর এডওয়ার্ড সি ডমিক জুনিয়র, ডেভিড ওয়াইজব্রড, কবি অ্যালেন গিনসবার্গ, সিডনি সেনবার্গ, শহীদ ফাদার ইভান্স, প্রফেসর জে কেনেথ গলব্রেথ; যুক্তরাজ্যের স্যার এডওয়ার্ড রিচার্ড জর্জ হিথ, লর্ড হ্যারল্ড উইলসন, লর্ড পিটার ডেভিড শোর, মাইকেল বার্নস, সাংবাদিক সায়মন ড্রিং, গায়ক জর্জ হ্যারিসন, ব্রুস ডগলাস মান, জুলিয়ান ফ্রান্সিস, পল কনেট, এলেন কনেট, বিমান মলি্লক, সাংবাদিক মার্ক টালি, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি, এনজিও অক্সফাম; ফরাসি অাঁদ্রে মারলো, জার্মানির উইলি ব্র্যান্ট, বারবারা দাশগুপ্ত, সুনীল দাশগুপ্ত, এরিক হোয়েনকার, অস্ট্রেলিয়ান উইলিয়াম এ এস ওডারল্যান্ড, বিপি, অস্ট্রিয়ান ব্রুনো ক্রেইস্কি, কানাডিয়ান পিয়ের ট্রুডো, আইরিশ শন ম্যাকব্রাইড, ব্যারিস্টার নোরা শরীফ, যুগোশ্লাভিয়ান মার্শাল জোসিপ ব্রজ টিটো, ইতালিয়ান ফাদার মারিও রিগন, জাপানিজ তাকাশি হায়াকাওয়া, প্রফেসর নারা, তাকামাসা সুজুকি, নাওয়াকি উসুই, নেপালের ড. রাম বরণ যাদব, বি পি কৈরালা, পাকিস্তানের আহমদ সলিম, কাজী ফয়েজ মোহাম্মদ, নাসিমা আখতার, খান আব্দুল গাফফার খান, খান আব্দুল ওয়ালি খান, এয়ার মার্শাল আসগর খান, কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ট্রো, আর্জেন্টিনার ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো, জর্জ লুইস বোর্গেস, ভেনিজুয়েলার কার্ডিনাল হোসে উমবার্তো কুইনতেরো, সুইজারল্যান্ডের জিন জিজলার, ভুটানের লিউনপো উজিয়েন শেরিং, সুইডেনের ওলফ পামে, ডেনিশ ড. কার্সটিন ওয়াস্টার গাস্ট, মালয়েশিয়ার ড. এ সুরিয়ান, শ্রীলঙ্কার স্যার সেনারত্ন গুনবর্ধন, হল্যান্ডের কিনটেন ওয়াটে বাগ, দক্ষিণ কোরিয়ার হং সুক জা, পোল্যান্ডের আগস্ট জালেস্কি, ভিয়েতনামের ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব সাউথ ভিয়েতনামের সদস্য মাদাম বিন, জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআর ও আইসিআরসি।
এ সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত কঠিন। প্রায় ৪০ বছর পরে অনেকেই বেঁচে নেই। যারা বেঁচে আছেন তাদের খুঁজে বের করার আন্তরিক চেষ্টা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনগুলো এবং দেশে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলোর সহায়তা নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে গঠিত জাতীয় কমিটির সদস্যরা নিজে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
তিনি সম্মাননা দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, যারা বেঁচে আছেন তাদের বাংলাদেশে এ সম্মাননা জানানো হবে। যারা আসতে পারবেন না তাদের পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে সেই দেশে গিয়ে সেখানকার দূতাবাসের মাধ্যমে ওই ব্যক্তি বা পরিবারের কাছে পুরস্কার পৌঁছে দেয়া হবে।