সাংবাদিক দম্পতি খুনঃ ৮ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ।। প্রকৃত খুনিদের আড়াল করলে ফলাফল ভয়াবহঃ সাংবাদিক নেতাদের হুশিয়ারী

সাংবাদিক দম্পতি খুনঃ ৮ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ।। প্রকৃত খুনিদের আড়াল করলে ফলাফল ভয়াবহঃ সাংবাদিক নেতাদের হুশিয়ারী

প্রধান প্রতিবেদক, এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার-মেহেরুন রুনি খুনের ৮ম দিন অতিবাহিত হচ্ছে শনিবার। হত্যাকান্ডের দিন সন্ধ্যা রাতে যে দুজন রুনির সঙ্গে রাজাবাজারের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন শুক্রবার ৭ম দিন পর্যন্ত ওই দুজনকেও প্রকাশ্যে আনতে সক্ষম হয়নি পুলিশ। এতেই স্পষ্ট হচ্ছে হত্যা মামলার তদন্ত এখন ইউ টার্নে!
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা শুক্রবারও বলেছেন, তারা এখনো এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করতে পারেননি। আর ডিবি পুলিশ এই হত্যাকান্ডের আনুষ্ঠানিক তদন্ত হাতে নিয়েই খুঁজে পেয়েছেন এক জোড়া স্যান্ডেল। এছাড়া ঘটনাস্থলের অনেক আলামত পুলিশের সামনেই নষ্ট হয় বলে জানা গেছে।

এদিকে নিহত সাগরের মা বলেছেন, জজ মিয়া নাটক শুনতে চান না তিনি।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মেহেদী হাসান ১৭ ফেব্রুয়ারী ডিবির মিডিয়া সেন্টারে অপর এক হত্যাকান্ড সম্পর্কে ব্রিফিংকালে বলেন, সাংবাদিক দম্পতি হত্যা মামলার তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে মামলার ডকেট শেরেবাংলা নগর থানা থেকে ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়। ২৪ ঘণ্টা আগে স্থানান্তর হওয়া মামলায় নতুন কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করা হয়নি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তে র‌্যাব কিংবা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ সত্য নয়। তিনি সবাইকে অপেক্ষা করতে বলেন। র‌্যাব ফোর্সেস সদর দফতরের পরিচালক আইন ও গণমাধ্যম কমান্ডার সোহায়েল জানান, র‌্যাবের সঙ্গে কোনো সংস্থার সমন্বয়হীনতার তথ্য সঠিক নয়। র‌্যাব গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, খুব সাবধানতার সঙ্গে তদন্ত কাজ চালাতে হচ্ছে।

একাধিক সূত্র জানায়, ঘটনার আগের সন্ধ্যায় মেহেরুন রুনি রাজাবাজারের ফ্ল্যাটে যাওয়ার সময় সঙ্গে করে যে দুজনকে নিয়ে যান তারা গণমাধ্যম কর্মী বলে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। বিভিন্ন কারণে ওই দুজনকে আপাতত আড়ালে রাখা হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়।

অপর একটি সূত্র বলছে, ডিবি পুলিশ মূল ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা একটি মহলকে সুবিধা দিতে এই অপচেষ্টায় লিপ্ত।

এদিকে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ বলেন, পুলিশ প্রকৃত খুনিদের আড়ালের চেষ্টা করছে। এটা সবাই বুঝতে পারছে। পুলিশের এ অপচেষ্টার প্রতিবাদ এবং প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার দাবিতে অভিন্ন সাংবাদিক সমাজ এক জরুরি বৈঠকে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, সাংবাদিক দম্পতি হত্যা মামলার প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ গড়িমসি করছে। অবিলম্বে খুনিদের গ্রেফতারে ব্যর্থ হলে সাংবাদিক সমাজ কঠোর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবে। বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আখতারুজ্জামান লাবলু বলেন, প্রকৃত খুনিদের আড়াল করলে শুধু সাংবাদিক সমাজ নয়, দেশের মানুষও তা মেনে নেবে না।

সূত্র জানায়, চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্তে গোয়েন্দারা এক জোড়া পুরান চামড়ার স্যান্ডেল খুঁজে পেয়েছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে_ চোর এই স্যান্ডেল জোড়া ঘটনাস্থলের পাশের ভবনের স্যুয়ারেজ পাইপের গোড়ায় ফেলে গিয়েছিল।

এছাড়া সাংবাদিক দম্পতির একমাত্র সন্তান এখন বলছে, দুজন আংকেল নয়, সে দেখেছে দুজন চোর। নিহত সাগরের মা বলেছেন, এই জোড়া খুনের তদন্তে কোনো জজ মিয়া নাটক দেখতে তিনি প্রস্তুত নন। তিনি আরো জানান, ঘটনার পরদিন তিনি পুত্র ও পুত্রবধূ হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা রুজুর জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলেও পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে বলেছেন, এ ব্যাপারে একজন মামলা করলেই হবে। এক্ষেত্রে রুনির ভাই রোমান একটি মামলা রুজুর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি চুপ ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অসংখ্য মানুষের হাতের স্পর্শ লাগায় ঘটনাস্থলের অনেক আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। শুধুমাত্র সাগরের দুহাত বাঁধার কাপড় এবং রক্তমাখা বঁটি ছাড়া আর কোনো নমুনাতেই ঘাতকদের হাত কিংবা আঙুলের ছাপ নেই।

এদিকে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ভিসেরা প্রসেসের জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা রাখেননি বলে জানা গেছে। ওই চিকিৎসক ফরেনসিকের নন, মেডিসিনের। ফলে তার পক্ষে যথেষ্ট মতামত দেয়ার যুক্তি সম্পর্কেও প্রশ্ন উঠেছে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতের কোনো এক সময় রাজাবাজারের ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একদিন পর পুলিশের আইজিপি বলেছেন, তদন্তে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এরপর পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তদন্তের স্বার্থে কোনো কিছু বলা যাবে না বলে কালক্ষেপণ করতে করতে আজ শনিবার ৮ম দিন অতিবাহিত হচ্ছে।

বিভাগীয় প্রধান

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।