চির সজীবতার প্রতীক কবি জীবনানন্দ দাসের ১১৩তম জন্মদিন

চির সজীবতার প্রতীক কবি জীবনানন্দ দাসের ১১৩তম জন্মদিন


একজন কবি । রহস্যাবৃত জীবনের আরাধনা করেছেন সারাজীবন । আত্মমগ্নতার ভেতরে একেঁছেন জীবন, জগত, প্রেম ভালবাসা । পৃথিবীর এই বৃত্তের ভেতরে যেদেনি পা রেখেছিলেন, সেদিন কে জানতো তাঁকে বিনম্রচিত্তে স্মরণ করা হবে ? কে জানতো তাঁর কবিতায় মানুষ আদ্যপান্ত ডুবে যাবে ? বাংলা কবিতায় প্রাচুর্য আর বৈচিত্রের মহা সমাবেশ ঘটাবেন ? মূল্যবান বহুবর্ণ সজ্জায় জীবনকে সাজিয়ে তুলবেন ? মৃত্তিকার দিকে মাথা ঝুকিয়ে বনজর্জরিত সমস্ত মানুষের বুকে ভালবাসা অন্কুরুদ্গম ঘটাবেন ? আর আমরা স্ববিস্ময়ে তাকিয়ে থাকবো আকাশের পানে ?


জীবনানন্দের কবিতার খেলা, শব্দের, অর্থের, দৃশ্যের, ইঙ্গিতের এবং হাজার হাজার বছরের, উপলব্ধির, বোধের, গভীরতার । কিন্তু, তিনি অন্ধকারেই খেলতে ভালবাসতেন । কুয়াশাচ্ছন্ন থাকতে ভালবাসতেন । আমি যখন জীবনানন্দের কোন কবিতায় ডুব দেই মনে হয় এক আলো-ছায়ার ভুতুড়ে ভূখণ্ডের ভেতর দিয়ে আমি যেন অন্য একজগতের দিকে চলে যাচ্ছি । অস্পষ্ট ছায়ার মতো কে যেন দূরথেকে ইশারায় আমাকে ডেকে নিয়ে চলেছে। অজানা গন্তব্যে।


জীবনানন্দকে আমি দেখেছি সম্পুর্ণ নিজস্বতায়। সময়ের গণ্ডি দিয়ে তাকেঁ বাধা যায়নি। আজ জীবনানন্দ দাসের ১১১তম জন্মদিন । কিন্তু, প্রকৃতভাবে জীবনানন্দ জন্মগ্রহন করেছিলেন মৃত্যর পরে । কবিতার মাঝে, গভীরতার মাঝে। মরু সমুদ্রের মতো। বাইরে নিরস ভিতরে অতল, তুষার-ধূসর, কুয়াশাচ্ছন্ন কখনও। আজও যার সকল রহস্য উদ্ধার করা যায়নি। তাই জবিনানন্দ আত্মমগ্ন কবি । রহস্যের কবি ।


সংক্ষিপ্ত জীবনী: জীবনানন্দ দাশ ৬ই ফাল্গুন, ১৩০৫ মতান্তরে ৫ ফাল্গুন জন্ম গ্রহন করেন বরিশালে । তাঁর পিতা সত্যানন্দ দাশ, মাতা কুসুমকুমারী দাশ। তিনি ছিলেন পরিবারের বড় ছেলে, তার ছোট ভাই অশোকানন্দ এবং বোন সুচরিতা। তিনি শিক্ষালাভ করেন প্রথমে বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলে ও ব্রজমোহন কলেজে, পরে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে ১৯২১ সালে এম. এ. ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৩০ সালে শ্রীমতী লাবন্যদাসকে বিবাহ করেন। তাঁদের দুটি সন্তান, শ্রীমতী মঞ্জুশ্রী এবং ্র শ্রী সমরানন্দ।


১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন ।ট্রামের ক্যাচারে আটকে তার শরীর দলিত হয়ে গিয়েছিল। ভেঙ্গে গিয়েছিল পাঁজরের হাড় ।চিৎকার শুনে ছুটে এসে নিকটস্থ চায়ের দোকানের মালিক সহ অন্যান্যরা তাঁকে উদ্ধার করে।তাকে ভর্তি করা হয় শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। ২২শে অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে রাত্রি ১১ টা ৩৫ মিনিটে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ধারণা করা হয় আত্মহত্যাস্পৃহা ছিল দুর্ঘটনার মূল কারণ।


আজ তাঁর ১১৩তম জন্মদিনে বাঙালী জাতির পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা। তুমি নাই তোমার কবিতা আছে । আমরা কবিতার ভর করে তোমার আত্মার কাছে চলে যেতে পারি । এটা কার সফলতা ?? নিশ্চয় তোমার ! কারণ, তুমি কবিতাকে এমন ভাবে চিত্রায়ণ করেছো যার কাধে করে আমরা অনেকদূর যেতে পারি । সীমানার কাছাকাছি । নীল নীলিমার কাছাকাছি ।

লেখকঃ শুভাশিস ব্যানার্জি
সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।

প্রধান সম্পাদক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।